রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

বালাগঞ্জে সরকারি গোপাট দখলের অভিযোগ



বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ান বাজারে সরকারি খাস খতিয়ান ভূক্ত গোপাটে ‘অবৈধভাবে’ দেয়াল নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে প্রায় ৩বছর যাবত স্থানীয় প্রতিবেশীদের মধ্যে বিরোধ চলে আসে। জানা গেছে, বিষয়টি সর্বশেষ বিজ্ঞ অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব), সিলেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় বরকতপুর গ্রামের মো. আশরাফ আলী ২০১৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্থানীয় শিওরখাল গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী তছির আলী উরফে নছির আলী এবং তার ছেলে গিয়াস মিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি গোপাট দখলের ব্যাপারে অভিযোগ জানান। লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের স্থানীয় শিওরখাল গ্রামের তছির আলী ওরফে নছির আলী ও গিয়াস মিয়া জে,এল নং-১৮১’র স্থিত শিওরখাল মৌজার ‘সরকারি খাস খতিয়ান ভূক্ত ৬৮৬, ৬৭৯, ৬৯০ ও ৬৭৮নং দাগ’র গোপাটে বেআইনিভাবে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করেছেন। মো. আশরাফ আলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে ‘উক্ত গোপাট রকম ভূমি বর্ষা মৌসুমে এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র রাস্তা’ এবং ‘সরকারি গোপাট রকম ভূমির অংশ বিশেষে পাকা বাউ-ারী ওয়াল নির্মাণক্রমে সরকারি ভূমি আত্মসাতসহ এলাকার পানি নিষ্কাশনের রাস্তা বন্ধ’ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ জানান। একই সাথে ‘২য় পক্ষ যাতে সরকারি ভূমিতে অবৈধভাবে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারেন’ এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান।

এর আগে ২০১৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি  মো. আশরাফ আলী, পিতা এমদাদ উল্লাহ’র মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুলতানপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন বিরোধপূর্ণ ভূমি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে ১১ ফেব্রুয়ারি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর প্রেরিত স্মারক (১২) পত্রে মো. আক্তার হোসেন উল্লেখ করেন, ‘১৮১নং জে.এল.স্থিত শিওরখাল মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের ৬৮৬ নং দাগে গোপাট শ্রেণি রকম ভূমি পরিমাণ ০.১০০০ একর সরেজমিন তদন্ত করি। ‘তদন্তকালে দেখা যায় সাকিন বরকতপুর নিবাসী জনাব তছির আলী, পিতা মৃত রাশিদ আলী, তিনির বাড়ি সংলগ্ন উল্লেখিত ১নং খাস খতিয়ানের গোপাট শ্রেণির ভূমি হইতে নয়টি বিভিন্ন শ্রেণির গাছ কর্তন করে পাকা ওয়াল নির্মাণ করিতেছেন’। পরবর্তীতে বালাগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার নির্দেশনা মতে ১১ ফেব্রুয়ারি (২০১৮) সকাল সাড়ে ৯টায় সুলতানপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন পুনরায় এলাকা পরিদর্শন করেন। এ ব্যাপারে তিনি উল্লেখ করেন, ‘১৮১নং জে.এল স্থিত ৬৮৬নং দাগের গোপাট শ্রেণি রকম ভূমিতে অনুমান ৩০০ফুট পাকা ওয়াল নির্মান কাজ করেছেন এবং অভিযোগকারী আশরাফ হুসেন এর বাড়ির দক্ষিণ সীমানার অর্ধেকাংশে নির্মিত ওয়ালটিও অত্র দাগের ভূমিতে অবস্থান আছে বলে অনুমিত হয়’। তিনি ‘বিজ্ঞ সার্ভেয়ার দ্বারা দাগের অবস্থান ও পরিমাণক্রমে সরকারি ভূমির সীমানা নির্ধারণক্রমে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা’ গ্রহণের আবেদন জানান।

এরপর উপজেলা ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে সার্ভেয়ার (মো. ওমর ফারুক) উল্লেখিত ভূমি ১৮১নং জে.এল স্থিত শিওরখাল মৌজার সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত ৬৮৬, ৬৭৯, ৬৯০ এবং ৬৭৮নং দাগের ভূমি পরিমাপ করেন। তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারি (২০১৮) উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর পরিমাপের তদন্ত প্রতিবেদন (স্কেচ ম্যাপসহ) দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘১৮১ নং জে.এল স্থিত শিওরখাল মৌজার সরকারি ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত ৬৮৬, ৬৭৯, ৬৯০ এবং ৬৭৮নং দাগের ভূমি অত্রাফিসের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করি। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় উক্ত মৌজার ৬৮৬, ৬৭৮, ৬৭৯ এবং ৬৯০নং দাগে যথাক্রমে ০.১০, ০.৫২, ০.০৯ ও ০.১৩ একর ভূমি গোপাট শ্রেণি হিসেবে ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক, সিলে মহোদয়ের নামে রেকর্ড হয়’।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সরেজমিন তদন্ত ও পরিমাপে দেখা যায় ৬৮৬ নং দাগে জনাব তছির আলী পিতা রাশিদ আলী… তার ব্যক্তি মালিকানা ৬৮৪নং দাগের সাথে ৬৮৬নং দাগের গোপাটের উত্তরাংশে দৈর্ঘ্য-ে১৯র্৭ ও প্রস্থে র্৪ ও র্১-র্র্র্র্৬র্  এবং মালিকানা ৬৮৪নং দাগের সাথে ৬৭৯নং দাগের গোপাটের পূর্বাংশে দৈর্ঘ্যে-১৪র্৪ ও প্রস্থে র্৪ ও র্৬ ভূমি অপরদিকে ৬৮৩ ও ৬৮০নং মালিকানা দাগের সাথে ৬৭৯নং দাগের গোপাটের উত্তরাংশে দৈর্ঘ্যে ১৫র্৬ ও প্রস্থে র্৬ ভূমি পাকা বাউ-ারি ওয়াল নির্মাণ’ করেছেন। একই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘আশরাফ আলী, পিতা মৃত এমদাদ উল্লাহ সাং বরকতপুর তার ব্যক্তি মালিকানা ৬৮৫নং দাগের সাথে ৬৮৬নং দাগের গোপাটের উত্তরাংশে দৈর্ঘ্যে ৩র্২ ও প্রস্থে র্৪ গাইড ওয়াল নির্মাণ করে’ এবং ‘মোহাম্মদ আলী গুলশের গং পিতা মৃত ছোয়াব আলী সাং বরকতপুর তার ব্যক্তি মালিকানা ৬৮৫নং দাগের সাথে ৬৮৬নং দাগের গোপাটের উত্তরাংশে দৈর্ঘ্য-ে২র্১ এবং প্রস্থে-র্৪ আধা পাকা টিন সেডের গোয়ালঘর নির্মাণ করে অবৈধভাবে ভোগ দখলে বিদ্যমান আছেন’।

এরপর বিষয়টি বালাগঞ্জ উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মার্চ (২০১৮) মাসের সভায় উপস্থাপন করা হয় এবং উচ্ছেদ মামলা নং-০১/১৭-১৮ এর নথি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বালাগঞ্জ’র স্মারক নং-উভূঅ/বালা/২০১৮/১৭০ জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করা হয়। জানা গেছে, পরবর্তিতে অবৈধ দখল উচ্ছেদের ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) থেকে সংশ্লিষ্টদের নোটিশ প্রদান করা হলেও উচ্ছেদ অভিযান সম্পন্ন হয়নি। এক পর্যায়ে বিবাদী তছির আলী পিতা রাশিদ আলীর পক্ষে আপিল পেশ করা হয়। এ ব্যাপারে রাজস্ব মিস আপীল নং অক-৩৫/২০১৯ এর আরজির উপর বিজ্ঞ অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) সিলেট আদালতের কাছে সিলেটের জেলা প্রশাসক একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। ২০১৯ সালের ২৪জুলাই প্রেরিত পত্রে (স্মারক নং-০৫.৪৬.৯১০০.০০৮.২০.০১/২০১৮-১৯.২১৬৯) উল্লেখ করা হয় ‘বর্ণিত অবৈধ দখলকারদের তালিকাদৃষ্টে দেখা যায় যে, ১৮১নম্বর জেএলস্থিত শিওরখাল মৌজার ১নম্বর খতিয়ানের ৬৮৬, ৬৭৮, ৬৭৯ ও ৬৯০নং দাগের গোপাট শ্রেণিরকম যথাক্রমে ০.১০, ০.৫২, ০.০৯ ও ০.১৩ একর ভূমি ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক, সিলেট মহোদয়-এর নামে রেকর্ড হয়’। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘উক্ত ভূমিতে জনাব তছির আলী, পিতা মৃত রাশিদ আলী, সাং বরকতপুর, সিলেটসহ ০৩জন ব্যক্তি অবৈধভাবে পাকা বাউ-ারি ওয়াল নির্মাণ, গাইড ওয়াল নির্মাণ, আধাপাকা টিন সেডের গোয়ালঘর নির্মাণ করে অবৈধভাবে ভোগ দখলে বিদ্যমান আছেন। তাই উক্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নিমিত্ত অর্থাৎ বর্ণিত ভূমি সরকারের পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণে আনয়নের লক্ষে এই উচ্ছেদ মামলাটি রুজু করা হয়েছে এবং ভূমি ও ইমারত (দখল পুনরুদ্ধার) অধ্যাদেশ, ১৯৭০ (২৪/৭০ ধারা) মোতাবেক নোটিশসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), সিলেট আদালতে বর্ণিত বিষয়টি শুনানীর পর্যায়ে আছে। আপীলকারী বর্ণিত মামলায় প্রতিকার পাওয়ার হকদার নয়। জনস্বার্থে আপীল মামলাটি নামঞ্জুর করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হলো।’

এদিকে এলাকাবাসী সূত্রে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, উল্লেখিত সরকারি ভূমিতে অবৈধ দখলের ব্যাপারে স্থানীয় প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন