শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ফের সংকটে বিএনপি



মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন :: মা-ছেলের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বার বার রাজনীতিতে ছন্দ হারাচ্ছে বিএনপি। ফলে আবারো নেতৃত্ব সংকট নিয়ে ভাবনায় দলের হাইকমান্ড।  সম্প্রতি বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। দায়িত্বশীল এসব নেতারা জানান, জিয়া পরিবারের ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণেই বিএনপি আজ ছন্দ ছাড়া।

খালেদা জিয়া ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়’ কারাগারে যাওয়ার পরে নেতৃত্ব সংকট সৃষ্টি হলে তারেক রহমান তার ক্ষমতার বিষয়টি পাকাপোক্ত করে নেন। তিনি তার অনুসারীদের দিয়ে নতুন করে দল সাজান। তার ইচ্ছায় দলের কমিটি দেন, মনোনয়ন দেন। এ বিষয়ে সিনিয়র নেতা বা কোনো বিশ্লেষকদের পরার্মশের প্রয়োজন নেই। ফলে সেসময় দল থেকে ছিটকে পড়েছে বিএনপির অনেক ত্যাগী ও পোড়খাওয়া নেতা। রাজনীতি ছেড়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে ঘরমুখী হয়ে পড়েছিলো খালেদা জিয়ার অনুসারীরা।

এখন যেহেতু খালেদা জিয়া আবার দলে ফিরে এসেছেন। দলের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তাই তার (তারেক রহমান) নেতৃত্বে ভাটা পড়েছে। দলে আবার সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে খালেদাপন্থীদের। ফলে মা-ছেলের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে আবারো নেতৃত্ব সংকট ঘনীভূত হয়েছে বিএনপিতে। তারা বলেন, খালেদা জিয়ার এখন উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। তাই দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য তার পরিবারের সদস্যরা বার বার সরকারের দারস্থ হচ্ছেন। এই মুহূর্তে যদি তারেক রহমান কোনো বেফাঁস মন্তব্য করে তাহলে তা আটকে যাবে। এই ভেবেই তাকে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে আপাতত নিজেকে সরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চেয়ারপার্সন।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আরো বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে লন্ডনে বসে তারেক রহমান নেতৃত্ব দিয়ে দলের মধ্যে অনেক অস্বস্তি এবং বিভ্রান্ত তৈরি করেছে। তার অনুসারীদের প্রভাবে অনেক সিনিয়র নেতা নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন। যার জন্য বিএনপিকে আজ চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। এ সব বিষয় বিবেচনা করে খালেদা জিয়া এখন বিকল্প চিন্তা ভাবনা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির দায়িত্বশীল ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা বলেন, জিয়া পরিবারের মূল দ্বন্দ্বটা হলো ক্ষমতার। মা-ছেলেই এই ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বলি হচ্ছি আমরা।

তিনি বলেন, তাদের এই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আজকের নয়, ২০০৬ সাল থেকেই বিএনপি তার মূল্য দিয়ে আসছে। যেদিন থেকে হাওয়া ভবন তৈরি হয়েছিলো, যেদিন থেকে বিএনপিতে খালেদার বাইরে আলাদা বলয় তৈরি হয়েছিলো, সেদিন থেকেই এ দ্বন্দ্ব ডালপালা মেলতে শুরু করে। যার বাস্তব চিত্র দলের এই করুণ পরিণতি। দলে একবার মায়ের অনুসারীদের প্রভাব, একবার ছেলের অনুসারীদের প্রভাব। এ অবস্থায় বার বার খেই হারিয়ে ফেলছি আমরা। বিএনপিপন্থী রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবীরা জানান, বিএনপিতে নেতা-কর্মীদের ওপর বিশ্বাস বা আস্থা অর্জনের বিষয়টি একেবারেই নেই।

তারা বলেন, বিএনপির উচিত ছিল খালেদা জিয়া যখন কারাগারে ছিল তখন দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব নির্বাচন করা। তা না করে বিএনপি লন্ডন নেতৃত্বের ওপর ভর করায় দলের মধ্যে বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। তারেক রহমান পারতো ছায়ার মতো পিছনে থেকে দল পরিচালনা করতে। কিন্তু তিনি তা না করে নিজেই দলের দায়িত্ব নিয়েছেন যার ফলে সিনিয়র নেতারা ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। যার ফলে সাংগঠনিকভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দল।

তারা আরো বলেন, বিগত সময়ে বিএনপি’র আন্দোলন সংগ্রাম বলতে কিছুই ছিল না। ছিল শুধু নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব। এই সময়টাতে তারা জনসম্পৃক্ত কোনো কাজ করতে পারেননি। জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, বিএনপি’র মধ্যে এখনো অনেক চৌকষ ও মেধাবী নেতা রয়েছে। বিএনপি’র উচিত সেসব মেধাবীদের কাউকে নেতৃত্বে নিয়ে আসা।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!