রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিশাত: মাশরুম চাষে ভাগ্যবদল করা এক তরুণ



 

গোলাম নবী-ঈন নিশাত

মাশরুম চাষ করে ভাগ্য বদল করেছেন সিলেটের পূর্ব-জিন্দাবাজারের এক তরুণ উদ্যোক্তা গোলাম নবী-ঈন নিশাত। তার বাবার নাম মরহুম গোলাম মর্তুজা ও মাতার নাম আমেনা খাতুন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় নিশাত ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। এইচ.এস.সি উর্ত্তীণ হওয়ার পর স্বাবলম্বী হওয়ার তাগিদে সিলেট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করেন। ইচ্ছে ছিল মৎস্য অথবা গরু মোটাতাজাকরণ খামার করার কিন্তু যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি মাশরুম চাষের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তারপর জাতীয় মাশরুম সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীনে একাধিক প্রশিক্ষণ (শিল্প উদ্যোক্তা বিভাগে) গ্রহণ করে স্বল্প পুঁজি নিয়ে নিজের বাসা-বাড়িতে সীমিত পরিসরে ২০০৬ সালে শুরু করেন মাশরুম চাষাবাদ। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে বৃহৎ পরিসরে টিস্যু কালচার প্রযুক্তিসহ শুরু করেন তার স্বপ্নের মাশরুম গার্ডেন লিমিটেড।

এরপর উদ্যেক্তা জনাব নিশাতকে আর পেছনে ফিরে থাকাতে হয় নি। ক্রমশ তিনি মাশরুম গার্ডেন লিমিটেডকে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে। যার ফলশ্রুতিতে তিনি আশানুরুপ মুনাফা অর্জন করেন এবং পরিবারও তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। বর্তমানে তিনি ওয়েস্টার, ঋষি, বাটান, সীতাকে, মিল্কিসহ নানান প্রজাতির মাশরুম উৎপাদন ও বিপণন করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি কডিসেপ মাশরুম নিয়েও তার প্রতিষ্ঠানে গবেষণা চলছে। আশা করা যায়, বিশেষ ঔষধি গুণ সম্পন্ন কডিসেপ মাশরুম নিয়ে আশানুরুপ ফলাফল পাওয়া যাবে। বর্তমানে তার উৎপাদিত মাশরুম সিলেটের বিভিন্ন সুপার শপসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকেই সরাসরি প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন।

মাশরুম নিয়ে অতীতে কাজ করে অনেক উদ্যোক্তা যেখানে ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানে এই উদ্যোক্তার সাফল্য সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এই সাফল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, নিরলস ভাবে লেগে থাকা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান তাঁর এই সাফল্যে নিয়ামক ভূমিকা হিসেবে কাজ করেছে।
গোলাম নবী-ঈন নিশাত শুধুমাত্র নিজে মাশরুম চাষ করে বসে থাকেন নি, পাশাপাশি তিনি সিলেটে মাশরুম চাষাবাদ বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন সময়ে মাঠ পর্যায়ে কর্মশালার আয়োজন করে মাশরুমের গুণাগুণ, চাষাবাদ কৌশল, ব্যবহার ও আর্থিক মুনাফা সম্পর্কে মানুষ-জনকে অবহিত করছেন। একই সাথে এই সম্পর্কিত পোস্টার/ লিফলেট বিতরণ করে যাচ্ছেন। এছাড়া মাশরুম চাষে আগ্রহী যে কেউ ২৬ দিশারী, হাওয়াপাড়া, সিলেটে অবস্থিত মাশরুম গার্ডেন লিমিটেডে যোগাযোগ করতে পারেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা নিশাত জানান, অদূর ভবিষ্যতে তিনি মাশরুমের পাশাপাশি কৃষির অন্যান্য শাখায়ও বিচরণ করতে চান। গড়ে তুলতে চান সমন্বিত কৃষি খামার। যেখানে বৃহৎ পরিসরে মাশরুমসহ অন্যান্য কৃষি পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করতে চান। এ জন্য তিনি স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান সহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সাহায্য কামনা করেন। মাশরুম চাষ নিয়ে প্রায় সার্বক্ষণিক ব্যস্ত গোলাম নবী-ঈন নিশাত ইতোমধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিনিয়োগ বোর্ডের অধীনে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পে প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন।

১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণকারী তরুণ-সফল উদ্যোক্তা গোলাম নবী-ঈন নিশাতের দেশ ও জাতির কল্যাণে কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক। সুস্থ্য-সবল জাতি গঠন ও সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণে মাশরুম চাষাবাদসহ কৃষির অন্যান্য শাখায় নিশাতের মতো অন্যান্য তরুণদের সম্পৃক্ততা জরুরী।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!