লণ্ডনে সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, যুক্তরাজ্যর আয়োজনে গত ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ বইমেলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের সফল সমাপ্তি হয়েছে। পূর্ব লণ্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুরে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর ভিডিও ম্যাসেজের মাধ্যমে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন – মেলার প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি, বিশেষ অতিথি লণ্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী, লেখক ড. শাহাদুজ্জামান, আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গণি, কবি শামীম আজাদসহ অন্যান্য অতিথিরা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে উৎসর্গকৃত এ মেলায় বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছে – বাংলা একাডেমি, আগামী প্রকাশনী, অন্যপ্রকাশ, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, আহমেদ পাবলিশিং হাউস, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স, অনিন্দ্য প্রকাশ, উৎস প্রকাশন, অনার্য পাবলিকেশন্স, পরিজাত প্রকাশনী, পুঁথিনিলয়, নালন্দা, শব্দশৈলী, বাসিয়া প্রকাশনী ও পাণ্ডুলিপি প্রকাশন। এবং বিলাতের বঙ্গবন্ধু বইমেলা, প্রবাস প্রকাশনী, মেট্রোমেঘ, কবিতাস্বজন, স্পন্দনসহ বেশকিছু স্টল। তাছাড়া বাংলাদেশ হাইকমিশনের তত্ত্বাবধানে এবারের মেলায় ছিল ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’।
সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি ফারুক আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বুলবুলের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সদস্য ড. মুকিদ চৌধুরী, প্রবীণ সাংবাদিক ইসহাক কাজল, আবুল কালাম আজাদ ছোটন, এ কে এম আব্দুল্লাহ, মুহাম্মাদ শরীফুজ্জামান, কাউন্সিলর সায়েমা আহমেদ ও কাউন্সিলর সুহেল আমীন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, বাংলা ভূখণ্ডের বাইরেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে ধরে রাখা ও এর প্রসারে অভিবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে ভূমিকা রাখছেন, তাতে বাংলা ভাষা ও বই যে কখনও হারিয়ে যাবে না এটি নিশ্চিত করে বলা যায়।
সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে তার উদ্দেশে উত্থাপিত দাবি-দাওয়া সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, লণ্ডনে কমিউনিটি লাইব্রেরিতে বাংলাদেশের জন্য একটি কর্নার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই কর্নারে আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গণি পাঁচ লাখ টাকার বই প্রদান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন
মন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের বাইরে সবচেয়ে বড় প্রোগ্রাম লন্ডনে করার পরিকল্পনার কথাও জানান তার বক্তৃতায়। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী বইমেলার সাফল্য কামনা করে বলেন, বই মানুষকে জীবন্ত রাখে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখে। দেশের বাইরে আয়োজিত এমন একটি বইমেলায় অংশ নিতে পেরে আমি আপ্লুত।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক ডা: শাহাদুজ্জামান বলেন, সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে টুকরো টুকরো বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন আমাদের প্রবাসী বাঙালিরা। প্রবাস জীবনের নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যেও প্রবাসীরা যে হৃদয়ে দেশকে ধারণ করে রেখেছেন, তারই প্রমাণ এই বইমেলা। তিনি বলেন, যারা লেখেন তাদের কাজই হচ্ছে অক্ষর দিয়ে একটি দ্বিতীয় জীবন তৈরি করা। ব্রিটেনে বসবাসরত আমাদের লেখকরাও ঠিক সেই দ্বিতীয় জীবনই তৈরি করছেন।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আগামীর কর্ণধার ওসমান গণি তার বক্তৃতায় ‘আগামী প্রকাশনী আব্দুর রউফ চৌধুরী পদক’ প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়ে প্রথমবারের মতো সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীকে এই পদকে ভূষিত করেন। এ সময় তার পাশে ছিলেন আব্দুর রউফ চৌধুরীর ছেলে ড. মুকিদ চৌধুরী।
অন্যান্য বক্তা বলেন, মানবিকগুণের বিকাশের স্বার্থেই দরকার মননের চর্চা। এই চর্চার পথে, বই পড়া খুব দরকারি। লন্ডনে আয়োজিত এই বইমেলা মনন চর্চার সেই সুযোগই সৃষ্টি করেছে প্রবাসীদের জন্য। তারা বলেন, অনেকে মনে করেন আধুনিক প্রযুক্তির কারণে বইয়ের প্রয়োজনীতা কমে গেছে। আসলে সেটি ঠিক নয়। জ্ঞানের অন্বেষণের জন্য বইয়ের আবেদন থাকবে এবং থাকবে। বইয়ের বিকল্প শুধু বই।
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসারে ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির অবিরাম চেষ্টার প্রশংসা করে তারা বলেন, ব্রিটেনের মতো দেশে বাংলাদেশ বইমেলার মতো এমন একটি আড়ম্বর আয়োজন আমাদের আরও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগাবে।
বইমেলার শেষদিন সোমবারের কর্মসূচির মধ্যে ছিল তিনটি সেমিনার। প্রথম সেমিনার শুরু হয় দুপুর ১২টায়। বিষয়: বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে সরকারের পরিকল্পনা। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. শেখ মুসলিমা মুন, ডেপুটি সেক্রেটারি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
দ্বিতীয় সেমিনার শুরু হয় বিকেল আড়াইটায়। বিষয়: অনাবাসী সাহিত্য। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি হামিদ মোহাম্মদ। তৃতীয় সেমিনার ছিল বিকেল সাড়ে ৩টায়। বিষয়: লেখক ও প্রকাশক সম্পর্ক।সেমিনার তিনটিতে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী, ড. শাহাদুজ্জামান, শামীম আজাদ, নঈম নিজাম, ওসমান গণি, ড. মুকিদ চৌধুরী, এমাদদুল হক চৌধুরী ও মিলটন রহমান।