বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করার ফলে মানুষ যেখানে চরমভাবে আতঙ্কিত ও বিপর্যস্থ এবং এর থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত সেখানে এ ভাইরাসটি প্রতিহিংসার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার একটি গ্রামে। ফলে সে এলাকার একজন ত্রাণকর্মী প্রতিহিংসার কারণে ত্রাণকাজ বন্ধ রেখে বর্তমানে অত্যন্ত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই নিরুপায় হয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করতে বাধ্য হয়েছেন।
জানা যায়, অত্র উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের দুই ভাই প্রবাসী মোঃ আফরুজ মিয়া ও হারুন মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের বাড়ি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চলে আসছিল। আফরোজ মিয়া যুক্তরাজ্যে অবস্থান করার কারণে সম্প্রতি তার ভাগিনা স্থানীয় শেরপুর গ্রামের শিলিবুর রহমানের মাধ্যমে এলাকার গরীব ও অসহায় মানুষের মধ্যে নগদ টাকা ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে শুরু করেন। কিন্তু এতে ক্ষিপ্ত ও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠেন দেশে থাকা তার ভাই হারুন মিয়া।
তার ধারণা এর ফলে এলাকায় প্রবাসী আফরোজ মিয়ার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়ে যাবে যা ভবিষ্যতে তার (হারুন মিয়ার) বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য তিনি একটি অভিনব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আর সে বিশেষ চক্রান্তমূলক পদক্ষেপটি হচ্ছে ত্রাণ বিতরণকারী তাদের ভাগিনা শিলিবুর রহমানকে ‘করুনা আক্রান্ত রোগী’ বলে অপপ্রচার চালানো। এর ফলে ‘এক ডিলে দুই পাখি মারা’ যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। অর্থাৎ শিলিবুর রহমানকে করোনা আক্রান্ত রোগী ভেবে তার কাছ থেকে কেউ ত্রাণ নিতে আসবে না, অন্যদিকে সামাজিকভাবেও কোনটাসা হয়ে পড়বে ভাগ্না শিলিবুর। এমনকি তার বাড়িও ‘লক ডাউন’ করে দেয়া হলে সে ঘরবন্দি হয়ে যেতে পারে।
প্রতিহিংসাকারী হারুন মিয়া তার এ প্রচেষ্ঠার কৌশল হিসাবে গত ৪ এপ্রিল তিনি তার নিজ ফেসবুক আইডি থেকে শিলিবুর রহমানের আইডিতে তাকে উদ্দেশ্য করে ‘ওর করোনা হয়েছে’ বলে কমেন্টস করেছেন। এর ফলে একদিকে তার কাছ থেকে এখন কেউ কোন ত্রাণ সামগ্রী নিতে আসছে না অন্যদিকে সামাজিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছেন শিলিবুর রহমান। এমতাবস্থায় তিনি কারো কাছে গিয়ে এর কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। কারণ সবাই তার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে।
অবশেষে নিরুপায় হয়ে শিলিবুর রহমান তার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে জগন্নাথপুর থানায় জিডি করেছেন, যার নম্বর ৬০৫ (তারিখ ১৭-০৪- ২০২০ ইং)। এতে শিলিবুর রহমান নিজেকে একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ হিসাবে উল্লেখ করে তার মধ্যে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ নেই বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে এই অপচেষ্টার ফলে একদিকে তার নিজের মানহানি হয়েছে অন্যদিকে এলাকার গরিব জনগণ ত্রাণ সামগ্রী থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত প্রবাসী আফরোজ মিয়া জানান তার নিতান্ত ইচ্ছা ছিল নিজ এলাকার গরীব ও করোনাভাইরাসের কারণে অভাবী মানুষের মধ্যে এ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করার কিন্তু তিনি এখন বাধ্য হচ্ছেন অন্য এলাকায় তা বিতরণ করতে। তিনি পূর্ব লন্ডনের বেথনালগ্রীনে বসবাস করেন।