রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আব্দুর রশীদ লুলু

সর্বনাশা তামাক



অনেক গবেষক ধারণা করেন, ইতিহাসে বহুল আলোচিত মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকাল (১৫৫৬-১৬০৬ খ্রিঃ) সুদূর আমেরিকা থেকে সর্বনাশা তামাক চাষাবাদ ভারত উপমহাদেশে আসলেও বৃটিশ শাসনামলে এদেশে তা নিশ্চিত বিস্তার লাভ করে। তৎকালে বৃটেনের আবহাওয়া ছিল তামাক চাষাবাদের অনুপযুক্ত। অনেক চেষ্টার পর সেখানে যতটুকু তামাক উৎপাদিত হত, তার মান ছিল ভারতে উৎপাদিত তামাকের চেয়ে অত্যন্ত নিম্নমানের। খরচ ও চেষ্টা বেশী, অথচ মান খারাপ। সুতরাং সহজে উৎপাদিত ও গুণে-মানে সমৃদ্ধ তামাক চাষের জন্য বেনিয়া বৃটিশরা ভারতে জোর প্রচেষ্ট চালায়। তামাকের চাষাবাদ সম্প্রসারণ ও গবেষণার জন্য তারা তামাক বোর্ডও গঠন করে। এমনকি তামাক বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৩১ সালে উচ্চ বেতনে একজন বিশেষজ্ঞও নিয়োগ দেয়া হয়। যদিও তারা তখন জানতো, তামাকে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান নিকোটিনের পরিমাণ সর্বাখিক। উল্লেখ্য, পৃথিবীতে এখন পর্যপ্ত সিগারেট উৎপাদনে যুক্তরাজ্য প্রথম স্থানে।

বেনিয়া বৃটিশদের কাছে লাভটাই ছিল প্রধান বিষয়। তারা ভারতীয়দের অন্যান্য বিষয়ের সাথে তামাকের নেশাও আচ্ছন্ন করে রাখত সচেষ্ট ছিল। নিজেদের স্বার্থে তারাই তামাক চাষাবাদের সাথে সাথে ভারতীয়দের বিভিন্ন কৌশল ব্যাপক হারে ধুমপানে অভ্যস্ত করে তুলে। বৃটিশ আমলে ভারতে প্রচলিত একটি অন্যতম প্রবাদ হচ্ছে- দুধ বেচে তামাক খাওয়া। এ থেকে সহজেই ভারতীয়দের তামাকের নেশার ভয়াবহতা উপলব্ধি করা যায়।

যা হোক, সচেতন ব্যক্তি মাত্রই এখন জানার কথা- তামাকের চাষাবাদ ও ব্যবহার পৃথিবী জুড়েই পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকী স্বরূপ। সে প্রেক্ষিতে এখন বিশ্বের অনেক দেশে জনকন্যাণকামী সরকার তামাকের চাষাবাদ ও ব্যবহার সংকুচিত এমন কি বিলুপ্ত করার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। পরিবেশ, জন্যস্বাস্থ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত আমরা এমন প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশও এ প্রচেষ্টায় সামিল হোক এ প্রত্যাশা করি। কিন্তু দুঃখজনক হলো বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অধিক লাভের আশায় বহুজাতিক কোম্পানি বছর বছর তামাকের চাষাবাদ বিস্তার ঘটাচ্ছে। ফল কমছে খাদ্য উৎপাদন ব্যবহৃত কৃষি জমি যা সরাসরি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

তামাক চাষাবাদের সাথে সরাসরি জড়িতরা নিশ্চিত নানাভাবে শারীরিক ক্ষতির শিকার হোন। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একই জমিতে ক্রমাগত কয়েক বছর তামাক চাষ করা হলে, কৃষি জমি উর্বরতা হারায়। যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকী। আর তামাক থেকে উৎপাদিত বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া সরাসরি পরিবেশ দূষণ করছে। যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যস্ত ক্ষতিকর। উল্লেখ্য বিড়ি-সিগারেটের ন্যায় তামাক থেকে উৎপাদিত অন্যান্য সব কিছু (যেমন:- জর্দ্দা-তামাক পাতা) খাওয়াও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

অতএব, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের দাবী দেশ এবং পৃথিবী জুড়ে সর্বনাশা তামাকের চাষাবাদ নিয়ন্ত্রণ ও সংকোচনের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত করা হোক। আমরা মনে করি, সবার জন্য বাস উপযোগী সুন্দর ও ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার স্বার্থে সবারই এ দাবীর প্রতি ঐক্যমত পোষণ করা উচিত।

লেখক, সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!