ব্রেক্সিট জ্বরে আক্রান্ত ব্রিটেনের রাজনীতি এখন টালমাটাল থাকলেও একটি সাধারণ নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বেশ জোরে-সুরে আলোচিত হচ্ছে। আর এ লক্ষ্যে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি তাদের দলের প্রার্থী নির্বাচনে খুবই তৎপর হয়ে উঠেছে। এ তৎপরতার অংশ হিসেবে বেশ কয়কজন বাঙালি নতুন প্রার্থীও রয়েছেন যাঁরা হচ্ছেন – ইস্ট লণ্ডনের পপলার ও লাইম হাউজ আসনে আপসানা বেগম, মিডল্যান্ডস ওয়েস্ট আসন থেকে খাজা শমসীর কুরেশী, ওয়েস্ট মিনিস্টার আসন থেকে রাবিনা খান ও চেলসি আসন থেকে ডাঃ আনোয়ারা আলী।
ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলি হঠাৎ করে প্রার্থী নির্বাচন করে না। দলের বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়ে থাকে। আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্য থেকে প্রথমে দরখাস্ত আহ্বানের পর সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি সাধারণ প্রার্থী তালিকা করা হয়। এই তালিকা থেকে যাচাই-বাচাই করে একটি লং লিস্ট করা হয়ে থাকে। আর এ লং লিস্ট থেকে পার্টির জাতীয় নির্বাহী কমিটি (এনইসি) একটি শর্টলিস্ট করে। এই শর্টলিস্ট করার পর নির্ধারিত আসনের পার্টি কর্মীরা ভোট দিয়ে যাকে নির্বাচন করেন তিনিই হন সে আসনের প্রার্থী। জরুরী অবস্থায়ও এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বেশ কয়েকমাস সময় লাগে। আর এ জন্যই শুরু হয় আগাম তৎপরতা।
ব্রিটেনের বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসর একটি আসন হচ্ছে ‘পপলার ও লাইম হাউজ’। যেখানে বাঙালি প্রার্থী আপসানা বেগম লেবার পার্টি থেকে ইতোমধ্যেই নমিনেশন প্রক্রিয়ায় অনেক ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছেন। আগামী ২৭ অক্টোবর তিনি যদি শুধু স্থানীয় লেবার পার্টির মেম্বারদের ভোটে নির্বাচিত হতে পারেন তবেই তাঁর এমপি হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এ আসনটি লেবার পার্টির নির্ধারিত আসন হিসেবে স্বীকৃত। যেখানে বর্তমানে এমপি হিসাবে রয়েছেন জিমফিজপ্যাট্রিক। কিন্তু আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না। সম্ভাবনাময় বাঙালি রাজনীতিক আপসানা বেগম স্থানীয় লেবার পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পার্টি প্রধান জেরেমি করবিনের রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী। আফসানার পিতা মনির উদ্দিন ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক সিরিমনিয়াল মেয়র।
লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি থেকে যিনি ইতোমধ্যেই লণ্ডনের ওয়েষ্ট মিনিস্টার আসন থেকে নমিনেশন পেয়েছেন তিনি হচ্ছেন কাউন্সিলর রাবিনা খান। তিনি পরপর দুইবার মেয়র নির্বাচনে অংশ নেন। প্রথমবার খুব অল্প সংখ্যক ভোটের জন্য জয়লাভ করতে পারেন নি। তিনি বিগত ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের এমপি নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর দেশের বাড়ী সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ান বাজার ইউনিয়নে।
ব্রিটেনের কনজারভেটিব পার্টি থেকে চেলসি আসনে এবার নমিনেশন পেয়েছেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলর ডাঃ আনোয়ারা আলী। তিনি চ্যানেল আই ইউরোপের সাবেক এমডি রেজা আহমদ চৌধুরী সুয়েবের সহধর্মীনি। তার দেশের বাড়ী সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায়।
এদিকে পুরুষদের মধ্যে এ পর্যন্ত যিনি সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে লেবার পার্টি লং লিস্টেড হয়েছেন তিনি হচ্ছেন খাজা শমশীর কোরেশী। তাঁর আসন হচ্ছে ব্রিটেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা ‘মিডল্যান্ডস আসন’। তিনি লেবার পার্টির একজন সক্রীয় কর্মী হিসাবে ১৯৮৩ সাল থেকে কাজ করে আসছেন। তাঁর এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দল তাঁকে এ আসনের লংলিস্ট ভুক্ত করেছে। উচ্চশিক্ষিত জনাব কুরেশী রাজনীতি, দর্শন ও অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন গবেষক হিসেবে কাজ করছেন। ইমিগ্রেশন ও কমিউনিটি লিয়াজন অফিসার হিসেবেও রয়েছে তাঁর বিশেষ দক্ষতা। তিনি ব্রিটেনের বর্ণবাদী আন্দোলনের সময় যুবনেতা হিসেবে কাজ করেছেন।
তিনি মনে করেন, চাকুরির সংখ্যা বৃদ্ধি, শিক্ষার মান বৃদ্ধি বিশেষ করে আইসিটি, সায়েন্স ও গণিত শাস্ত্রে আমাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে। তাঁর দেশের বাড়ী বৃহত্তর সিলেটের জগন্নাথপুর উপজেলার আওরঙ্গবাদ গ্রামে।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের বিগত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারী। সে হিসেবে আগামী নির্বাচন ২০২২ সালের মার্চ মাসে হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে ব্রেক্সিট ইস্যুসহ অন্যান্য রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অস্থিতিশীল রাজনীতিকে স্থিতিশীল করতে আশু একটি সাধারণ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। বর্তমান ক্ষমতাশীল দলও একটি নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তাই একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।