শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি – ২৮



 দানাদার রবিশস্য কাউন অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে বপণ করার উপযুক্ত সময়। সাধারণত যেখানে পানি সেচের সুবিধা অপ্রতুল, সেখানে গম ও অন্যান্য রবিশস্যের পাশাপাশি কাউন চাষাবাদ করা হয়। ধারণা করা হয়, দেশে কাউন চাষাবাদের আমদানি হয় চীন থেকে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশে কাউন চাষাবাদ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হচ্ছে। কিন্তু এক সময় প্রায় গ্রামাঞ্চলে এর চাষাবাদ হতো। তবে আশার কথা চাষাবাদ লাভজনক হওয়ায় এখন দেশের চরাঞ্চলের অনেক কৃষক এর চাষাবাদে ঝুঁকছেন এমন খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। উল্লেখ্য, কাউন দিয়ে পায়েশ, ক্ষীর এবং এর আটা দিয়ে সুস্বাদু পিঠা তৈরী হয়ে থাকে। বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে।

 ফল যেহেতু বহুবর্ষজীবি, সেহেতু এর চাষাবাদে জায়গা নির্বাচন সুচিন্তিতভাবে করতে হবে। বর্ষায় যাতে পানি না ওঠে প্রথমে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত আলো বাতাস যাতে খেলে যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। ফল গাছ/বাগান পানির উৎসের কাছাকাছি থাকাও বাঞ্চনীয়, যাতে প্রয়োজনের সময় কম খরচে এবং কম সময়ে প্রয়োজন মতো পানি সেচ দেয়া যায়। এছাড়া অবশ্যই ভালো জাতের সুস্থ-সবল ফলের চারা রোপণেও সচেষ্ট থাকতে হবে। এ জন্য বিশ্বস্ত সূত্র থেকে চারা সংগ্রহ করতে হবে।

 অনেকেই হুট করে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে বাসা-বাড়িতে চারা/কলম রোপণ করেন। সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করেন। কিন্তু পরবর্তীতে অনেক সময় এর উপযুক্ত পরিচর্যা করেন না। এতে চাষাবাদ লাভজনক হয় না। বলা বাহুল্য, চাষাবাদে এটা কখনও কাম্য হতে পারে না। যা হোক, চারা/কলম রোপণ পরবর্তী এই পরিচর্যা গুলো অবশ্যই যত্নের সাথে করতে হবে – ১. প্রয়োজন মতো গোড়ায় পানি দেয়া এবং অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা; ২. ছোট থাকতেই আগাছা পরিস্কার করা; ৩. শিকড় ভেসে ওঠলে গোড়ায় মাটি দেয়া এবং গোড়ার মাটি শক্ত বা জমাট বাধলে তা আলগা করে দেয়া; ৪. মরা, দূর্বল ও রোগাক্রান্ত চারা তুলে ফেলে যথাসময়ে নতুন চারা রোপণ করা।

 চাষাবাদে আগাছার ক্ষতিকর দিক প্রায় সবারই জানা। আগাছা ফসলের খাদ্যে ভাগ বসায়। ফলে ফসলের বাড়-বাড়ন্ত ও উৎপাদন হ্রাস পায়। চাষাবাদে ব্যয় বাড়ায়। এছাড়া আগাছা ফল-ফসল/খেত-খামারে পোকা ও রোগের আশ্রয় হিসেবে কাজ করে। এ জন্য আগাছার ক্ষেত্রে প্রথমেই সাবধান হতে হয়। বিশ্লেষজ্ঞরা বলেন, বছরে ৩/৪ বার ক্ষেতের আগাছা পরিস্কার করা দরকার। ধান-পাট ও শাক-সবজি ছাড়াও বিশেষ করে ফল-ফলাদির চাষাবাদে এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিৎ। ফল-ফলাদির গাছের ক্ষেত্রে আগাছা পরিস্কার করে ওই আগাছা এবং প্রয়োজনে অন্যান্য লতাপাতা ও খড়কুটো দিয়ে গাছের গোড়া ঢেকে দেয়া ভালো। এতে এসব পচে গাছের জৈব সার হিসেবে কাজ লাগবে এবং গাছের গোড়ায় রস সংরক্ষণে সহায়ক হবে, যা পানি সেচের সময় ও শ্রম সাশ্রয়ী হিসেবে বিবেচিত হবে।

 চাষাবাদে বিশেষ করে ফল গাছে প্রায়ই রোগের আক্রমণ দৃষ্ট হয়, এতে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফুল-ফল ধারণে ব্যাঘাত ঘটে এবং সর্বোপরি উৎপাদন হ্রাস পায়। অনেক সময় গাছ মরে যায়। যা কৃষির জন্য ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত চাষাবাদ কৌশল সহায়ক হতে পারে বলে অভিজ্ঞরা মনে করেন। এছাড়া রোগাক্রান্ত গাছে ভেষজ/জৈব কীট নাশক পরিমিত মাত্রা প্রয়োগ করে যেতে পারে। উল্লেখ্য, ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা বেশি হলে এবং ভেষজ/জৈব কীটনাশক প্রয়োগ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক পদ্ধতি/কৌশল প্রয়োগ করা পর্যাপ্ত ফায়দা না পেলে তবেই শুধু সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে যথোপযুক্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক্রমে অনুমোদিত রাসায়নিক কীটনাশক সঠিক পরিমাণে সঠিকভাবে সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। বলা দরকার, রাসায়নিক কীটনাশক নাড়াচাড়া/ব্যবহার থেকে যতদূর সম্ভব দূরে থাকা দরকার। এগুলো পরিবেশ এবং প্রয়োগকারীর জন্য ক্ষতিকর।

 পারিবারিক চাহিদা ও সৌখিনতার পাশাপাশি এখন অনেকেই বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন। বিশ্বব্যাপী আলোচিত এ বিষয়ে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি স্বাভাবিক ও সংগত। এ ক্ষেত্রে সফলতার জন্য অন্যান্য ব্যবসার মতো পারিপার্শ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনার প্রয়োজন। চাষাবাদে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা, বাজার মূল্য, বিপনন ব্যবস্থা, উৎপাদন খরচ, দক্ষ-অভিজ্ঞ শ্রম শক্তি, সেচ ব্যবস্থা, উপযুক্ত জমি, মূলধন ইত্যাদি বিবেচনায় রাখতে হবে। উপযুক্ত জ্ঞান, পরিকল্পনা/ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেক সময় চাষাবাদ/খামার লাভজনক হয় না। সময়, শ্রম ও অর্থবিনিয়োগের পর চাষাবাদে সাফল্য/অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কাম্য হওয়া উচিৎ।

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!