বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

হুসাইন আহমদ মিসবাহ

দিলওয়ার হোসাইন: জনসেবার মডেল



নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না হয়ে, সরকারি বরাদ্ধ না পেয়েও যে সদিচ্ছা থাকলে জনসেবা করা যায়, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ ‘দিলওয়ার’ ভাই। হ্যাঁ, আমি সিলেট-৩ আসনের মাটি ও মানুষের নেতা আলহাজ্ব মাওলানা দিলওয়ার হুসাইন এর কথাই বলছি। যাঁকে মানুষের দুর্দিনে সর্বদা কাছে পাওয়া যায়। নিজের যা আছে তা নিয়েই তিনি দাঁড়িয়ে যান। কখনো নিজের অর্থের পাশাপাশি বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাধ্যমে তহবিল সমৃদ্ধ করেন। তহবিল টার্গেটে না পৌঁছালে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তা পূর্ণ করে দেন। কার্যত মনে হয় উনার দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম একটি অংশ ‘জনসেবা’। এ যেন ‘পাশে ছিলাম, পাশে আছি, পাশে থাকবো’ এর বাস্তব নিদর্শন।

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ। কোন সরকারের পক্ষেই দেশের সকল অভাবগ্রস্থ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। উন্নত দেশের মত সেই সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। দেশের প্রতিটি এলাকা, জেলা, উপজেলার সম্পদশালী, বিত্তশালী জনপ্রতিনিধিরা যদি সাধ্যানুযায়ী অনাথ, অসহায় ও অভাবিদেরকে সহযোগিতা করেন, তাহলেই হতদরিদ্রের মুখে হাসি ফুটানো সম্ভব। বিশেষত দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে একজন নির্বাচিত ও ৫/৭ জন সম্ভাব্য জন প্রতিনিধি আছেন। দেশের দূর্যোগ কালে এই ৩০০ আসনের নির্বাচিত/সম্ভাব্য জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ন্যূনতম একজন প্রতিনিধি যদি এগিয়ে আসেন আর্তমানবতার সেবায়, নিরলস ভাবে কাজ করেন, জনসেবাকে নিজের জীবনের অন্যতম লক্ষ্যে পরিণত করেন, মুখাপেক্ষী মানুষের কল্যাণে মুক্তহস্তে নিজের অতিরিক্ত সম্পদ ব্যয় করেন, তাহলে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে। পীড়িত মানুষের হৃদয়ের গভীর থেকে বেরিয়ে আসবে, ‘এমন জন প্রতিনিধিই আমরা চাই’।

সিলেট-৩ আসনের এমনই একজন সম্ভাব্য জনপ্রতিনিধি আলহাজ্ব মাওলানা দিলওয়ার হুসাইন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ মানুষে দুর্দিনে যাঁকে কাছে পাওয়া যায়। জনসেবার এই মডেল নেতা সম্প্রতি “করোনা” মহামারিতে থমকে যাওয়া বাংলাদেশে আর্তমানবতার সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। নিজের ও পরিবারের মোহ ত্যাগ করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছেন অভাবগ্রস্তদের কাছে। বালাগঞ্জ, দক্ষিণসুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ এর পাশাপাশি উনার জনসেবার পরিধি সিলেট জেলার অন্যান্য থানা, এমনকি মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের ৩০০টি আসনে যদি ৩০০জন ‘দিলওয়ার’ থাকেন, তাহলে হয়তো দেশে অভাবগ্রস্থ খুঁজে পাওয়া যাবেনা। ন্যূনতম অভাবীদের সংখা অনেক কমে যাবে। আমি নিম্নে এই নেতার করোনাকালীন জনসেবার কিছু সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরছি।

ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস : গত ৫মে ২০২০ ইংরেজি থেকে নিজস্ব ব্যাবস্থাপনায় তিনি শুরু করেন ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। বিনামূল্যে করোনা বা করোনা উপসর্গে আক্রান্ত রোগী এবং করোনায় মারা যাওয়া লাশ বহনের মহান লক্ষ্য নিয়ে চালু করেন এই সার্ভিস। এই সার্ভিসের জন্য তিনি নিজ উদ্যোগে গঠন করেন একঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ সাহসী সেচ্ছাসেবক।

তাঁর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এই সেচ্ছাসেবকরা বিগত ১ মাসে- সিলেট শহর, সিলেট সদর উপজেলা, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা, বালাগঞ্জ উপজেলা, বিশ্বনাথ উপজেলা, জৈন্তাপুর উপজেলা, জগন্নাথপুর উপজেলা, মৌলভীবাজার শহর, শ্রীমঙ্গল উপজেলা ও হবিগঞ্জ শহরে প্রায় ৩৫ জন কোভিড-১৯ রোগীকে (বা কোভিড-১৯ উপসর্গ আছে) ৩৯ বার ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করে। ৩টি মৃতদেহ স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
এবং স্বেচ্ছাসেবক টিমের মাধ্যমে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী আরো ৪জনের জানাজা ও দাফনের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। (সূত্র: দৈনিক সিলেটের ডাক, ৯ জুন ২০২০)।

তিনি সাথীদেরকে নিয়ে ‘শেড ট্রা্স্ট’ নামে আরেকটি অলাভজনক সেবা সংস্থা গঠন করেন। সেই সেবা সংস্থার মাধ্যমে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করে এই ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন। এই সংস্থার ‘ম্যানেজিং ট্রাস্টি’ হিসেবে ২য় অ্যাম্বুলেন্সের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করছেন তিনি।

সেচ্ছাসেবক টিম গঠন : করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছাতে, করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবা ও করোনায় মারা যাওয়া লোকের লাশ বহন ও দাফনের লক্ষ্যে তিনি এই আসনের ৩টি উপজেলায় ৩টি সেচ্ছাসেবক টিম গঠন করেন। যে ৩টি টিম প্রতিষ্ঠা থেকেই নিঃস্বার্থ, নির্বিক ও নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যার কিছু চিত্র উপরে বর্ণনা করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের পিপিই প্রদান : সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির দর্পণ। যাঁদের মাধ্যমে সমাজের চিত্র আমাদের সামনে ভেসে উঠে। তাই করোনাকালীন সময় সাংবাদিকরা যাতে নির্ভয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন, সংক্রমিত না হন, সে জন্য এই নেতা ৩টি উপজেলার সাংবাদিকদেরকে পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইউকুপমেন্ট (পিপিই) উপহার দেন। কারণ করোনা সংক্রমিত রোগ। এই রোগীর সংস্পর্শে যারা যাবেন, তারা সংক্রমিত হতে পারেন।

বালাগঞ্জ উপজেলা: বালাগঞ্জ উপজেলায় এই নেতা প্রথম ধাপে নিজস্ব তহবিল থেকে ৮টি অসহায় পরিবারকে ২৫কেজি করে চাল প্রদান করেন। দ্বিতীয় ধাপে ২০৪টি অসহায় পরিবারকে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট প্রদান করেন। এই প্রোগ্রামে সিংহভাগ অর্থ তিনি দান করে বাকী তহবিল শুভাকাঙ্ক্ষী ও স্থানীয়দের থেকে সংগ্রহ করেন। তৃতীয় ধাপে আরো ১০টি পরিবারকে নিজ তহবিল থেকে ঈদ সামগ্রী প্রদান করেন।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা: তিনি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় কয়েক ধাপে ২৩৫টি করোনা বিপর্যস্ত পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট বিতরণ করেন। এই প্রোগ্রামেও সিংহভাগ অর্থ তিনি দান করে বাকী তহবিল শুভাকাঙ্ক্ষী ও স্থানীয়দের থেকে সংগ্রহ করেন।

দক্ষিণ সুরমা উপজেলা: এই আসনের বড় উপজেলা দক্ষিণ সুরমায় তিনি কয়েক ধাপে ১০০০টি করোনা বিপর্যস্ত পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট প্রদান করেন। এই প্রোগ্রামেও সিংহভাগ অর্থ তিনি দান করে বাকী তহবিল শুভাকাঙ্ক্ষী ও স্থানীয়দের থেকে সংগ্রহ করেন। শেষ ধাপে আরো ২০টি পরিবারকে নিজস্ব তহবিল থেকে ঈদ সামগ্রী প্রদান করেন।

পরিশেষে প্রার্থনা করছি, আল্লাহ যেন জনতার দিলওয়ারকে আরো সমৃদ্ধি দান করেন। হায়াত, সুস্থতা, মানসিকতা, চিন্তা, সম্পদ, সম্মান, মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতায় বরকত দান করেন। নাজাতের উসিলা হিসেবে কবুল করেন। আমীন।

লেখক: শিক্ষক, সংগঠক।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!