শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি-৬



 জমিতে একই ফসল বছরের পর বছর না করে একটি ফসল সংগ্রহের পর অন্য আরেকটি ফসল চাষাবাদ করা ভালো বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। এতে মাটির পুষ্টি উপাদানের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ভালো ফলন ছাড়াও ফসলের রোগ বালাই, আগাছা এবং ক্ষতিকর পোকা-মাকড় দমণ অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবেই সম্ভবপর হয়ে ওঠে। তবে ভাত যেহেতু জনসংখ্যা বহুল এ দেশে প্রধান খাদ্য সেহেতু চাষাবাদে অবশ্যই ধানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। লাভজনক হলেও ধান বাদ দিয়ে অন্য ফসল চাষাবাদ ঠিক হবে না।

 বলা হয়, দেশে দ্বিতীয় জনপ্রিয় সবজি বেগুন (প্রথম আলু)। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইঅজও) আবিস্কৃত বেগুনের উন্নত জাত গুলো হচ্ছে- বারি বেগুন-১ (উত্তরা), বারি বেগুন-২ (তারাপুরি), বারি বেগুন-৪ (কাজলা) এবং বারি বেগুন-৫ (নয়ন তারা)। বর্তমানে দেশে শীত ও গ্রীষ্ম উভয় মৌসুমে বেগুন চাষাবাদ হচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হলো মধ্য জানুয়ারী- মধ্য মার্চ এবং শীত মৌসুমের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হলো মধ্য আগষ্ট- মধ্য অক্টোবর। ৫-৬ সপ্তাহের চারা বীজতলা থেকে তুলে ক্ষেতে যত্ন পূর্বক রোপণ করতে হয়। বাণিজ্যিক ভাবে বেগুন চাষের জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৭৫ সে.মি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৬০ সে.মি। অন্যান্য পরিচর্যার সাথে মাঝে মাঝে বেগুন গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিলে ভালো হয়। উল্লেখ্য পারিবারিক চাহিদা পূরণের জন্য বাসা-বাড়ীতে সীমিত জায়গায় বা টবে চাষের জন্য বাণিজ্যিক নার্সারীতে ২/৪ টাকায় বেগুনের চারা প্রায়ই পাওয়া যায়।

 ছায়াযুক্ত স্থান অর্থাৎ অন্যান্য গাছের নীচে এবং শাক-সবজির জন্য দেয়া মাচার নীচে অনায়াসে দেশী এবং উন্নতমানের হলুদ চাষাবাদ করা যায়। এতে প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য গাছ-পালার জন্য ব্যবহৃত সারের (জৈব এবং অজৈব) উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত হয়। ডিমলা ও সিন্দুরী নামে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট হলুদের দু’টি উন্নত জাত আবিস্কার করেছে। সিন্দুরী জাত আগাম উত্তোলন করা যায়। হলুদ চৈত্র-বৈশাখ মাসে রোপণ করতে হয়। এর কন্দ বীজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত: হেক্টর প্রতি ২২০০-২৪০০ কেজি কন্দর প্রয়োজন হয়। বীজ রোপণের মাসাধিক কাল পরে কন্দ থেকে গাছ জন্মায়। উল্লেখ্য রোপণের জন্য হলুদের প্রতিটি কন্দে দু’টি উন্নতমানের চোখ থাকা জরুরী। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৫০ সে.মি. এবং বীজ/চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ২৫ সে.মি.। লাগানোর ৯-১০ মাস পর গাছ যখন গোড়া পর্যন্ত শুকিয়ে যায়, তখন হলুদ উত্তোলন করতে হয়।

 মিষ্টি আলু গুরুত্বপুর্ণ একটি পুষ্টিকর খাদ্য। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ থাকায় রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। অথচ অনেকে মিষ্টি আলুকে অবহেলা করেন। উপযুক্ত পরিচর্যায় গভীর দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে মিষ্টি আলুর উৎপাদন ভালো হয়। যদিও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতেও এর চাষাবাদ করা যেতে পারে। দেশী অনেক গুলো জাত রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ভালো জাত গুলো হলো- কমলা সুন্দরী, তৃপ্তি, বারি মিঠা আলু-৪, বারি মিঠা আলু-৫ এবং দৌলতপুরী। চারা/ফসল লাগানোর উপযুক্ত সময় নভেম্বর মাস। লতার কাটিং এর মাধ্যমে চাষাবাদ করা হয়। লতার কাটিং-এ যেন কমপক্ষে দু’টি গিঁট থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আইল পদ্ধতিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৬০ সে.মি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৩০ সে.মি.। সাধারণত: চারা লাগানোর ১২০-১৫০ দিন পর ফসল উত্তোলন করা যায়। উল্লেখ্য, মিষ্টি আলুকে উচ্চ শক্তিদায়ক খাদ্য হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

 ডাল বা তৈল বীজ জাতীয় ফসল চাষাবাদ জমির জন্য উপকারী। তবে এ ফসল গুলো কাটা/কর্তনের সময় অবশ্যই মাটি থেকে ৪/৫ ইঞ্চি উপরে কাটতে/কর্তন করতে হবে। এতে এই সব ফসলের শিকড়ের গুটি থেকে মাটিতে প্রচুর পরিমাণ নাইট্রোজেন যোগ হয়। যা মাটির জন্য উপকারী। পরবর্তীতে এ জমিতে অন্য ফসল ভালো হয়।

 সারা দেশে লতিরাজ কচু চাষাবাদ হলেও প্রধানত: জয়পুরহাট জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ হচ্ছে। তবে ক্রমান্বয়ে অন্যান্য জেলায়ও এর বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। লতিরাজ কচু বছরে তিন বার চাষাবাদ করা যায়। প্রথম বার ভাদ্র-আশ্বিন মাসে, দ্বিতীয় বার অগ্রহায়ণ মাসে এবং তৃতীয় বার ফাল্গুন মাসে চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণের ৫০-৬০ দিন পর লতা উত্তোলন করা যায়। উল্লেখ্য, লতিরাজ কচুর লতা ছাড়াও কান্ড এবং পাতা পুষ্টিকর সবজি হিসেবে বিবেচিত হয়।

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা), সিলেট।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!