বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বালাগঞ্জে সমাজচ্যুত দুই পরিবারের সংবাদ সম্মেলন



বালাগঞ্জে দুই পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখার অভিযোগ ওঠেছে। ভূমি দখলের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে প্রভাবশালী মাসুক মিয়া ও তার লোকজন সমাজচ্যুত দুই পরিবারের একটির গৃহকর্তাকে হত্যা মামলায় জড়ানোর অভিযোগ ওঠেছে।

রোববার (২৬ মে) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলার রুপিয়া গ্রামের বাসিন্দা একঘরে থাকা এনামুল হক ও ছমির মিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে এনামুল হকের পড়ে শোনানো লিখিত বক্তব্যে জানা গেছে, গ্রামের প্রভাবশালী লোক মাসুক গং জায়গা দখলে ব্যর্থ হয়ে এনামুলের পরিবারকে একঘরে করে রাখেন। তিন কন্যা সন্তানকে মক্তবে যেতে নিষেধ করেছেন। তার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে একই এলাকার ছমির মিয়ার পরিবারকেও সমাজচ্যুত করে রেখেছে মাসুক ও তার লোকজন। তাদের পরিবারে শিরনী দেওয়ার কারণে এলাকার ছালিক মিয়ার মেয়েকে মারধর করে ওই পরিবারকেও সমাজচ্যুত করে রাখেন। এ ঘটনায় ছালিক মিয়া থানায মামলাও দায়ের করেছেন।

লিখিত বক্তব্যে এনামুল বলেন, তিনি নিজে সামান্য ওষুধ কোম্পানীর একজন বিক্রয় প্রতিনিধি। এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জানালেও প্রতিকার মিলেনি। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অবহিত করলেও তারাও মাসুক গংদের দমাতে পারেননি। উপরন্তু মাসুক মিয়া তার (এনামুলের) বিরুদ্ধে ১০৭ ও ১১৭ ধারায় থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্তে নির্দোষ দেখিয়ে আদালতে প্রসিকিউশন দেয় পুলিশ। এরপর নামাজ পড়া থেকে বিরত রাখতে মসজিদ তালাবদ্ধ করে রাখা হয় মাসুক মিয়া গংদের নির্দেশে। উল্টো এ ঘটনায় মামলা দেওয়ার চেষ্টা করেন মাসুক গংরা। ঘটনাটি এসআই সুকুমার সরেজমিন তদন্ত করলে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এছাড়া গত ৩০ এপ্রিল একই গ্রামের মরহুম লাল মিয়ার চল্লিশ দিনের শিরনী ও দোয়া মাহফিল উপলক্ষে তেলাওয়াত করতে যায় ছমির মিয়ার ভাতিজা তুহিন মিয়া। ওই সময় পঞ্চায়েতের বাদ দেখিয়ে গালিগালাজ করে তুহিনকে তেলাওয়াত থেকে উঠিয়ে দেন ফারুক।

এছাড়া বিভিন্ন সময় হামলার চেষ্টা করে মাসুক গংরা। তারা সাজানো মামলায় আসামি দেওয়ার চেষ্টা করে। অবশ্য বালাগঞ্জ থানার ওসি গাজি আতাউর রহমান নির্যাতিদের বিষয়ে অবগত থাকায় মাসুক একের পর এক সকল নীল নকশা থেকে তাদের রক্ষা করেন।

মাসুকের চক্রান্ত রুখতে আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় আবির্ভাব হন বালাগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মতিন মিয়া। তিনি মধ্যস্থতা করে শেষ করে দেওয়ার কথা বলে কালক্ষেপন করতে থাকেন। এরমধ্যেই ২০১৮ সালের নভেম্বরে সিলেট কোতোয়ালি থানা এলাকায় সংগঠিত একটি হত্যা মামলার এজাহারে তাকে আসামি করা হয়েছে, বলেন এনামুল।

তিনি দাবি করেন, ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর বিষয়ে তিনি আইনী পদক্ষেপ নিতে গেলে সালিশের মাধ্যমে সময়ক্ষেপন করে তাকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। অথচ মামলার আসামি বা বাদি কারোরই সঙ্গে তার জানাশোনা নেই। ঘটনার দিন তিনি ওষুধের অর্ডার নিতে বালাগঞ্জের ডেকাপুর ছিলেন। এনামুল দাবি করেন, তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে তার মোবাইল ট্যাগ করলেই ঘটনার দিন তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাবে। যারা আসামি হয়েছেন, তারা সকলের বয়স ২০/২২ এর মধ্যে। অথচ তার মতো নিরীহ বয়স্ক লোককে মামলায় ফাসাতে কুন্ঠাবোধ করেনি। নিশ্চিত পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে তাকে মামলার আসামি করা হয়েছে, দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, মাসুক গংদের রোষানলে পড়ে হত্যা মামলায় আসামি হওয়ার পর থেকে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে সমাজচ্যুত করে রাখার কারণে তার সন্তানরাও দ্বীনি শিক্ষাগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ছমির আলীই নয়, মাসুক মিয়ার স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই কথা বলে, তাদেরকে সমাজচ্যুত করে রাখে। মাসুক গংদের ষড়যন্ত্রের জাল থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন তারা।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!