আজ (১৯জুলাই) সিলেটের ওসমানীনগরের সুরিকোনা গণহত্যা দিবস। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনী কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী এই গ্রামে প্রবেশ করে প্রায় অর্ধশতাধিক লোকদের ধরে নিয়ে হত্যা করে।
কিন্তু ইতিহাসের পাতায় এই বেদনাদায়ক হত্যা কান্ডের ঘটনাটি স্থান পায়নি। পায়নি সরকারি কোন স্বীকৃতি। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সুরিকোনার বধ্যভূমির চিহ্নিত স্থানকে স্বীকৃতি কিংবা শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
জানা যায়, ৭১ সালের ১৯ জুলাই সুরিকোনা গ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ যখন ফজরের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক সেই মূহূর্তে পাক হানাদার বাহিনী গ্রামে প্রবেশ করে প্রতিটি ঘরে হানা দেয়। এসময় মকরম উল্যা, মুহিব উল্যা, জহির উল্যা, আব্দুল বাহার, সুরুজ উল্যা, আব্দুল জব্বার, সাজিদ উল্যা, আফিজ উল্যা, সাইদুর রহমান, হেকিম উল্যা, ইউনুছ উল্যাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক অসহায় মানুষকে হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায় কুশিয়ারা ও নাটকিলা নদীর তীরে।
ধরে আনা লোকদের পৃথক ৩টি স্থানে লাইনে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে লাশ গুলো ভাসিয়ে দেয় নদীর জলে। পরে এলাকাবাসী নদী থেকে ৩৪ জন শহীদের লাশ উদ্ধার করে বিভিন্ন স্থানে কবর দেয়। এই হত্যাকান্ড থেকে নদীর জলে ঝাপ দিয়ে ভাগ্যক্রমে একাধিক ব্যক্তি বেঁচে যান। এই গ্রামের মুক্তি বানিহীর লোক রয়েছে খবর পেয়েই হানাদার বাহিনী এই হত্যাকান্ড ঘটায় বলে জানা যায়। তবে হৃদয়বিদারক এই গণহত্যার কাহিনী ইতিহাসে স্থান পায়নি।
স্বাধীনতার ৪৮ বছর সময় পেরিয়ে গেলেও এ বধ্যভূমি স্মৃতি রক্ষার দাবি আজও উপেক্ষিত রয়েছে। প্রায় ৫বছর পূর্বে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার আফতাব আহমদ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে বধ্যভূমির স্থান চিহ্নিত করেন। কিন্তু অদ্যাবধি চিহ্নিত স্থানটি সরকারি ভাবে স্বীকৃতি লাভ করেনি।
গণহত্যার হাত থেকে বেঁচে থাকা আতাউর রহমান, শামছুল হক ও মানিক মিয়া বলেন – চোখের সামনে পিতা ও ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে পাক বাহিনী। তাদের শক্তির কাছে তখন কত অসহায় ছিলাম আমরা। মরার ভান করে নদীর জলে ঝাঁপ দিয়ে রক্ষা পেয়েছি আমরা। এতটা লোক গণহত্যার শিকার হলেও এই স্মৃতি রক্ষায় সরকারি কোন উদ্যোগ নেই।
সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আফতাব আহমদ বলেন, সুরিকোনায় প্রায় অর্ধশতাধিক লোককে হত্যা করে পাকবাহিনী। হত্যার পর লাশ গুলো নদীতে ভাসিয়ে দেয়। কিন্তু এই গণহত্যার কাহিনী ইতিহাসে নেই। এমনকি বধ্যভূমিটি চিহ্নিত করা হলেও স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ দূরের কথা, চিহ্নিত স্থান আজও সরকারি ভাবে স্বীকৃতি লাভ করেনি।