শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যশোরের চৌগাছায় ‘লামপাই স্কিন ডিজিজ’ রোগে আক্রান্ত শত শত গরু, আতঙ্কে কৃষক



ফাইল ছবি

যশোরের চৌগাছার প্রায় প্রতিটি গ্রামে ভাইরাস জনিত রোগে শত শত গরু আক্রান্ত হচ্ছে। কৃষক ও গরু পালনকারীদের অনেকেই রোগটিকে গুটি বসন্ত  ও অজানা রোগ বলে অভিহিত করছেন।

তবে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস বলছে, এটি গুটি বসন্ত বা অজানা কোন রোগ নয়। এই রোগটি ভাইরাস জনিত। রোগটির নাম ‘লামপাই স্কিন ডিজিজ’। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে গরুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষকের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে আক্রান্ত গরুকে স্বাভাবিক চিকিৎসা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা।

সরেজমিন কালের কন্ঠের প্রতিনিধি উপজেলার দক্ষিণ কয়ারপাড়া, লশকারপুর, রোস্তমপুর, ইছাপুর গ্রামে গিয়ে দেখতে পান, প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কোনো না কোনো গরু লামপাই স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে। গরুর বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গেলে কৃষকদের বিমর্ষ ও চিন্তিত দেখতে পান।

কৃষকরা জানান, বিগত এক মাস ধরে শত শত গরু এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।বর্তমানে ভয়াবহ মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে এ রোগ। দক্ষিণ কয়ারপাড়া গ্রামে ১৮০টি কৃষক পরিবারের মধ্যে কমপক্ষে ১২০টি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

গ্রামের কবিরুল ইসলাম জানান, প্রথম দিকে আক্রান্ত গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থান ফুলে উঠছে। এরপর ওই ফোলা স্থানের মাংস পচে যাচ্ছে এবং সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া আক্রান্ত গরুর পা ফুলে উঠছে। এ সময় গরু উঠে দাঁড়াতেও পারছে না।

কৃষক রমজান আলী, ওমর আলী, আব্দুর রশিদ ও আব্দুল হালিম জানান, দুই সপ্তাহ আগে হঠাৎ করেই তাদের গরুর গায়ে ছোট ছোট ফোলা দেখতে পান। প্রথম দিকে বিষয়টি তারা গুরুত্ব দেননি। এর দুই এক দিন পর দেখতে পান ওই ফোলা স্থান থেকে মাংস পড়ে গেছে এবং সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় তারা স্থানীয় পশু চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ানোর পর বর্তমানে আক্রান্ত গরু কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এ গ্রামের হজরত আলী, আনিছুর রহমান, আতিয়ার রহমান, আক্তার হোসেন, কালু বিশ্বাস, মিজানুর রহমান, মো. ইসলাম, শওকত আলী, সাহাজ্জেল হোসেন, জহুরুল ইসলাম, মন্টু মিয়া, মনিরুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, লিটন, সামাদ, নুরুসহ অধিকাংশ কৃষকের গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

কৃষক রমজান আলী জানান, তার ৯টি গরু আছে। তার মধ্যে ৫টি আক্রান্ত হয়। আক্রান্তের মধ্যে ১ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাভী মারা গেছে। তিনি বলেন, ওই গাভীর একটি বাচ্চা আছে। সেই বাচ্চাটিও আক্রান্ত। বর্তমানে অন্য একটি মা গরুর দুধ খেয়ে জীবন বাঁচানোর লড়াইয়ে এখনো কোনরকম বেঁচে আছে। এছাড়া রেজাউল ইসলাম গত সপ্তাহে একটি এঁড়ে গরু বাজার থেকে ক্রয় করেন। যার মূল্য ছিল ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু ওই গরুটি এই ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত শনিবার মারা গেছে।

গ্রামের শওকত আলী বলেন, যে রোগে গরু আক্রান্ত হচ্ছে আমরা স্থানীয়ভাবে ওই রোগকে গুটি বসন্ত রোগ বলে মনে করছি। স্বাভাবিক চিকিৎসা দেয়ার পর ধীরে ধীরে অনেক গরু সুস্থ হয়ে উঠছে।

এদিকে, উপজেলার জগন্নাথপুর, পুড়াপাড়া, জাহাঙ্গীরপুর, গরীবপুর, কাবিলপুর, বকশিপুর, মাধবপুর, বেড়গোবিন্দপুরসহ অধিকাংশ গ্রামে অজ্ঞাত রোগে গরু আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই রোগের ফলে কৃষক ও গরু পালনকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা প্রভাষ চন্দ্র গোস্বামী বলেন, রোগটি নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। রোগটিকে লামপাই স্কিন ডিজিজ বলা হয়। এই রোগ হলে গরুর শরীর ফুলে যেতে পারে। এমনকি ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। রোগটি হলে গরুর তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সেজন্য প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। আর আক্রান্ত পশুকে ভালো পশু থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। গোয়াল বা খামারের চারিপাশে ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে হবে। তিনি বলেন, সাধারণত ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ভাইরাসটি চলে যায়। তাই আতঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই।

 

 

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!