পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনের রেখে বালাগঞ্জ উপজেলায় প্রার্থী ও সমর্থকরা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। নিজেদের পক্ষে ভোট টানতে প্রার্থী ও সমর্থকরা দলবেঁধে ছুটছেন গ্রামে গ্রামে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে তাঁরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিটি গ্রামে ও পাড়া মহল্লায় মতবিনিময়,
উঠান বৈঠক, পথসভা ও গণসংযোগ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও সাধারণ ভোটাররা এখনো রয়েছেন নিরব দর্শকের ভূমিকায়। নির্বাচনকে ঘিরে তাদের মধ্যে তেমন কোন উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছেনা।
বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন – আওয়ামী লীগ থেকে (নৌকা) প্রতিক নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মফুর। জাতীয় পাার্টির আবদুর রহিম (লাঙ্গল) প্রতীক নিয়ে। তাছড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন – বর্তমান চেয়ারম্যান, বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত নেতা আবদাল মিয়া (ঘোড়া) ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত নেতা মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী (আনারস) প্রতীক নিয়ে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রার্থী থাকলেও মূল আলোচনায় রয়েছেন – মোস্তাকুর রহমান মফুর, আবদাল মিয়া ও মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী। এর মধ্যে প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন মোস্তাকুর রহমান মফুর। ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ায় আবদাল মিয়া ও গোলাম রব্বানীকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। যার কারণে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি অংশ নির্বাচনে নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন। এছাড়া সম্প্রতি বিএনপি ও এর অংঙ্গ সংগঠনের বেশকিছু নেতাকর্মী নাশকতা মামলায় জেলহাজতে থাকায় নির্বাচনী মাঠে স্বতন্ত্র এই দুই প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় এগুতে পারছেন না।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ তাদের অতীত ঐতিহ্য পুনঃরুদ্ধারে তৎপর থেকে অবিরাম প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েছ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরীর আহবানে দলীয় নেতাকর্মীরা বালাগঞ্জের সর্বত্রই নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
নির্বাচনে যদিও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে আছেন আবদুর রহিম। কিন্তু উপজেলায় দলটির সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল থাকায় লাঙল প্রতিকের এই প্রার্থী কোন সুবিধা করতে পারছেন না।
এছাড়া নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হচ্ছেন – ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী (টিউবওয়েল), সিলেট জেলা যুবলীগ নেতা মো. সামস্ উদ্দিন সামস্ (চশমা), শ্রমিক নেতা সুজিত চন্দ গুপ্ত বাচ্ছু (বাল্ব), যুব নেতা শেখ নুরে আলম (মাইক) ও ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ মোস্তাক আহমদ (তালা)।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে – মোছাঃ কুলসুমা বেগম (পদ্মফুল), সেবু আক্তার মনি (ফুটবল) ও সুক্তি রানী দাস (কলস)।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সরেজমিন দেখা গেছে, নির্বাচনকে ঘিরে বালাগঞ্জের সর্বত্র কেবল প্রার্থী-সমর্থকদের মধ্যে উৎসবমূখর অবস্থা বিরাজ করলেও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তেমন উৎসাহ উদ্দীপনা নেই। বিভিন্ন হাটে-মাঠে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নিয়ে কিছুটা আলোচনা রয়েছে। সচেতন মহলের ধারণা চেয়ারম্যান পদে ত্রিমুখি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আলাপকালে, বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্নসাধারণ সম্পাদক বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ মতিন বলেন, বালাগঞ্জের মাটি ও মানুষের আত্মার সাথে মিশে আছেন মফুর ভাইয়ের নাম। যার সম্পর্ক রয়েছে প্রতিটি ঘরে ঘরে, গ্রাম থেকে গ্রামে। তিনি সব সময় দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে ৪বারের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আর একবারের উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার তিনিই বিজয়ী হবেন ইনশাআল্লাহ।
বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা আব্দুল মুনিম বলেন, উপজেলায় বৈষম্যমুক্ত উন্নয়নের রূপকার বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দাল মিয়া আন্তরিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে গত নির্বাচনের মতো ঘোড়া মার্কার বিজয় সুনিশ্চিত।
অন্যদিকে, পরিবর্তনের পক্ষে স্লোগান তুলে মুহাম্মাদ গোলাম রব্বানীকে বিজয়ী করতে চান তাঁহার সমর্থকরা। মুহাম্মাদ গোলাম রব্বানীর নির্বাচন
সমন্বয়ক ও বালাগঞ্জ উপজেলা কৃষক দলের সাবেক আহবায়ক হেলাল নির্ঝর বলেন, মুহাম্মাদ গোলাম রব্বানী একজন সৎ ও মহৎ ব্যক্তি। ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক উপজেলা নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁহার বিকল্প নেই।
এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও প্রচার প্রচারণায় পিছিয়ে নেই। তাঁরাও নিজেদের দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে ছুঁটছেন উপজেলার এক
প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত।
উল্লেখ্য আগামী ১৮মার্চ বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্টিত হবে।