বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অন্ধ হাফিজ সিরাজুল ইসলামকে প্রবাসী সাংবাদিক এনাম চৌধুরীর অনুদান প্রদান



কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় শয্যাশায়ী ওসমানীনগর উপজেলার রঘুপুর গ্রামের অন্ধ হাফিজ সিরাজুল ইসলামকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক ও জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক এনাম চৌধুরী। গত শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকালে প্রবাসী সাংবাদিক এনাম চৌধুরীর ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে অন্ধ হাফিজ সিরাজুল ইসলামের কাছে নগদ ৫হাজার টাকা হস্তান্তর করেন বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মো. জিল্লুর রহমান জিলু। এসময় রঘুপুর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা ফয়জুল করিম, গ্রামের প্রবীণ মুরুব্বি শিকু মিয়া, ছুরাব আলী, সামছুল ইসলাম রানা, শামীম আহমদ, সামসুল ইসলাম, মোরার বাজারের ব্যবসায়ী আখতার আহমদ, মাদরাসা শিক্ষার্থী রায়হান আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এসময় অন্ধ হাফিজ সিরাজুল ইসলামের সুস্থতা এবং তাঁকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী প্রবাসী সাংবাদিক এনাম চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দীর্ঘায়ু কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন রঘুপুর জামে মসজিদের মাওলানা ফয়জুল করিম।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কয়েক মাস যাবত বিকল হতে চলা দু’টি কিডনী নিয়ে অনাহারে, অর্ধাহারে, দিন কাটছে অন্ধ হাফিজ সিরাজুল ইসলামের। তিনি রোগে, শোকে প্রায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ছেন। অন্ধ হাফিজ সিরাজুল ইসলামের বাড়ি ওসমানীনগর উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের রঘুপুর গ্রামের। নিঃসন্তান এ অন্ধ হাফিজ তার মা ও স্ত্রীকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সম্প্রতি অন্ধ হাফিজ সিরাজুল ইসলামের দুরবস্থা নিয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মো. জিল্লুর রহমান জিলু’র একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস এবং বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিবর্গ তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ আর্থিক অনুদান প্রদান করেছেন এবং প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন বলে তাঁর মা হাওয়ারুন নেছা জানিয়েছেন।

আলাপকালে তিনি বলেন, অন্ধ হাফিজ সিরাজুল ইসলামের দু’টি কিডনী প্রায় বিকল হয়ে পড়ছে। তিনি আগের মতো আর উঠে দাঁড়াতে পারেন না। ক্লান্ত, দেহমন নিয়ে শুয়ে, বসে সময় কাটছে তাঁর। নামাজ পড়েন বসে বসে। হাওয়ারুন নেছা আরও জানান, তাঁর ছেলে একজন প্রতিবন্ধী (অন্ধ)। আল্লামা নূরউদ্দিন গহরপুরী (রহ.) জীবিত থাকাকালে হাফিজ সিরাজুল ইসলাম গহরপুর মাদরাসায় হিফজ বিভাগে পড়েছেন। হাফিজ সিরাজুল ইসলাম তাঁর প্রতিবন্ধীতা থাকা সত্ত্বেও দূর-দূরান্তে বিভিন্ন ধর্মীয় মাহফিলে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। গত দেড় মাস যাবত তিনি প্রায় শয্যাশায়ী। সংসারের ভরণ-পোষণ আর ছেলের চিকিৎসার ব্যাপারে তিনি বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জটিল রোগাক্রান্ত হলেও এখনও দরাজ কণ্ঠে পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত, হামদ, নাত আর গজল পরিবেশনায় আত্মতৃপ্ত হাফিজ সিরাজুল ইসলাম। একমাত্র মা আর স্ত্রী নিয়ে তাঁর সংসার। নিঃসন্তান হাফিজ সিরাজুল ইসলাম সংসারের ভরণপোষণ আর নিজের চিকিৎসার ব্যাপারে কোন অবলম্বন খুঁজে পাচ্ছেন না। গত কয়েকমাস যাবত তিনি অসুস্থতায় ঘরে পড়ে রয়েছেন। গত শুকনো মৌসুমেও গহরপুর মাদরাসাসহ বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসার ওয়াজ মাহফিলে গ্রাম-গ্রামান্তরে ছুটে গেছেন। মাত্র দেড় মাস আগে তাঁর কিডনীর অসুস্থতা ধরা পড়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, অনেক টাকার প্রয়োজন। পাড়া-প্রতিবেশীরা সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করছেন। কিন্তু সংসারের ভরণপোষণ এবং চিকিৎসা কোনটাই ঠিকমত চালিয়ে নিতে পারছেন না অন্ধ হাফিজ সিরাজুল ইসলাম।

রঘুপুর গ্রামের প্রবীণ মুরুব্বি শিকু মিয়া, ছুরাব আলী, সামুছুল ইসলাম, ব্যবসায়ী আখতার আহমদ প্রমুখ জানান, এলাকায় একজন মুসল্লি হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি থাকলেও দারিদ্রতার কাছে অসহায় হয়ে পড়ছেন হাফিজ সিরাজুল ইসলাম। আর্থিক অসচ্ছলতা থাকায় তাঁর নিজের বসতঘরটুকুও নেই। বর্তমানে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে মায়ের সাথে ভাইয়ের ঘরে বসবাস করছেন।

তবে, এত দারিদ্রতা, অসুস্থতার পরও, হাফিজ সিরাজুল ইসলাম নিয়মিত নামাজ এবং পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল আছেন। তাঁর কণ্ঠে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শুনতে অনেক মধুর লাগে। বিভিন্ন হামদ, নাত এবং গজল পরিবেশনায় তাঁর ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। বালাগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিলের সংবাদ পেলেই তিনি ছুটে যেতেন। বালাগঞ্জ, ওসমানীনগরের অনেক দূর-দূরান্তের এলাকাবাসী ও প্রবাসীদের মধ্যে তাঁর ‘বহুপরিচিতি’ রয়েছে। ‘রঘুপুরের অন্ধ হাফিজসাব হিসেবে সবাই তাঁকে চেনেন’।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!