এই হামলার ঘটনা প্রকাশ করার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করে যে তাদের আক্রমণে বহু সংখ্যক জইশ-ই-মোহাম্মদ সদস্য নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে এমন দাবি পাকিস্তান একেবারেই প্রত্যাখান করে দিয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন করাচীর সাংবাদিক মনির আহমেদ।
দিল্লিতে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষ জানিয়েছেন যে দেশটির বিদেশ সচিব বিজয় গোখলে পাকিস্তানের সীমানার ভেতরে হামলা চালানোর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বালাকোটের ওই শিবিরটিই ছিল জইশ-ই-মোহাম্মদের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ শিবির।
“আজকের হামলায় বড় সংখ্যক জইশ-ই-মোহাম্মদ সন্ত্রাসবাদী, প্রশিক্ষক, সিনিয়র কমান্ডার আর আত্মঘাতী হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন জিহাদিদের খতম করা হয়েছে,” বলেন মি. গোখলে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এই শিবিরটি পরিচালনা করতেন জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহারের আত্মীয় মাওলানা ইউসুফ আজহার ওরফে উস্তাদ ঘউরি।
ভারতের বিদেশ সচিব বলেন, পুলওয়ামার হামলার আগেও আরও দুবার জইশ-ই-মোহাম্মদ ভারতে হামলা চালিয়েছে – একবার ভারতের সংসদ ভবনে, আরেকবার পাঠানকোটের সেনা ছাউনিতে।
“পাকিস্তানকে বারবার জইশ-ই-মোহাম্মদের শিবিরগুলির অবস্থান জানানো হয়েছে, কিন্তু তারা কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি,” এমন অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমাদের কাছে নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য এসেছিল যে তারা আবারও হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, আত্মঘাতী হামলাও হতে পারে বলে খবর ছিল।”
ওই সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতেই আগেভাগে বোমাবর্ষণ করে জঙ্গি শিবির ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেন মি. গোখলে।
এদিকে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী অবশ্য স্বীকার করেছে যে মুজফ্ফরাবাদ সেক্টর দিয়ে ভারতীয় বিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর জানিয়েছেন, তাদের বিমানবাহিনী সঙ্গে সঙ্গেই তাড়া করে ভারতীয় বিমানগুলিকে।
ভারতীয় বিমান থেকে যে বোমা ফেলা হয়েছিল, তা বালাকোটের কাছে পড়েছে বলেও জানিয়েছেন মেজর জেনারেল গফুর।
ভারতীয় বিমান থেকে ফেলা বোমার টুকরোর একটি ছবিও টুইটারে শেয়ার করেন তিনি।
করাচী থেকে সাংবাদিক মনির আহমেদ বলছেন, ভারতীয় বিমান বাহিনী তাদের লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারেনি বলে পাকিস্তানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
“তারা (ভারত) কোন বোম্বিং করতে পারেনি, তাদের টার্গেট হয়তো থাকতে পারে কিন্তু কোন টার্গেটে যেতে পারেনি,” পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. আহমেদ।
তিনি জানান, “পাকিস্তানের সীমানা লঙ্ঘনের পরপরই পাকিস্তানের জেট তাদের (ভারতীয় বিমান বাহিনীকে) পিছু ধাওয়া করে। তখন তারা মোড় ঘুরিয়ে বিস্ফোরকগুলো ড্রপ করে সেখান থেকে চলে যায়।”
সেগুলো বালাকোটের কাছে যে খাড়া পাহাড় আছে, সেখানে পড়েছিল বলে জানতে পেরেছেন এই সাংবাদিক।
তিনি জানান, এই ঘটনায় কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করছে পাকিস্তান।।
এ ঘটনায় ভারতে কীভাবে জবাব দেওয়া যায়, তা নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর অফিসে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন মনির আহমেদ।
“ইতিমধ্যে পাকিস্তানের ফরেন মিনিস্টার (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলছেন পাকিস্তান এই ঘটনার উপযুক্ত জবাব দিবে” – এমনটাই জানালেন তিনি।
বিকেল প্রায় পাঁচটার দিকে পাকিস্তান সরকারের ভেরিভাইড টুইটারে সর্বশেষ একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে: ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বিশেষ বৈঠকে বলা হয়েছে, ভারত অজ্ঞাতসারে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে, যেটির জন্য পাকিস্তান সময়মতো ও জায়গামতো উত্তর দিবে।
উল্লেখ্য, জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি কনভয়ের ওপরে হামলা চালিয়ে ৪০ জনের বেশি সিআরপিএফ সদস্যকে হত্যা করে বলে ওই সংগঠনটি নিজেরাই দাবি করেছিল।
তারপর থেকেই ভারতের নানা মহল থেকে দাবি উঠছিল যে ওই হামলার কড়া জবাব দেওয়া হোক।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেছিলেন ওই হামলা যারা করেছে, তারা বড় ভুল করেছে এবং এর জন্য তাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে।
মঙ্গলবারের হামলার পরে ভারতের ক্ষমতাসীন আর বিরোধী দলের নেতারা বিমানবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।