লেখালেখিতে লেখার স্থান ও তারিখ থাকা দরকার কিনা এ বিষয়ে অনেকে অনেক মত পোষণ করেন। কেউ কেউ বলেন- এটা বড় ও প্রতিষ্ঠিত লেখকের কাজ, ছোট ও সাধারণ লেখকের জন্য এটা প্রয়োজন নয়। আমি মনে করি, বড়-ছোট কিংবা প্রতিষ্ঠিত-অপ্রতিষ্ঠিত সব লেখকের লেখার সাথে লেখার স্থান ও তারিখ থাকা জরুরি। আমার লেখালেখিতে শুরু থেকেই আমি যত্নে লেখার স্থান ও তারিখ লিখে আসছি। খুব কম লেখার স্থান ও তারিখ লিখিনি। আমার অনেক লেখা একটানে/এক বৈঠকে লেখা। আবার অনেক লেখা ছিঁড়ে ছিঁড়ে/খন্ড খন্ড করে অনেক স্থানে ও অনেক দিনে লিখেছি।
একটানে/একসাথে লেখায় লেখার স্থান ও তারিখ লিখে রাখতে সমস্যা নেই। কিন্ত মুশকিল হতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে একাধিক দিনে লেখায়। যেখানে ও যেদিন যে অংশ লিখতাম তার পাশে (সে অংশে) লেখার স্থান ও তারিখ লিখে রাখতাম। অন্তত: নিজের কাছে থাকা কপিটায়। কিন্ত কোথাও লেখাটা দিতে গেলে অসুবিধায় পড়তাম। লেখার মাঝে মাঝে স্থানের নাম ও তারিখ বেমানান ও হাস্যকর ঠেকে তাই প্রেরিত লেখায় তা বাদ দিতে হতো। পরবর্তীতে চিন্তা-ভাবনা করে ছিঁড়ে ছিঁড়ে লেখার একেবারে শেষ অংশটুকুতে লেখার স্থান ও তারিখ লিখে রাখতে শুরু করি। কোথাও লেখা প্রিন্টের জন্য দিতে গেলে হর-হামেশা আমি লেখার সাথে শুরু থেকে লেখার স্থান ও তারিখ দিয়ে আসছি।
অনেকের কাছে বোধ হয় বিষয়টা বেমানান ঠেকে, অনেকেই তা কেটে দেন। কেউ কেউ আবার লেখকের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেন। আমার হাত দিয়ে মুদ্রিত আমার প্রায় সব লেখায় আমি লেখার স্থান ও তারিখ মুদ্রণ করার চেষ্টা করি। এছাড়া আমার হাত দিয়ে মুদ্রিত অন্যান্যদের লেখায়ও আমি লেখার স্থান ও তারিখ রাখতে আগ্রহী। সেক্ষেত্রে অবশ্য সংশ্লিষ্ট লেখকের সহযোগিতারও প্রয়োজন হয় অর্থ্যাৎ লেখার সাথে লেখার স্থান ও তারিখ থাকতে হয়। উল্লেখ্য, আমি আমার সম্পাদিত প্রকাশনায় বরাবর সে চেষ্টা করে এসেছি।
হ্যাঁ আমি মনে করি, সব লেখকেরই লেখার সাথে লেখার স্থান ও তারিখ লিখে রাখা উচিত। যেমন ছোট-বড় কিংবা গুরুত্বপূর্ণ এবং অগুরুত্বপূর্ণ সব চিঠিপত্রে লেখার স্থান ও তারিখ উল্লেখ থাকে। একদিন হয়তো কোন প্রেক্ষাপটে কোন স্থানে এবং কোন তারিখে লেখাটি প্রাণ পেয়েছে তার মূল্যায়ন হতে পারে। লেখকের জীবন ও কাজ মূল্যায়নে বিষয় দুটি প্রয়োজনও হতে পারে। এছাড়া ঐতিহাসিক ও গবেষকদেরও কোনো সময় কাজে লাগলেও লাগতে পারে। বলা যায় না, কোন লেখক বা কোন লেখা কোন সময় মূল্যবান হয়ে উঠে। উল্লেখ্য, নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সব লেখায় (এবং চিঠিপত্রে) লেখার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে যথাযথভাবে।
লেখক, সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।