মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি-৯



* ফলের রাজা আম আবার জাতীয় বৃক্ষ আম। এর চারা রোপণের উপযুক্ত সময় বৈশাখ-আষাঢ়। তবে আশ্বিন পর্যন্ত রোপণ করা যেতে পারে। আমাদের দেশে সাধারণত: আঁটি থেকে চারা উৎপাদন করা হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আমের আঁটির চারা থেকে উৎপন্ন গাছে মাতৃগুণ বজায় থাকে না। উৎপাদানের জন্য তাই ভালো জাতের (আকার আকৃতি ও স্বাদে গন্ধে) কলমের চারা রোপণ করা উচিৎ। এতে আমের গুণাগুণ বজায় থাকবে এবং ফলনও ভালো হবে। উল্লেখ্য, অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আঁটি থেকে উৎপাদিত চারার আম প্রায়ই টক এবং নিম্নমানের হয়ে থাকে। বলা বাহুল্য, নানা কারণে দেশে উৎপাদিত ফলের মধ্যে সেরা ফল আম। কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই আমে প্রায় সব ধরণের পুষ্টি উপাদান থাকে। এছাড়া অন্যান্য ফলের তুলনায় আমে ক্যালরির পরিমাণ অনেক বেশি।

* এক সময় দেশে মাছ চাষের ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্ব দেয়া হতো না। খাওয়র মুখ ছিল কম। পক্ষান্তরে খালে বিলে পুকুর নদীতে মাছ ছিল পর্যাপ্ত। এখন অবস্থা বদলেছে। খাওয়ার মুখ বেড়েছে অনেক। কিন্তু মাছের উৎপাদন বাড়েনি। বরং নানা কারণে অনেতক কমেষ্টছ। এহেন প্রেক্ষিতে পনিকল্পিত ভাবে মাছে চাষ শুরু হয়েছে। পরিকল্পিত ও বৈজ্ঞানিক ভাবে পুকুরে মাছের চাষের জন্য চুর প্রয়োগ একটা জরুরী বিষয়। চুন প্রয়োগে পুকুরের পরিবশে মাছের জন্য স্বাস্থ্যকর হয় এবং উৎপাদন বাড়ে। তবে অবশ্যই পরিমিত হারে এবং নিয়ম মাফিক চুন প্রয়োগ করতে হবে। অন্যথায় লাভের পরিবর্তে ক্ষতি হতে পারে। প্রতি শতাংশ জলাশয়ের জন্য ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হয়। চুন সরাসরি পানিতে প্রয়োগ করা যাবে না চুন প্রথমে পরিমাণ মষ্টতা পাত্রে ভিজিয়ে নিয়ে পুরোপুরি ঠান্ডা হওয়ার পর সমপরিমাণে সারা পুকুরে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।

* প্রায়ই দেখা যায় লাউ কুমড়া জাতীয় ফসল বাড় বাড়ন্ত ভালো। ফুল কুঁড়িও ভালো, কিন্তু আশব্যঞ্জক ফলন পাওয়া যায়। এর অন্যতম কারণ যথঅথ পরাগায়নের অভাব। এর জন্য বিশেষজ্ঞরা নির্বিচারে ক্ষেওত কীটনাশক প্রয়োগকে দায়ী করেন। ক্ষেতে নির্বিচারে কীটনাশক প্রয়োগ করা হলে শত্রু পোকার সাথে সাথে বন্ধু পোকাও নির্মূল হয়। যা হোক এরূপ সমস্যায় লাউ কুমড়া জাতীয় ফসলে হস্ত পরাগায়নের পরামার্শ দেন বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞচাষী। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন সূর্য ওঠার এক ঘন্টার মষ্টধ্য পুরুষ ফুল ছিঁড়ে আলতো করে পরাগ রেনু স্ত্রীফুলে লাগিয়ে দিতে হবে। এতে পরাগায়ন হবে এবং ফলন বাড়বে। কথায় আছে, ‘ফুল ছোাঁয়লে ফলন বাড়ে’।

* মসলা জাতীয় ফসল আদার চাষাবাদের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া দরকার। সুনিষ্কাশিত গভীর বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটিতে আদার ঠলন ভালো হয়। এপ্রিল-মে মাস আদা রোপণের উপযুক্ত সময়। বীজের জন্য আদার কন্দ চোখসহ ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৪৫-৪৬ সে.মি. কন্দ থেকে কন্দের দূরত্ব হবে ২০ সে.মি.। আদার বীজ কন্দ মাটির ৫-৭ গভীরে রোপণ করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। চারা গজানোর পর দুই সারির মধ্যবর্তী জায়গা থেকে মাটি তুলে গাছের গোড়ায় দিতে হয়। রোপণের ৭-৮ মাস পর (ডিসেম্বর-জানুয়ারী) ফসল তোলার উপযোগী হয়। উল্লেখ্য, আদা অন্য গাছের ছায়ায় অর্থাৎ সাথী ফসল হিসেবে চাষ করে জমির ও সারের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, আদা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।

* অনেকে সাতকড়াকে সমতল ভূমিতে চাষাবাদের চেষ্ট করেন। কিন্তু প্রায়ই তা সফলতা পায় না। মূলত: সাতকড়া পাহাড়ী এলাকার ফল। ধারণা করা হয়, সিলেট অঞ্চলের এই জনপ্রিয় ফল ভারতের আসাম অঞ্চলের পাহাড়ী এলাকা থেকে আগত। যা হোক, পাহাড়ী ফল হিসেবে একে পাহাড়/টিলায় চাষাবাদ করতে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাতাবী লেবু (জাম্বুরা)র চারার সাথে গ্রাফপিং করে সহজেই সাতকড়ার চারা উৎপাদন করা যায়। চাষাবাদের জন্য এটাই করা উচিৎ। বীজ তেকে চারা উৎপাদনের চেষ্টা না করাই ভালো। উল্লেখ্য, ধারণা করা হয় প্রাচীনকাল থেকেই আসাম অঞ্চলের আদিবাসীদের রান্নাতে ও ওষুধ হিসেবে সাতকড়া ব্রবহার হয়ে আসছে। সাতকড়া গাছে সাধারণত: মধ্য মাঘ-মধ্য চৈত্র মাসে ফুল আসে এবং মধ্য কার্তিক-মধ্য পৌষ মাসে ফল পরিপক্ক হয়। প্রথমাবস্থায় ফল সবুজ থাকে, ফলের রঙ হলদে হতে থাকলে পরিপক্ক হয়।

* শীত তথা রবি মৌসুম শাক-সবজি চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে নিশ্চিত মৌসুম। দেশে এ সময় প্রচুর শাক-সবজি যেমনধ ফুল কপি, বাঁধা কপি, টমেষ্টটা, শিম, বেগুন, গাজর, শলগম, লাউ, কুমড়া, লাল শাক, মুলা প্রভৃতি) অনেকটা সহজেই চাষাবাদ করা যায়। শাক জাতীয় ফসল যেমন- লাল শাক, মুলা শাক, ধনে পাতা এ সময় একই ক্ষেতে উপর্যুপরি চাষাবাদ সম্ভব। একবার তোলা শেষ হলে জমি পরিপাটি করে আবার চাষাবাদ করা যায়। বার বার চাষাবাদের মাধ্যমে একই জমি থেকে অল্প সমষ্টয় অধিক উৎপাদন/লাভ পাওয়া যায়। তবে ভালো ফলনের জন্য শীতকালীন শাক-সবজির ক্ষেতের আগাছা দমন/পরিষ্কার, পনি সেচ, উপরি সার প্রয়োগ, প্রয়োজনে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া ও মাটির আস্তর ভেঙ্গে দেয়া কাজগুলো অবশ্যই সযত্নে করতে হবে। কথায় আছে, ‘যতনে রতন মিলে’। উল্লেখ্য, এ কথাটা শুধু শীতকালীন শাক-সবজির জন্য নয়, বরংকৃষির সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

* চালতা সব রকমের মাটিতেই চাষাবাদ করা যায়। প্রায় ছয় মাস পানি থাকে এমন মাটিতেও চালতা গাছ হতে দেখা যায়। বীজ থেকে জুন-জুলাই মাসে চারা উৎপাদন করা যায়। শাখা কলম থেকেও চারা উৎপাদন সম্ভব। বাণিজ্যিক/বাগান হিসেবে চাষাবাদের জন্য ৪০ ফুট দূরে দূরে বর্গ প্রণালীতে চারা রোপল করতে হয়। তেমন কোনো যত্ন-পরিচার্যা ছাড়াই চালতা গাছ বেড়ে ওঠে ও ফলন দেয়। চালতার ঘর সবুজ পত্ররাজি দেখতে চমৎকার। উল্লেখ্য, এক সময় বুনো ফল হিবেবে অবহেলিত হলেও দিন দিন চালতার চাহিদা বাড়ছে। গরমের সময় চালতা দিয়ে টক ডাল/মাছ রান্ন অনেকেরই প্রিয় খাবার। এ ছাড়া চালতা দিয়ে মুখরোচক আচার, চাটনী ও জেলি তৈরী হয়। ফল আসার কিছুদিন পর থেকেই চালতা খাওয়া যায়। এটা পুষ্টিকর এবং ওষুধীও।২৪ ব্লরশ্চষ ২০১০

লেখক, সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!