শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কোচিংয়ে নিয়ে আসাকে বাণিজ্য উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, কোচিং বাণিজ্য চিহ্নিত করে সেটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
তবে আইইএলটিএস ও জিআরই’র জন্য কোচিং এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মতো কোচিংগুলো নিয়ে কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করেন দীপু মনি।
আর শিক্ষা আইনে কোচিং নিষিদ্ধের বিষয়টি অন্তুর্ভুক্ত করা নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদরাসায় স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন নিয়ে আজ বুধবার (১৩ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
কোচিং বন্ধ হবে কিনা- প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোচিং সেন্টার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কথা হচ্ছে। সেটি কিন্তু বন্ধ হয়নি এবং এর সঙ্গে অনেক রকমের কিছু জড়িত আছে।
তিনি বলেন, আমাদের চেষ্টা হলো মানসম্মত শিক্ষা এবং সেই শিক্ষাটি দিতে হলে এর মধ্যে অনেক অনেক বিষয় জড়িত। আমি এই মুর্হূতে যদি বলি যে আর কোনো কোচিং সেন্টার চলবে না। কোচিং সেন্টার তো শুধু এক রকম নয়, অনেক রকমের কোচিং সেন্টার আছে।
‘মনে করেন যারা আইইএলটিএস পড়ায়, যারা জিআরই’র জন্য কোচিং করায়, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করায় সেগুলো নিয়ে তো কোনো সমস্যা নেই, তাই না। সমস্যা কোথায়? এমনকি যদি কোনো কোচিং থাকে কেউ দুর্বল তার আরও একটু সহযোগিতা দরকার, স্কুলের পড়ার বাইরেও সে সেখানে স্বেচ্ছায় যেতে পারে। কেউ যদি কোনো বিদ্যালয়ে পড়ান না কিংবা পড়ালেও নিজে আলাদাভাবে একটি তার বাসায় কাউকে পড়ান, যে পিছিয়ে আছে তাকে একটু সহযোগিতা করেন কিংবা অনেক সময় স্কুলে এক্সট্রা ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। এর কোনোটার মধ্যেই তো দোষের আসলে কিছু নেই।’
কোন কোচিং নিয়ে সমস্যা- তা নিয়ে ব্যাখ্যা দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
‘দোষটা কোথায়, সমস্যাটা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে, যেখানে একজন শিক্ষক তার ক্লাসে শিক্ষাদান যতখানি করার কথা, যতখানি তার শিক্ষার্থীকে ক্লাসে শেখানোর কথা সেখানে পুরোপুরি মনযোগী না হয়ে বা সময় না দিয়ে বা যত্ন না করে তিনি যখন বাইরে কোচিং করান এবং নিজের সেই শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্য করেন তার সেই কোচিংয়ে আসতে এবং না আসলে কখনও কখনও বলা হয় তাদেরকে ক্লাসে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ যেটিকে আমরা বলছি কোচিং বাণিজ্য। সেটি খারাপ।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অতএত আমাদের কোচিং বাণিজ্য কোনটি সেটিকে চিহ্নিত করে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তাহলে কী করতে হবে, স্কুলের মধ্যে পড়ার মান আরও উন্নত করতে হবে। এগুলো প্রত্যেকটা প্রত্যেকটার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমি যেকোনো একটিকে হঠাৎ ধরে বলতে পারি না এটা আজ থেকে বন্ধ, তাহলে বাকিটুকুর কী হবে?
পরীক্ষার সময় কোচিং বন্ধ রাখা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, তথ্য পেয়েছি প্রশ্নফাঁসের বিষয়টার সঙ্গে অনেক সময় অনেক কোচিং সেন্টারকে জড়িত থাকতে দেখা গেছে। সে কারণে পরীক্ষার সময় বন্ধ রাখার বিষয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি এখন যদি বলি আজকে পরীক্ষা শেষ কালকে থেকে আর কোনো কোচিং সেন্টার চলবে না। আমি তাহলে আমার বিদ্যমান যে ব্যবস্থাটা আছে সেটাতে যে পরিবর্তন আনা দরকার সেটি না এনেই তো আমি পদক্ষেপটি নিতে পারছি না।
‘আমি বলবো অবশ্যই যে কোচিং বাণিজ্য সেটি সব সময়ের জন্যই বন্ধ থাকা উচিত। সেটা কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়। কিন্তু বাকি যে ধরনের কোচিংগুলো আছে সেগুলোতেতো কারো কোনো ধরনের অসুবিধা হওয়ার কথা না।’
মন্ত্রী নিজের মত দিয়ে বলেন, আবার এমনও আছে, আমাদের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অত্যন্ত মেধাবী। তারা হয়তো আর্থিকভাবে তাদের পরিবারের অবস্থান শক্ত নয়। সেক্ষেত্রে তারা কিন্তু অনেকে এই টিউশনি করে বা কোচিং সেন্টারগুলোতে পড়িয়ে নিজেদের পড়াশোনা চালান। তারা যদি সঠিক যে টিউশনিগুলো, সঠিক যে কোচিংগুলো সেগুলো যদি করেন কোনো তো অসুবিধা নাই। কারণ তারা তো স্কুলের শিক্ষক না, তারা তো বাধ্য করছেন না। তারা তো স্কুলে ফাঁকি দিচ্ছেন না, তাই না। সুতরাং এটি কোনো একক বিষয় নয় বা একেবারে অন্য কিছুর সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়া একটা আলাদ একটা বিষয় না, অন্য সব কিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের এখন প্রচেষ্টাটা হচ্ছে এই পুরো প্রক্রিয়ায় প্রতিটি জায়গায় আমরা সঠিক ব্যবস্থাটিতে যেতে চাই এবং সেটিতে যেতে চাইলে আমরা ওই হঠাৎ একটিকে ধরে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। আমাদের একেবারে চেইনের পুরোটাতেই কাজ করতে হবে এবং সেটা হঠাৎ একদিন, দু’দিন বা দু’মাসে ছ’মাসে হবে না। সেটার জন্য আমাদের একজন পুরো চিন্তাভাবনা করে কোথায় কোথায় কী জিনিস আমরা কীভাবে করবো, কীভাবে আমরা নিশ্চিত করব যে একজন শিক্ষক ক্লাসে পুরোপুরি তার যে যত্ন নিয়ে পড়াবার কথা সেটি পড়াচ্ছেন, কী পড়াচ্ছেন, কীভাবে পড়াচ্ছেন সেটা দেখতে হবে। এই সময় বিষয়গুলো তার মধ্যে আছে।
মন্ত্রী বলেন, এটা বলা সম্ভব না যে আজকে থেকে কোচিং বন্ধ কিংবা আমরা ছয় মাস বাদে বন্ধ করে দেবো, এরকম কোনো কথা আসলে বলার এখন সুযোগ নেই। আমরা পুরো বিষয়টা দেখছি, পুরো বিষয়টা নিয়ে চেষ্টা করছি আমরা যে মানে পৌঁছাতে চাই সে মানের জায়গাটিতে যেতে হলে আমরা ধাপেধাপে কীভাবে যাব, তারমধ্যে কোচিং একটা অংশ।
‘পুরো বিষয়টি কিন্তু খুব সহজ সরলরেখার একটি বিষয় নয়, এরমধ্যে অনেক রকমের অনেক বিষয় জড়িত। সেজন্য আমাদের সবার এটা নিয়ে চিন্তা করে একটি জায়গায় পৌঁছাতে হবে।’
শিক্ষা আইনের খসড়ায় কোচিং নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছিল, ওই খসড়া রিভিউ করবেন কিনা- প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন কারণে ওটা আবার রিভিউ (পর্যালোচনা) হচ্ছে।