প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলেও দীর্ঘ দিন থেকে বন্ধ রয়েছে বালাগঞ্জ-খসরুপুর সড়কের নির্মাণকাজ। আর তাতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। ২০১৬ সালের ২১জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সফরকালে অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে ‘খসরুপুর বাজার জিসি-পৈলনপুর-বালাগঞ্জ জিসি সড়ক উন্নয়ন’ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ বছর আগে কুশিয়ারা ডাইকের এই রাস্তাটির পাকাকরণ কাজ এর ভিত্তিপ্রস্তরস্থাপন হলেও ২ বছর থেকে কাজ বন্ধ হয়ে আছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাটি ভরাট কাজ প্রায় ৬০ ভাগ শেষ করেছিল এবং প্রায় ৫ কি.মি. রাস্তায় ইটের কংক্রিটসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজও শেষ করেছিল তারা। কিন্তু একসাথে পরপর ৩ বার আকস্মিক বন্যা হওয়ায় কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আর কাজ শুরু হয়নি। টেন্ডার বাতিল করে দেয়া হয় । সেই যে টেন্ডার বাতিল হয়েছিল, আর টেন্ডার হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো রাস্তা জুড়ে এসকেলেটর দিয়ে তুলা মাটি পুরো সড়ক জুড়ে স্তুপ করে ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে বৃষ্টিপাতের কারণে হাঁটু সমান কাদায় পরিণত হয়েছে। রাস্তায় যান চলাচলতাে দূরের কথা এলাকাবাসীর পায়ে হেঁটে চলাচল করাই কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। কুশিয়ারা ডাইকের নয়টি স্থানে ভাঙ্গন থাকায় এলাকাসহ একাধিক স্থানে বিশালাকৃতির গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় লােকজন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। নদীপারের অবহেলিত এই জনপদের বাসিন্দারা স্বপ্ন দেখছিলেন ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থার, কিন্তু এখন অপেক্ষার প্রহর গুণছেন তাদের কষ্টের দিনগুলোর ইতি কবে ঘটবে।
হামছাপুর গ্রামের শাহ আলম অনেকটা কষ্ট নিয়ে বলেন, হতভাগা আমরা! আমাদের দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা ‘পাকাকরণ কাজ’ বন্ধ হয়ে থাকে মাসের পর মাস-বছরের পর বছর। আমাদের বাজেট কত বিশাল। প্রায়ই দেখি মেগা মেগা প্রকল্পগুলো মন্ত্রীসভা ও একনেকে পাশ হচ্ছে, দ্রুত তার বাস্তবায়ন হচ্ছে অথচ আমাদের মাত্র ১২ কোটি টাকার কাজ। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তরস্থাপন করা ‘খসরুপুর বাজার জিসি-পৈলনপুর-বালাগঞ্জ জিসি সড়ক উন্নয়ন’ কাজ পুনরায় শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
পূর্বপৈলনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, আমরা অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম এ রাস্তা নিয়ে কিন্ত স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে আমাদের। নতুন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৯টি ভাঙ্গনসহ মাটি ভরাটের কাজ করার জন্য আলাপ আলোচনা করছে এবং উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসের মাধ্যমে ভালো যে ৪ কিঃ মিঃ রাস্তা রয়েছে তা নির্মাণের জন্য একটি ইষ্টিমিট প্রেরণ করেছে। যদি তা বাস্তবায়ন হয় তাহলে উপকৃত হবো। এর সাথে অনতি বিলম্বে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তরস্থাপন করা ‘খসরুপুর বাজার জিসি-পৈলনপুর-বালাগঞ্জ জিসি সড়ক উন্নয়ন’ কাজের পুরোপুরি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা করছি।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী এস আর এম জি কিবরিয়া বলেন, আমরা চাচ্ছি যতটুকু কাজ করা যায় সেগুলো করার। আপাতত ৪ কিঃমিঃ রাস্তার কাজের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্মানকারী সংস্থার সাথে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। বাকি কাজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে তা শুরু করার চেষ্টা করবো।
এদিকে, কাজ বন্ধ থাকার ফলে পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের হামছাপুর সড়ক দিয়ে চলাচল করা ২০ হাজার মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। মূল সড়ক থেকে নিচু ও পাকাকরণ না হওয়ায় এই রাস্তাটি কর্দমাক্ত থাকে আর বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যায়। বালাগঞ্জ থেকে করচার পার গ্রামের ভেতর পর্যন্ত পাকা রাস্তা থাকলেও সড়কের মধ্যবর্তী এই অংশের জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষদের। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি মেরামতের দাবি উঠলেও কর্ণপাত করছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন ইউনিয়নের – ঐয়া, ফাজিলপুর, পৈলনপুর, গালিম পুর, জালালপুর, সাদেকপুর , রশিদ পুর ও হামছা পুর। এবং উত্তরে বোয়ালজুর ইউপি সহ পশ্চিম ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ। একমাত্র এই সড়ক দিয়েই কালিগঞ্জ বাজার, বালাগঞ্জ বাজারসহ জেলা শহর, বিভাগীয় শহর সিলেটে যাতায়াত করেন এই এলাকার মানুষেরা। তাছাড়া ইউনিয়নের শত শত শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় যেতে হয়।
সড়কটির কাজ হলেই উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের সড়ক যােগাযােগের ক্ষেত্রে সুযােগ সৃষ্টি হবে। পশ্চিম দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাথে সরাসরি সংযোগ ও পূর্বদিকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দাদের যােগাযােগের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বহন করবে। বন্যা ও কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনের কবল থেকে নিম্নাঞ্চল এই এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, মৎস্য খামার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষা পেতো।
বালাগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে গত ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর টেন্ডারের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পায় ‘মেঘনা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সাড়ে ১২ কিলােমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তায় মাটি ভরাট ও পাকাকরণ প্রকল্পের আওতায় দুটি প্যাকেজে কাজ সম্পূর্ণ করার কথা ছিল। প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ ছিল সাড়ে ১৭ কোটি টাকা। ১৫ মাস মেয়াদের কাজে নির্মাণাধিন সড়কে ছােট-বড় ১৮টি কালভার্ট নির্মাণসহ কাজের অনুপাতে প্রকল্পের ব্যয় ও বাড়তে পারে এমনটা উল্লেখ ছিল। রাস্তার নিচ অংশের প্রস্থ ৫২ ফুট ও উপর ২৪ ফুটপ্রস্থ করার নির্দেশনা রয়েছিলো।