রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘আমার সন্তানকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন’

বালাগঞ্জের ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু নাহিদের মায়ের আকুল আবেদন



‘আমার সন্তানের সুস্থতার জন্য সাহায্য করুন, আমার ক্যান্সার আক্রান্ত সন্তানকে বাঁচাতে আপনারা এগিয়ে আসুন’, ব্লাড ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসার জন্য দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বিত্তবান, হৃদয়বান মানুষদের প্রতি এমন আকুতিতে আকুল আবেদন জানিয়েছেন এক অসহায় মা।

সাড়ে ৫বছর বয়সী ওই শিশুটি এখনও সমবয়সীদের সাথে হেসে-খেলে সময় কাটাচ্ছে। অথচ প্রায় আড়াই বছর যাবত দুঃসহ যন্ত্রণা, আর্তচিৎকার নিয়ে বেঁচে আছে সে। শিশুটি নিজেও অকপটে স্বীকার করছে তার ক্যান্সার হয়েছে। কিন্তু ক্যান্সার কি? কি তার পরিণতি এ ব্যাপারে মোটেও বিচলিত নয় ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু নাহিদ। তার পুরো নাম ইমদাদুল ইসলাম নাহিদ। বয়স ৫বছর ৬মাস। সে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের বশিরপুর (তালতলা) গ্রামের জুনেদ আহমদের পুত্র। তার মায়ের নাম খয়রুন বেগম। দাদা আম্বর আলী।

ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু ইমদাদুল ইসলাম নাহিদ (বামে) ও তার মা খয়রুন বেগম

মাত্র ৩বছর ৩মাস বয়সে নাহিদের শরীরে ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। বাবা, চাচা ও আত্মীয়দের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয় করে তার চিকিৎসা চালিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু, এখন আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না নাহিদের মা-বাবা আর পরিবারের লোকজন। চিকিৎসকদের পরামর্শ আরও অন্তত ১ বছরের বেশি তার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। এ চিকিৎসা চালিয়ে নিতে লাখ লাখ টাকার প্রয়োজন। টাকা যোগাড় করে বিদেশে নিতে পারলে মহান আল্লাহপাকের মেহেরবানিতে হয়তো সুস্থ হয়ে উঠতে পারে অবুঝ নাহিদ।

নাহিদের দাদা আম্বর আলী জানিয়েছেন, তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন, পরিবারের পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব নয় এত টাকা যোগাড় করা। নাহিদের মা খয়রুন বেগম বলেন, ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। শিশুর মুখের দিকে তাকালে কান্নায় দম বন্ধ হয়ে যায়, আমরা এ সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাই, কার কাছে যাই? আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আমরা চাই, মহান আল্লাহপাক যেন তাঁর কুদরত থেকে আমার শিশুকে সুস্থ করে দেন।

সম্প্রতি এক বিকালে এ প্রতিবেদক নাহিদকে দেখতে তাদের বাড়িতে যান। এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য খন্দকার আব্দুর রকিব, তরুণ সমাজকর্মী খন্দকার রেদওয়ান আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে আরেকদিন তাদের বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ নাহিদ, তার দাদা আম্বর আলী ও মা খয়রুন বেগমের সাথে দীর্ঘ আলাপ হয়।

বিকালে নাহিদদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সে তার সমবয়সী শিশুদের সাথে আঙিনায় খেলাধুলা করছে। অন্য শিশুদের মতো সে-ও এদিক, ওদিক ছুটাছুটি করছে। দেখে কেউ বুঝতেই পারবে না, সে যে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় ঘরে ফিরে নাহিদ। কথা হয় কি দিয়ে খেয়েছে, উত্তর দেয় ‘ডাইল দিয়া’। তার কি রোগ হয়েছে জানতে চাইলে বলে ‘ক্যান্সার’। একদম সাদাসিধে, সহজ-সরল উত্তর তার। ক্যান্সার যে কত বিপদজনক রোগ আর তার পরিণতি কি এ ব্যাপারে তার কোনো চিন্তা, হতাশা নেই। অথচ তার মায়ের চোখ ছলছল। আমরাও স্তব্ধ, কোনো ভাব নেই, ভাষা নেই।

প্রতিবেদককে শিশু নাহিদের অসুস্থতার বিস্তারিত জানাচ্ছেন তার মা।

এ ব্যাপারে নাহিদের মা খয়রুন বেগম জানান, তার স্বামী বর্তমানে সৌদি আরব আছেন, কিন্তু কোনো রুজি-রোজগার করার সুযোগ নেই। সম্পূর্ণ বেকার, কোনো রকমে বেঁচে আছেন। নাহিদের বাবা, চাচারা মিলে গত আড়াই বছর চিকিৎসা চালিয়ে নিতে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আর কোনো ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন চিকিৎসা চালিয়ে যাবার পাশাপাশি প্রতি মাসে একবার ঢাকায় নিয়ে যেতে হয়। বাদবাকি চিকিৎসা চালিয়ে তাকে সম্পূর্ণরুপে সুস্থ করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় টাকার ব্যবস্থা না হলে তার চিকিৎসা এই মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যাবে।

আলাপকালে তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে আরো বলেন, একজন মা হিসেবে সন্তানের পরিণতির কথা ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে যায়। ‘আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার সন্তানের সুস্থতার জন্য সাহায্য করুন, আমার সন্তানকে বাঁচাতে আপনারা এগিয়ে আসুন, সমাজের বিত্তবান, হৃদয়বান সকলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে আল্লাহর রহমতে আমার নাহিদ আবার সুস্থ হয়ে উঠবে’। নাহিদের চিকিৎসার ব্যাপারে যে কেউ তার মায়ের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন। বিকাশ নম্বর : ০১৩১০ ২৩৭৭০৭

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!