আগস্টের প্রথম সপ্তাহে লণ্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত শোক দিবসের সভায় আমন্ত্রিত সিনিয়র সাংবাদিকদের সভাস্থল থেকে বের করে দেওয়া এবং আগের রাতে ব্যাপকসংখ্যক সাংবাদিকের আমন্ত্রণ বাতিলকে কেন্দ্র করে ইউকে আওয়ামী লীগ ও লণ্ডনে বাংলা গণমাধ্যমের মধ্যে সৃষ্ট সংকটের সমাধান হয়েছে। নজীরবিহীন এ ঘটনায় লণ্ডনসহ দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। প্রতিবাদে লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাব ঘটনার সম্মানজনক সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই জের ধরে বাংলা মিডিয়ার সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দূরত্ব তৈরী হয়।
এ সপ্তাহে লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাব প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এমাদাদুল হক চৌধুরী ও সেক্রেটারী মুহাম্মদ জুবায়েরের সাথে ইউকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট সুলতান শরীফ ও সেক্রেটারী সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের দীর্ঘ একান্ত বৈঠক শেষে উভয়পক্ষ এই সম্মানজনক সমাধানে পৌঁছেন। বৈঠকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আমন্ত্রিত সাংবাদিককে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক, অন্যায় ও অশালীন বলে মেনে নেওয়ায় আড়াই মাস পর লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাব ঘোষিত ইউকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সংবাদ বর্জনের কর্মসূচী সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া বৈঠকে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নেপথ্য কারণ উদঘাটনের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ প্রেরণের কথা জানালে এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগও পাশে থাকবে বলে জানান ইউকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, গত ৩ আগস্ট লণ্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এক সমাবেশে আমন্ত্রণপত্র থাকার পরও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোরের ইউকে প্রতিনিধি সৈয়দ নাহাস পাশা, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রাচীনতম সাপ্তাহিক জনমতের সম্পাদক নবাব উদ্দিনকে অনুষ্ঠানের প্রবেশপথ থেকে অপমানজনকভাবে বের করে দেয় দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
এছাড়া আমন্ত্রণপত্র ইস্যুর পরও অনুষ্ঠানের আগের রাতে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের বর্তমান ট্রেজারার ও বাংলাদেশ প্রতিদিন এর ইউরোপিয়ান চীফ আ স ম মাসুমসহ প্রায় ২০ জন সাংবাদিকের দাওয়াত প্রত্যাহার করা হয়। আমন্ত্রণকারী আওয়ামী লীগ এই নজীরবিহীন ঘটনার কোন সন্তোষজনক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাব গৃহীত আওয়ামী লীগের সংবাদ বর্জনের সিদ্ধান্তে যোগ দেয় যুক্তরাজ্যের বাংলাভাষী টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা এবং অনলাইন মিডিয়াগুলো।
রোববার (২০ অক্টোব) বিকেলে ব্রিকলেনে লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক বিশেষ সভায় সৃষ্ট সঙ্কট সমাধানের অগ্রগতি সম্পর্কে ক্লাব সদস্যদের অবহিত করেন ক্লাব নেতৃবৃন্দ। উল্লেখ্য, প্রায় তিন সপ্তাহ আগে ক্লাবের আরেক সভায় প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারী পর্যায়ে একান্ত বৈঠক আয়োজনের পরামর্শ দেয়া হয়েছিলো। ক্লাব সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বেও সেক্রোটরী এবং চ্যানেল এস এর চীফ রিপোর্টার মুহাম্মদ জুবায়ের পরিচালনায় সভায় জানানো হয়, একান্ত বৈঠকে ইউকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট প্রবীণ রাজনীতিক সুলতান শরীফ ও সেক্রেটারী সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক সভাস্থল থেকে বের করে দেওয়া এবং আমন্ত্রণপত্র ইস্যু করে তা প্রত্যাহার করার ঘটনাটি দুঃখজনক বলে অভিহিত করেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ইউকে আওয়ামী লীগের শোক দিবসের অনুষ্ঠানস্থল থেকে আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের বের করে দেয়ায় ঘটনাটি অন্যায় এবং আশালীন বলে আমরা মনে করি। আমরাও এই অনাকাঙিক্ষত ও দুঃখজনক ঘটনাযর প্রতিবাদ করেছি এবং প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছি। আমরা চাই, এই ঘটনার যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং আশা করছি ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।
লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাব প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী বৃটেনের বাংলা মিডিয়ার ঐক্য প্রদর্শনের এই দৃষ্টান্ত তৈরীর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। ঘটনার সমাধানে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি এক্ষেত্রে দেরিতে হলেও আন্তরিক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসায় ইউকে আওয়ামী লীগের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমন্ত্রণকারী হিসেবে দলটিকে এর দায়-দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। কিন্তু তারা বলছেন, শেষ মুহূর্তে আমন্ত্রণ প্রত্যাহার বা প্রবেশাধিকারের বিষয়টি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সেই হিসেবে তারাও এই ঘটনার প্রতিবাদ করছেন। ক্লাব প্রেসিডেন্ট ব্রিটেনের পত্রপত্রিকা, টিভি ও অনলাইন মাধ্যমের মালিক, পরিচালক, সম্পাদক, সংবাদকর্মী তথা বাংলা মিডিয়ার সব সাংবাদিকের প্রতি আড়াই মাস সফলতা ও দায়িত্বের সাথে ক্লাবের ঘোষিত কর্মসূচী পালন করায় গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।
ক্লাব সেক্রেটারি মুহাম্মদ জুবায়ের বলেন, ঐক্যের মাধ্যমে ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়া তার অতীত ঐতিহ্য ও মর্যাদা ধরে রাখার প্রমাণ দিয়েছে। এ কারণে বেশি ধন্যবাদ সবগুলো মিডিয়া হাউসের প্রতি। ধন্যবাদ ইউকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির প্রতি, তারাও বিষয়টি সুরাহায় পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। ঘটনার শিকার সৈয়দ নাহাস পাশা ও নবাব উদ্দিন বাংলা মিডিয়ার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
প্রেসক্লাবের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট নাহাস পাশা বলেন, ত্রিশ বছরের অধিক সময় ধরে বিলেতে সাংবাদিকতা করে এই প্রথম এমন ঘটনার স্বীকার হয়েছি। এতে শুধু আমরা নিজেরা কষ্ট পাইনি। এতে অসম্মানিত বোধ করেছেন সকল পর্যায়ের সাংবাদিকরা। যাই হোক অবশেষে এর সুন্দর সমাধানে আমি খুশী হয়েছি এবং আশা করি সবগুলো রাজনৈতিক দলের সাথে আমাদের যে বন্ধুত্বপর্ণ ও পেশাদারী সম্পর্ক রয়েছে সেটি অব্যাহত থাকবে।
প্রেসক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট নবাব উদ্দিন বলেন, ৫০ বছরের পুরোনো পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। একটি ঘটনা এর ছন্দপতন ঘটায়। সৃষ্ট সংকটের সমাধানের ক্ষেত্রে দু’পক্ষের নেতৃবৃন্দ যে ভূমিকা রেখেছেন তার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
প্রেসক্লাব ট্রেজারার আ স ম মাসুম বলেন, আমরা এমন ঘটনা আর দেখতে চাই না। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব আরো সোচ্চার ও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রেসক্লাবের সভায় অন্যান্যের মধ্যে ক্লাব প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট মহিব চৌধুরী, সাবেক প্রেসিডেন্ট বেলাল আহমদ, সাবেক সেক্রেটারি যথাক্রমে নজরুল ইসলাম বাসন ও আবদুস সাত্তার এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।