শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি-২



 খেজুর গাছ সাধারণতঃ সব ধরণের মাটিতেই এমনকি অনুর্বর ও অধিক লবণাক্ত মাটিতেও চাষাবাদ করা যায়, তবে বেলে ও বেলে দোঁআশ মাটিতে ভালো হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, খেজুর গাছের জন্য পানি নিস্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। বাংলাদেশে সৌদি খেজুর চাষ করে অনেকেই ৪-৫ বছরের মধ্যে ভালো ফসল পেয়েছেন। একটা খেজুর গাছ সাধারণতঃ ১৫০ বছর পর্যন্ত ফসল দিয়ে থাকে।

 শাক-সবজি ও ফল ফসলের রোগ বালাই ও পোকা-মাকড় দমনের জন্য অনেক সময় রাসায়নিক কীট নাশক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই রাসায়নিক কীট নাশক মানুষের শরীরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিষাক্ততা সৃষ্টি করে। রাসায়নিক কীট নাশক প্রয়োগকৃত শাক-সবজি, ফল মূল খেলে ক্যান্সার, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, কিডনী বিকল/ক্ষতিগ্রস্থ, ফুসফুসের সমস্যাসহ দূরারোগ্য রোগ হওয়ার আশংকা থাকে। তাই চাষাবাদে যথা সম্ভব রাসায়নিক কীট নাশক পরিহার করে ভেষজ কীট নাশক প্রয়োগ করা উচিৎ।

 ক্ষতিকর পোকা-মাকড় তাড়ানোর জন্য নিমের পাতা সিদ্ধ করে পানি (কীট নাশক হিসেবে) ক্ষেত-খামারে ছিটিয়ে (¯েপ্র করে) ব্যবহার করা যেতে পারে।

 আমড়া বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত পুষ্টিকর ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। আমড়া গাছ দ্রুত বাড়ে। যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে লাগানোর মাত্র তিন বছরের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, দেশে অনেকেই এখন পারিবারিক চাহিদা পূরণ ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে আমড়া চাষ করছেন এবং লাভমান হচ্ছেন।

 কচুরিপানা এক সময় চাষাবাদে আপদ হিসেবে গণ্য হলেও এখন তা চাষাবাদে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কচুরীপানায় সালফার, নাইট্রোজেন ও ফসফরাস থাকায়, তা ফসলের জন্য অত্যন্তউপযোগী। স্তুপ প্রণালীর মাধ্যমে কচুরীপানা থেকে জৈব সার তৈরী করে চাষাবাদে ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চল ও জলাবদ্ধ এলাকায় ভাসমান পদ্ধতিতে কচুরিপানার উপরে সারা বছর সবজি চাষ ও চারা উৎপাদন করা যায়।

 ভোজন বিলাসী বাঙালীর অন্যতম দু’টি মশলা হলো তেজপাতা ও দারুচিনি। এ গাছ দু’টি বসত বাড়ির আঙ্গিনায় ও শহরে বাড়ির ছাদে (হাফ ড্রামে) রোদেলা জায়গায় সহজেই চাষ করা যায়। অন্যান্য গাছের মতো এ গাছ দু’টোতেও শুষ্ক মওসুমে গোড়ায় পানি দিতে হবে এবং বর্ষায় গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 আমাদের দেশের মাটি পাম অয়েল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। যথাযথ পরিচর্যা করলে লাগানোর মাত্র আড়াই বছরে ফলন পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, পাম অয়েল চাষের জন্য বিখ্যাত মালয়েশিয়ার চেয়েও আমাদের দেশে দ্রুত এবং বেশী ফলন পাওয়া সম্ভব বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।

 শীতকালে ঘন কুয়াশা কিংবা শৈত্য প্রবাহের কারণে অনেক সময় ফসলাদি নানা ধরণের রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় ফসল রক্ষার জন্য কিংবা ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কম রাখার জন্য জরুরী ভিত্তিতে কৃষ্ঠি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো রোগ বালাইয়ের প্রতিকার ও প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

 সুগন্ধযুক্ত গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ আদা মসলা ছাড়াও ঔষধ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় আদার চাষ হলেও চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। যদিও দেশের জলবায়ু আদা চাষের জন্য অনুকূল। অন্যান্য মসলা জাতীয় ফসলের মতো বেলে ও বেলে দো আঁশ মাটিতে আদার ফলন ভালো হয়। সামান্য ছায়াযুক্ত ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধা সম্বলিত উঁচু জমি এবং উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া আদা চাষের উপযোগী। চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে আদা লাগাতে হয় এবং অগ্রহায়ণ থেকে পৌষ মাসের মধ্যে আদা তোলার উপযোগী হয়।

 সালাদ হিসেবে টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ ইত্যাদির সাথে ব্যবহৃত লেটুস শাক শীত প্রধান দেশে সারা বছর চাষ হলেও আমাদের দেশে অক্টোবর থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত কয়েক দফা বীজ বোনা যেতে পারে। উল্লেখ্য লেটুসের বীজ খুব ছোট বোনার সময় ছাই বা মাটির কণা (ধুলি) ব্যবহার করতে হয়।

 আনারসের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি (অক্টোবর-নভেম্বর) সময়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রোপনের নিয়ম হলো, সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৩০ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া ভালো ফলনের জন্য উপযুক্ত পরিচর্যার সাথে সাথে বর্ষা মৌসুমে যাতে আনারসের বাগানে পানি না জমে সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

 মরিচ এখন সব ঋতুতেই চাষ করা সম্ভব। তবে আমাদের দেশে মোট ফলনের প্রায় ৮৫% মরিচ শীতকালে উৎপাদিত হয়। পানি নিষ্কাশন সুবিধা সম্বলিত বেলে দো-আঁশ মাটিতে মরিচ ভালো হয়। উল্লেখ্য, দেশে মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে মরিচের চাহিদা ও আবাদ শীর্ষে।

লেখকঃ সম্পাদক- ‘আনোয়ারা’ (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা), সিলেট।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!