মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘ কে শুনে গরীবের কথা অভাবে তার দূর্বলতা’

প্রথম ধাপের এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনে বালাগঞ্জের চিত্র



জুয়াদ উল্লা­হ্

‘কে শুনে গরীবের কথা অভাবে তার দূর্বলতা’ ধনীয়ে খাইরা রউয়ের মাথা গরীবের জুটের না মুকির খাটা। এমনি আবেগময় কথাগুলোর বললেন বালাগঞ্জ উপজেলার বড়জমাত কদমতলা গ্রামের অসহায় জুয়াদ উল্লা­হ্ (গেদু চাচা) (৭৫)। তিনি করোনা থেকে মানুষ বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রীকে
ধন্যবাদ জানিয়ে আরো বলেন – কাম-কাজ নাই, বাচ্ছা-কাচ্ছারা উপাস, জানের মায়া ছাড়িয়া বাজারঅ আইছি, বিরাট অসুবিধায় আছি, টেকা- পয়সাও নাই, যদি চাউল একসের নিতাম পারি বাচ্ছাকাচ্চা লইয়া খাইতাম, আমার মত আরো অনেক আছে কইতেও পারছে না সইতে পারছে না।

বাজারে আসার কারণ জানতে চাইলে স্থানীয় মাদ্রাসা বাজার দাঁড়িয়ে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের জারি করা কঠোর লকডাউন চলাকালে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন পরিদর্শনকালে জানাগেছে, কঠোর লকডাউনের- ১ম দিন থেকে ৭ম দিন পর্যন্ত স্বল্পআয়ের সাধারণ খেটে-খোটে খাওয়া মানুষেজনরা বিপাকে পড়েছেন। তাদের সংসার চলছে টেনেটুনে। রোগের ভয়ের চেয়েও তাদের কাছে ক্ষুধার জ্বালা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। কেউ কেউ অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।

বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপকালে নিজ নিজ অবস্থার কথা তুলে ধরে তারা বলেন, ঘরে বসে থাকলে খাবার দেবে কে ! তাই বের হয়েছি। গত বছরের লকডাউনে সরকারের পাশাপাশি- ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকজন সাহায্য -সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু বর্তমান অবস্থা ভিন্ন।

নাম-প্রকাশের অনিচ্ছুক শ্রমজীবী কয়েকজন ব্যক্তি জানান, কাঙ্খিত কাজকর্ম না থাকায় তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। এসব মানুষজন সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।

অন্যদিকে আলাপকালে সচেতন জনগণ সরকারের গৃহীত প্রদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চলমান কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধের সময়সীমা ১৪জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে, কঠোর লকডাউনের পাশাপাশি জরুরী ভিত্তিতে দেশের
সকল নাগরিকদের করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদানের দাবি জানান। এছাড়া কঠিন এ মহামারিতে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানরাও স্বস্ব অবস্থান থেকে এলাকার মানুষের পাশে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।

এদিকে প্রথম ধাপের এক সপ্তাহের শেষদিন বুধবার কঠোর লকডাউন অনেকটাই ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ করা গেছে। কেউ যথাযথ বিধিনিষেধ মানছেন আবার কেউ মানছেন না।
উপজেলার স্থানীয় সড়ক সমূহে হালকা যানবাহন ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করছে। অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছেন আবার কেহ মাস্ক সরাসরি মুখে না দিয়ে পকেটে, হাতে ও গলায় ঝুলন্ত অবস্থায় রেখেছেন। নিত্যপণ্যের বাজারের তুলনামূলক দাম একটু বেশি বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ পাওয়া রয়েছে।

তবে উপজেলা প্রশাসন এবং থানা পুলিশ লকডাউন কার্যকর রাখতে মাঠে বেশ তৎপর ছিল। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহলও লক্ষ্য করা গেছে।

উপজেলার প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে, চলতি এ কঠোর লকডাউনের গত ৭দিনে বিধিনিধেষ অমান্য করায় ৭৩জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এবং ১৫ হাজার ৫শ ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উপজেলার বর্তমানে ১৭জন লোক করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন।

আলাপকালে বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনহার মিয়া জানান, কষ্ট হলেও এবারে লকডাউনে বিধি-নিষেধ সাধারণ মানুষরা অনেকটাই মানছেন। এতে করে খেটেখুটে খাওয়া লোকজনের সমস্যা হচ্ছে। মহামারি ঠেকাতে যেমন কঠোর লকডাউন প্রয়োজন। তেমনি লকডাউন লম্বা হলে মানুষদের দুর্ভোগ বাড়বে। বর্তমান দুর্যোগময় সময়ে তিনি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি স্ব স্ব
অবস্থান থেকে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

বালাগঞ্জে থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ নাজমুল হাসান জানান, বিগত ১সপ্তাহের জনসচেতনতামূলক কর্মকান্ডসহ সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ সর্বাত্মক কাজ করেছে। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করা হবে। সে জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

প্রথম ধাপের এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনে পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজিনা আক্তার জানান, সরকারি নির্দেশনা কার্যকর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠা করা হয়েছে। চলতি এ কঠোর লকডাউনের গত ৭দিনে বিধিনিধেষ অমান্য করায় ৭৩জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এবং ১৫ হাজার ৫শ ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উপজেলার বর্তমানে ১৭জন লোক করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন।

বালাগঞ্জ উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান মেস্তাকুর রহমান মফুর বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চলমান কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ মেনে সবকিছু চলছে। উপজেলার শ্রমজীবী মানুষজন বেকায়দায় রয়েছেন। বিশেষ করে পানের
দোকানদার, গাড়ী হেলফার, চালক, চা-দোকানের কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণির অসহায় লোকজন প্রতিদিন ফোন করে তাদের অসুবিধার কথা জানাচ্ছেন। এসব মানুষদের জন্য আলাদা ভাবে বরাদ্দ প্রদানের জন্য সরকারের কাছে জোরদাবি
জানাচ্ছি। তিনি উপকারভোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দুঃস্থ ও অতি দরিদ্র ঐসব পরিবারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!