খুন হওয়া বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের পরিবারকে সমবেদনা ও কবর জিয়ারত করতে আসা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানকে কুষ্টিয়ায় প্রবেশে বাধা দিয়েছে পুলিশ। গতকাল রোববার সকালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সীমান্তে পদ্মা নদীর ওপর লালন শাহ সেতুর টোলপ্লাজায় তিনি পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। সেখানে ২০ মিনিট পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
দলীয় সূত্র জানায়, আবরারের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামে যাওয়ার জন্য গতকাল ভোরে ঢাকা থেকে সড়কপথে রওনা দেন আমানউল্লাহ। এ সময় তাঁর সঙ্গে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমউদ্দিন আলম ছিলেন। আবরারের পরিবারকে সমবেদনা ও কবর জিয়ারতের জন্য তাঁরা কুষ্টিয়া যাচ্ছিলেন। খবর পেয়ে সকাল থেকেই জেলা ও গোয়েন্দা পুলিশ লালন শাহ সেতু এলাকায় মোতায়েন করা হয়। সেখানে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি ও মাইক্রোবাসে তল্লাশি চলতে থাকে।
বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে লালন শাহ সেতুর ভেড়ামারা অংশে বিএনপির প্রতিনিধিদলটি পৌঁছায়। সেখানে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা সার্কেল) এস এম আল বেরুনী, ভেড়ামারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল আলীমসহ পুলিশ সদস্যরা তাঁদের গাড়ির গতি রোধ করেন। পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশও সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে বাধা তৈরি করে।
আমানউল্লাহ তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে অন্য নেতাদের সঙ্গে নেমে পড়েন। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ কর্মকর্তার উদ্দেশে তিনি বলেন,‘কেন্দ্রের নির্দেশে আবরাবের বাড়িতে যাওয়া হচ্ছে। তাঁর মা–বাবার সঙ্গে কথা বলব। যেতে না দিয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেবেন না।’ তিনি সংবিধান বের করে কয়েকটি লাইন পড়ে শোনান। এ সময় তাঁর সঙ্গে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ সৈয়দ মেহেদী আহম্মেদ রুমী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক সাংসদ সোহবার উদ্দিন ছিলেন।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) এস এম আল বেরুনী এ সময় আমানউল্লাহর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সেফটি সিকিউরিটি পারপাসে আমরা আপনাকে অ্যালাও করছি না। আপনি সামনে ঘুরে ব্যাক করেন।’ আমানউল্লাহ বলেন, ‘আমি চারবার এমপি ছিলাম, দুবার মন্ত্রী ছিলাম। কেন আমাকে যেতে দেবেন না? আমরা দেশের নাগরিক তাই আবারারের বাড়িতে যাব।’ এসএম আল বেরুনী আবারও বলেন, ‘আবরারের বাড়িতে গেলে গন্ডগোল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ জন্য অ্যালাও করব না। আমাদের ম্যাসেজটাও বুঝতে হবে।’ প্রায় ২০ মিনিট পর গোলচত্বর ঘুরে আমানউল্লাহর গাড়িটি ঢাকার উদ্দেশে চলে যায়।
এর আগে ৯ অক্টোবর নিহত আবরার ফাহাদের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে এবং তাঁর কবর জিয়ারত করতে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে যান বুয়েট উপাচার্য সাইফুল ইসলাম। ফাহাদের গ্রামের বাড়িতে এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েন তিনি। পরে পুলিশের সহায়তায় তিনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করে ঢাকায় ফিরে যান।
৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে যান ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। এরপর তাঁকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।