প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে সৈয়দ নূর নামের এক কিশোর খুনের ঘটনায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে অভিযুক্ত ঘাতক গোলাম কাদির (২৭) কে গ্রেফতার করেছেন থানা পুলিশ। গত মঙ্গলবার (৩ মার্চ) রাতে উপজেলা সদরের লক্ষীপুর গ্রাম হতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে উপজেলার বাদাঘাট উওর ইউনিয়নের ঘাগটিয়া আদর্শ গ্রামের মৃত নবীকুল মিয়ার ছেলে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান পিপিএম ঘাতক গোলাম কাদিরকে গ্রেফতারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
প্রসঙ্গত, সীমান্ত নদী জাদুকাঁটায় বালু পাথর কোয়ারি দখলের জের ধরে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে প্রতিপক্ষ মৃত নবীকুলের ছেলে জেঠাত ভাই গোলাম কাদিরের ছুরিকাঘাতে উপজেলার ঘাগটিয়া আদর্শ গ্রামের নাসির উদ্দিনের কিশোর ছেলে সৈয়দ নূর (১৫) খুন হন। এ ঘটনায় নুরের পিতা জখম হয়েছেন।মঙ্গলবার (৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ঘাগটিয়া আদর্শ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই ঘাতক গোলাম কাদির গোলাম কাদির বাড়ি থেকে পালিয়ে আত্বগোপনে চলে যান। এ ঘটনায় নিহতের পিতা আহত নাসির উদ্দিনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুপুরের দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম দু’দফা অপারশেন করেন নাসিরের বুকে ও তলপেটে।
এদিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানার ওসি মো. আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে উপজেলা সদরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পার্শ্ববর্তী লক্ষীপুর গ্রাম হতে গোলাম কাদিরকে গ্রেফতার করেন। ঘটনা সম্পর্কে মঙ্গলবার দুপুরে এলাকাবাসী জানায়,উপজেলার
ঘাগটিয়া আদর্শ গ্রামের মৃত ছোবানের ছেলে নাসির উদ্দিন ও তার বড় ভাই মৃত নবীকুলের পরিবারের লোকজনের মধ্যে ঘাগটিয়া বড়টেক এলাকার পাকা সড়কের তীরে থাকা জাদুকাঁটা নদীর চরে বালু পাথর কোয়ারির জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। মঙ্গলবার সকাল হতে জাদুকাঁটা নদীর বিরোধপূর্ণ চরে কোয়ারি দখল করে নাসির উদ্দিনের বড় ছেলে গোলাম নুর ও মৃত নবীকুলের ছেলে গোলাম নুরের জেঠাত ভাই গোলাম কাদির উভয়েই অবৈধভাবে বালু পাথর উত্তোলনে শতাধিক শ্রমিক নিয়োগ করে। এতে ১৩ সেট সেইভ মেশিন ব্যবহার করা হয়। প্রতি সেট সেইভ মেশিনের বিপরীতে শ্রমিক সর্দারদের নিকট হতে নিয়মিত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে আসছিলেন গোলাম কাদির ও তার চাচাত ভাই গোলাম নুর।মঙ্গলবার কোয়ারিতে লাগানো এক সেট সেইভ মেশিনের চাঁদার টাকা আদায় করাকে কেন্দ্র করে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে গোলাম কাদির ও গোলাম নুর। এ নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোলাম কাদির আদর্শ গ্রামে তার বাড়ির সামনে চাচা নাসির উদ্দিনের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন।এক পর্যায়ে ভাতিজা গোলাম কাদির চাচা নাসিরের বুকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। বাধা দিতে এগিয়ে আসলে নাসিরের কিশোর ছেলে সৈয়দ নুরের তলপেটে ছুরিকাঘাত করেন গোলাম কাদির। আশেপাশে থাকা গ্রামের ও পরিবারের লোকজন পিতা-পুত্রকে উদ্ধার করে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নূরকে মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযোগ রয়েছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জাদুকাটা নদীর বড়টেক,চালিয়ারঘাট এলাকায় উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের মৃত জুলহাস শাহর ছেলে মাহমুদ শাহ, বারিয়া সোনার ছেলে বরকত, মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে আব্দুল আহাদ, এখলাছ মিয়ার ছেলে রানু মিয়া একটি প্রভাবশালী চক্রের সহায়তায় থানা পুলিশ , বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ি , জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অজুহাত দেখিয়ে কাগজে কলমে তালিকা তৈরী করে বালু পাথর কোয়ারির নামে প্রতি শ্রমিক সর্দারদের নিকট হতে প্রতি কোয়ারির বিপরীতে ৩০ হাজার টাকা করে ৫০ কোয়ারি খনন করিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আদায় করে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ মঙ্গলবারের কিশোর সৈয়দ নুর হত্যকান্ডের পেছনে অবৈধ কোয়ারির দখল বাণিজ্য ছাড়াও এমন সংঘাত উস্কে দেয়ার নেপথ্যে চার কোয়ারির অনুমোদন দাতা ও তাদের পেছনে মদদ দাতা প্রভাবশালী মহলের উস্কানি রয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১টায় তাহিরপুর থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান বলেন, সৈয়দ নুরের ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর শেষে রাতেই তার দাফন কাজ সম্পন্ন হয়। এ ব্যাপারে হত্যা মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান ওসি।