কূটনৈতিক জোন গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বেলা ১২টার দিকে ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। এছাড়া এ মামলার অভিযুক্ত ১ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম, সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। এখন তাদেরকে কেরানিগঞ্জ কারাগারে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আদালত আদেশে উল্লেখ করেন, জাহাঙ্গির হোসেন, আসলাম হোসেন র্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. আব্দুল সবুর খান, শরিফুল ইসলাম খালেক ও মামুনুর রশীদ রিপনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৬ (২) (অ) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হলো এবং তাদের প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। তাদের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হলো।
বুধবার দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার রায় পড়া শুরু করেন। এর আগে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে মামলার আট আসামিকে আদালতে নেয়া হয়। এ সময় আসামি আসলাম হোসেন সরদার ভি চিহ্ন দেখান। তাদের মধ্যে অধিকাংশের মুখেই হাসি ছিল। আসামি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধীও হাসিমুখে ছিলেন। পরে রায় পড়া শুরু করার কিছুক্ষণ আগে আদালতের এজলাসে তাদের তোলা হয় এবং আসামিদের উপস্থিতিতে আলোচিত এ মামলার রায় পড়েন বিচারক। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগপত্রের ৮ আসামি হলেন হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আবদুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। তারা সবাই কারাগারে।
ঘটনাস্থলে নিহত পাঁচ আসামি হচ্ছেন- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানের সময় নিহত ৮ আসামি হলেন, তামিম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ার জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানান, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য, আলামত, তদন্তকারীর রিপোর্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। আমরা সেই বিষয়গুলো আদালতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যে গড়মিল রয়েছে সেই কথা তুলে ধরেছি। মামলার মোট আসামির সংখ্যা হচ্ছে ৮ জন। তাদের মধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এ সময় তাদের গুলিতে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন। পরে অভিযানে ৫ জঙ্গি নিহত হয়। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডার বোল্ডের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ।