রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

মুহাম্মাদ হাবিব

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সমাবেশে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের হুমকি প্রসঙ্গে কিছু কথা



সম্প্রতি বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সমাবেশে আসা চরমপন্থি হিন্দু কর্মীরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন। দিল্লীর ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির দলীয় ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানে মুখরিত ছিলো তাদের সমাবেশ ও মিছিল। এই সমাবেশ ও মিছিল থেকে হেফাজতের ইসলাম ও চরমোনাই পীরের সমর্থকদের দালাল আখ্যা দিয়ে তাদেরকে ‘ধরে ধরে জবাই করার’ শ্লোগান দেয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই শান্তি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশে এমন একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না।

প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে আছে বিভিন্ন ধর্মের লোকের বসবাস। তাদের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগই মুসলিম, বাকি ১০ ভাগের মধ্যে রয়েছে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মের লোক। জাতি, ধর্ম ও ভাষার পার্থক্য থাকলেও বাংলাদেশে তাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সাধারণত বিঘ্নিত হয়নি। নৃ-গোষ্ঠীগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। যুগ যুগ ধরে পারস্পরিক প্রতিবেশী স্বরূপ সম্প্রীতির সাথে বাঙালিদের পাশাপাশি বসবাস করছেন তাঁরা।

তাছাড়া সাংবিধানিকভাবে বিভিন্ন ধর্মের লোকদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে আমাদের দেশে। সংবিধান সবাইকে যেকোনো ধর্ম গ্রহণ, চর্চা ও পালন করার অধিকার দিয়েছে। আরো বলেছে, প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা করার অধিকার রয়েছে। বাস্তবে আমরা তা দেখতে ও পাচ্ছি। নানাবিধ সমস্যা থাকা সত্ত্বেও সব ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা নিজেদের উৎসবগুলোকে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করছে। বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বন্ধন দিন দিন সুদৃঢ় হয়েছে। ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ ও সঙ্ঘাত থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন ধরে রেখেছে এবং অবশ্যই আগামী বছরগুলোতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তির এই ধারাকে অব্যাহত রেখেই এগিয়ে যাবে।

তাহলে কেন সম্প্রতি চট্টগ্রামে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সমাবেশে আসা চরমপন্থি হিন্দু কর্মীরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের হুমকি দিলেন? এটা কি কোন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র? না তারা কোন বিশেষ দেশের এজেণ্ডা বাস্তবায়নে করে আমাদের শান্তিপূর্ণ দেশকে অশান্তির অতলে ডুবাতে চাচ্ছেন? একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে এমন ধারণাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না! কারণ যেখানে হেফাজত ইসলাম ও চরমোনাইর পীরের সংগঠন এক ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে সমাবেশের ডাক দিলে লক্ষ লক্ষ ছাত্র জনতা রাস্তায় নেমে আসবে, সেখানে কিসের জোরে তারা তাদের বিরুদ্ধে এমন উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে যেচে যেচে দাঙ্গা লাগাতে চাইলো? হেফাজত ইসলাম বা চরমোনাইর পীরের সংগঠন তো আর তাদের বিরুদ্ধে কোন নেতিবাচক বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়নি।

তবে এসব করে তারা যদি দেশে কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পায়তারা করে তবে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। তাদের এই ষড়যন্ত্র ইতোমধ্যে বিফল হয়ে গেছে। হেফাজত ইসলাম বা চরমোনাইর পীরের সংগঠনরা তাদের উসকানির ফাঁদে পা ফেলেননি। আর পা না দেয়ারই কথা। কারণ, সমাজে একে অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি পরিহার করে সদ্বাভ বজায় রেখে চলার নির্দেশ ইসলাম দিয়েছে। আমাদের প্রিয় নবীজির বিরুদ্ধে বিতর্কিত কার্টুন তৈরী ও অশালিন বক্তব্যের প্রতিবাদে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে এসব ইসলামি সংগঠনগুলো বেশ শান্তিপূর্ণ যথেষ্ট শক্তিশালী সমাবেশ করে তার প্রমাণ তারা রাখছে।

আসলে এসব ঘটনা কখনো কখনো না চাইলেও পিছনের অন্য ঘটনাকে অজান্তে টেনে আনে। যোগসূত্র খোঁজতে তাড়া দেয়। দেশের অনেক জেলার আেইনজীবীরা যখন চিহ্নিত অপরাধীকে আইনি সহায়তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন তখন মেজর (অব.) রাশেদ হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসামি (ওসি) প্রদীপকে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত। যে প্রদীপের জন্য টেকনাফের আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছিল, এলাকায় অশান্তি বিরাজ করছিল, গুম-খুনসহ নানা অপকর্মের লীলাভুমি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল টেকনাফ সেই প্রদীপকে যখন রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মকর্তা হয়ে আইনি সহায়তা দিতে অস্থির আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত – তখন অনেক চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক খায়!

আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, এজন্য কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ মেজর (অব.) রাশেদ হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপের আইনজীবী হিসেবে মামলা লড়াইয়ের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) এর প্রসিকিউটর পদ থেকে রানা দাশগুপ্তের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান। এ দাবি জানাতে গিয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘লিগ্যাল রিমেম্বার অ্যাক্ট অনুযায়ী রানা দাশগুপ্ত রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মকর্তা। যা প্রতিমন্ত্রী পদ মর্যাদার সমান। তিনি এ পদে থেকে কোনো ধরনের আইনি সহায়তা দিতে পারেন না। যদি তিনি আইনি সহায়তা দিতে চান, তবে স্বেচ্ছায় সাংবিধানিক পদ থেকে পদত্যাগ করে অভিযুক্ত আসামিকে আইনি সহায়তা দিতে পারেন।’ আইনের ভিতরে নাজনীন সরওয়া কথা বললেও রানা দাশগুপ্ত দল থেকে তাঁকে বহিস্কারের দাবি জানাচ্ছেন। দাবি জানাতেই পারেন! কারণ রানা দাশগুপ্তদের পিছনে রয়েছে অদৃশ্য মহাশক্তি।

লেখক: রাজনীতিবিদ ও সমাজ কর্মী

 

 

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!