বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন আজ



প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন আজ। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। মধুমতী নদীবিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর জন্ম। সেখানেই শৈশব-কৈশোর কাটে। বাংলার মাটির নিবিড় সংস্পর্শে বেড়ে ওঠার কারণেই পরবর্তী সময়ে এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর গভীর যোগসূত্র তৈরি হয়।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবনের শুরু টুঙ্গিপাড়ায়। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকায় টিকাটুলীর নারী শিক্ষা মন্দিরে (শেরে বাংলা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ) ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমানে বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ওই কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্রসংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। কলেজজীবন শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৬৮ সালে পরমাণুবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় শেখ হাসিনার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথগামী একদল সেনা সদস্য যখন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে, তখন শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা জার্মানিতে ছিলেন ড. ওয়াজেদ মিয়ার বাসায়। মা-বাবাসহ স্বজনদের হারিয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার এক অবর্ণনীয় দুঃসহ জীবন শুরু হয়। নানা দেশ ঘুরে তাঁদের আশ্রয় মেলে প্রতিবেশী দেশ ভারতে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে যায় আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি হয়ে পড়ে বিভক্ত। এই বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরই তিনি তৎকালীন শাসকদের বিরোধিতা উপেক্ষা করে দেশে ফিরে আসেন। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের মতো একটি প্রাচীন দলের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাঁকে দলের অভ্যন্তরেও নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়।

নিজের বিচক্ষণতা, ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার বলে শেখ হাসিনা ধীরে ধীরে দলের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন। শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। মাঝে একবার বিরতি দিয়ে ২০০৯ সালে আবারও প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। তখন থেকে এখন পর্যন্ত টানা তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে। এ দেশে এখন পর্যন্ত তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে এই পদে রয়েছেন। তবে রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার এই অঙ্গনটি শেখ হাসিনার জন্য কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। বারবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। ১৯ বার তিনি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বর্বরোচিত হামলাটি হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট।

শেখ হাসিনা গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতিতে বিশ্বাসী এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন তাঁর জীবনের প্রধানতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে তাঁর রাষ্ট্রদর্শনের বর্ণাঢ্যময়তাই শেখ হাসিনাকে বিশ্বের অনন্য নেতায় উত্তীর্ণ করেছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন ডিগ্রি এবং পুরস্কার প্রদান করে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক ‘সেরেস’ মেডেল প্রদান করে। সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ শেখ হাসিনাকে ১৯৯৮ সালে ‘মাদার তেরেসা’ পদক প্রদান করে। পশ্চিমবঙ্গ সর্বভারতীয় কংগ্রেস ১৯৯৭ সালে তাঁকে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু স্মৃতিপদক প্রদান করে। ২০১৪ সালে ইউনেসকো তাঁকে ‘শান্তির বৃক্ষ’ এবং ২০১৫ সালে উইমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরাম নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাঁকে রিজিওনাল লিডারশিপ পুরস্কার এবং গ্লোবাল সাউথ-সাউথ ডেভেলপমেন্ট এক্সপো-২০১৪ ভিশনারি পুরস্কারে ভূষিত করে। জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এ ছাড়া টেকসই ডিজিটাল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য International Telecommunication Union (ITU) শেখ হাসিনাকে ICTs in Sustainable Development Award-2015 প্রদান করে। সর্বশেষ তাঁর ৭৩তম জন্মদিনের প্রাক্কালে জাতিসংঘ অধিবেশনে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার লাভ করেন। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক বিশ্বব্যাপী টিকাদান সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই) ২৩শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কার দেয়া হয়। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি অর্জন করেছেন বিশ্ববাসীর প্রশংসা। তাঁর এ মানবতাবাদী ভূমিকার জন্য দলের পক্ষ থেকে তাঁকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাব দেয়া হয়েছে। শত ব্যস্ততার মাঝেও শেখ হাসিনা সাহিত্য চর্চা ও সৃজনশীল লেখায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম- তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফরেইন পলিসি নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদদের তালিকায় শেখ হাসিনা জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি বিশ্ব নারী নেত্রী পরিষদের একজন সদস্য, যা বর্তমান ও প্রাক্তন নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। আবার বিশ্বের যে ক’জন নেতা সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে আছেন তার মধ্যেও শেখ হাসিনার নাম প্রথম সারিতে। ২০১৮ সালে পিপলু খানের পরিচালনায় ‘হাসিনা : এ ডটারস টেল’ নামক তথ্যচিত্রে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। তাঁর জীবন, রাষ্ট্রদর্শন ও রাজনীতি নিয়ে রচিত হয়েছে জনপ্রিয় ও গবেষণাধর্মী বহু পুস্তক।

জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে তিনি এখন সেখানে। শেখ হাসিনার জন্মদিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো আওয়ামী লীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালন করবে দলটি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বক্তব্য রাখবেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে সকাল ১০টায় মধুর ক্যান্টিন থেকে শোভাযাত্রা বের করবে।

দোয়া অনুষ্ঠিত: এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহসহ আওয়ামী লীগ ও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!