শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুরুষরাও ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, করণীয় কি



কেবল নারীরা নয়, পুরুষরাও ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন; দেশে এমন পুরুষ রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে নারী-পুরুষ সবাইকে এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। যদিও নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন জরিপেও এর প্রমাণ মিলছে।

ক্যান্সার সচেতনতা মাস উদযাপন উপলক্ষে গতকাল রবিবার রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এক অবহিতকরণ সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে হাসপাতালটির সেবা নেওয়া রোগীদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানানো হয়, ২০১৮ সালে এক হাজার ৮২ জন রোগীর ব্রেস্ট স্ক্রিনিং করা হয়। এর মধ্যে ৩৫৬ জন (৩৩ শতাংশ) পুরুষ ও ৭২৬ জন (৬৭ শতাংশ) নারী। তাঁদের মধ্যে ২৬-৩৫ বছর বয়সের নারী-পুরুষ বেশি। ওই এক হাজার ৮২ জনের মধ্যে ৮ শতাংশের ক্যান্সার পজিটিভ পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে সংখ্যায় কম হলেও পুরুষ ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগী মিলেছে।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নারীদের মতোই ব্রেস্ট টিস্যু থাকে পুরুষদেরও। সেখানেই ক্যান্সারাস টিউমারের জন্ম হয়। বছর চল্লিশের পরে যা পুরুষদের শরীরে থাবা বসাতেই পারে৷ শহরের বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ তথা বেঙ্গল অঙ্কোলজি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘নারীদের মতো পরিণত না হলেও, পুরুষদেরও স্তন থাকে। সেখানে ক্যান্সার হওয়াটাও কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়৷ সংখ্যায় কম হলেও, আজকাল আমরা মেল ব্রেস্ট ক্যান্সারের বেশ কিছু কেস পাচ্ছি৷ যদিও, সেগুলো সবই প্রায় আসে অনেক লেট স্টেজে৷’ কিন্ত্ত কেন? ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা এর জন্য একযোগে দায়ী করছেন পুরুষদের আদ্যিকালের ধ্যান ধারণাকেই৷ কেমন? পুরুষরা কেউই মানতে চান না, যে তাঁদেরও স্তন ক্যান্সার হতে পারে। ফলে, স্তনে কোনও মাংসপিন্ড গজালেও, সেটাকে প্রথমে এড়িয়ে যান৷ আর যতক্ষণে শুভবুদ্ধির উদয় হয়ে চিকিত্‍সকের কাছে আসেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়, ‘ বললেন এসএসকেএম হাসপাতালের অঙ্কো-সার্জন তথা ব্রেস্টক্যান্সার বিশেষজ্ঞ দীপ্তেন্দ্র সরকার। যেমনটা হয়েছিল পৃথ্বীশ রায়ের ক্ষেত্রেও। অস্ত্রোপচার করে স্তন বাদ দিয়ে এখন পৃথ্বীশবাবুর কেমোথেরাপি চলছে৷

চিকিত্‍সকেরা জানাচ্ছেন, পুরুষদের স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই ‘একটু দেরি’ প্রাণঘাতী হয়ে পড়তে পারে৷ কেন? কারণ, মহিলাদের মতো স্তনে ক্যান্সার হলেও, তা মহিলাদের তুলনায় ঢের বেশি গতিতে ছড়িয়ে পড়ে পুরুষ শরীরে৷ দীপ্তেন্দ্রবাবু জানাচ্ছেন, ‘আসলে, মহিলাদের ব্রেস্ট টিস্যু অত্যন্ত ঘন ও পরিমাণে বেশি হওয়ায় টিউমারটি পাঁজরের পেশি বা চামড়ার সংস্পর্শে আসতে সময় নেয়৷ কিন্ত্ত, পুরুষদের স্তনকোষ অত ঘন না হওয়ায়, সেখানে কোনও টিউমারের জন্ম হলে, তা খুব কম সময়েই পাঁজরের পেশি এবং চামড়ায় ছড়িয়ে পড়ে৷ যার ফলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়৷’ বিপদ রয়েছে আরও৷ চিকিত্‍সকেরা জানাচ্ছেন, ‘মহিলাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ম্যামোগ্রাফি করার পরামর্শ দেওয়া হয়, স্তনে টিউমার হচ্ছে কিনা সেটা জানার জন্য৷ কিন্ত্ত, পুরুষদের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়৷ কারণ, পুরুষদের স্তনকোষ সুগঠিত নয়৷’

তবে স্তনে কোনও মাংসল পিন্ডের জন্ম হলেই যে তাকে ব্রেস্ট টিউমার হতে হবে, এমনটা নয়৷ অনেক সময় তা গোইনেকোম্যাস্টিয়া-ও (বয়ঃসন্ধিকালে পুরুষ শরীরে মহিলা হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ায় মহিলাদের মতো সুগঠিত স্তন সৃষ্টি হতে দেখা যায়৷ একেই গাইনেকোম্যাস্টিয়া বলে) হতে পারে৷ আর এই গাইনেকোম্যাস্টিয়ার সঙ্গে পুরুষদের ব্রেস্ট টিউমারের আকৃতিগত কিছুটা মিল অনেকসময়েই পুরুষ শরীরে স্তন ক্যান্সারের ‘ডিটেকশন’-এ সমস্যার সৃষ্টি করে৷ গৌতমবাবু জানাচ্ছেন, ‘অনেকসময় চিকিত্‍সকেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না রোগীর গাইনেকোম্যাস্টিয়া হয়েছে না তা আদতে ব্রেস্টক্যান্সার৷ তাতেই সমস্যা হয়ে যায়৷’

চিকিত্‍সকদের পরামর্শ, ‘স্তনে কোনও মাংসল পিন্ডের উপস্থিতি টের পেলেই সাবধান হোন৷ চিকিত্‍সকের পারমর্শ নিন৷’

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!