এবারে শুধু করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনার জন্য দুই দিনের ভার্চ্যুয়াল অধিবেশন হচ্ছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইতিহাসে প্রথম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে ১৯৪৮ সালে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠার পর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন বলছে, যেখানে এবার গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফ্রিকার ৫০টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সদস্য দেশসহ শতাধিক দেশ করোনা মহামারি সম্পর্কে স্বতন্ত্র তদন্তের আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাবকে সমর্থন করছে।
অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্টকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, মঙ্গলবারের প্রথম দিকে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার টিভি নেটওয়ার্ক এবিসির খবরে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ১১৬টি দেশ এখন তদন্তের আহ্বান জানিয়ে খসড়া প্রস্তাবটির সহ-স্পনসর হয়ে স্বাক্ষর করেছে। ব্রিটেন, কানাডা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড ও রাশিয়া তাদের সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
করোনাভাইরাসে তদন্তের ক্ষেত্রে যদিও চীনের নাম উল্লেখ নেই, তবুও বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধের হুমকি দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া প্রথম তদন্তের দাবি জানিয়েছিল।
ভারতের এনডিটিভি জানিয়েছে, ভাইরাসের উৎসের বিষয়ে তদন্তে অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ প্রয়াসকে সমর্থন জানিয়েছে ভারতসহ বিশ্বের মোট ৬২টি দেশ। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ ডব্লিউএইচওর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও স্বতন্ত্র তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যথাযথভাবে উপযুক্ত সময়ে এ নিয়ে তদন্ত শুরু করা দরকার এবং প্রয়োজনে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করুক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যে এই ভাইরাসের জেরে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা এবং পর্যালোচনা থেকে এ–ও দেখা হোক যে এটিকে রোধ করতে কতটা নিরপেক্ষ, স্বতন্ত্র পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
গত মাসে অস্ট্রেলিয়াই প্রথম দেশ যারা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কীভাবে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল, তা নিয়ে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানায়।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিস পেইন বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের তদন্ত করতে দেওয়ার অর্থ অনেকটা শিকারিকেই শিকার বন্ধ করতে বনাঞ্চলের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়ার মতো লেগেছে। এই মহামারিকে রোধ করতে আরও কার্যকরী প্রতিরোধ করা উচিত ছিল বা প্রতিরোধের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষিত রাখতে আন্তর্জাতিকভাবে একটি তদন্তের দরকার এবং এর জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
এই তদন্তের বিষয়ে প্রস্তাব উঠলেও এখনো এ বিষয়ে চীন বা উহানের নাম করে কোনো কিছু বলা হয়নি। যদিও মনে করা হয় যে চিনের উহান থেকেই এই করোনাভাইরাস বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এবং মহামারির রূপ নেয়। বিশ্বে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত ৪৭ লাখ মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন আর মারা গেছেন ৩ লাখ ১৫ হাজার মানুষ।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলেছেন। গত বছরে চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাস উৎপত্তির পর থেকে চীনের ভূমিকার সমালোচনা করে আসছেন তিনি। ভাইরাসটি চীনের গবেষণাগারে জন্ম নিয়েছে—এমন প্রমাণহীন দাবিও করেছেন তিনি। চীনের হয়ে কাজ করার এবং মহামারির বিষয়টিকে প্রথম দিকে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণাও দিয়েছেন ট্রাম্প।
উত্তেজনা সত্ত্বেও সদস্য দেশগুলো মারামারির বিরুদ্ধে একটি সম্মিলিত প্রতিক্রিয়ার আহ্বান জানিয়ে ঐকমত্যের মাধ্যমে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করার বিষয়ে আশাবাদী।