দেশের প্রায় সর্বত্র চাষাবাদ যোগ্য ডালিম এমন জায়গায় রোপণ করতে হবে যাতে বর্ষায় পানি জমে না। ছায়াযুক্ত স্থানে ডালিম গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফলন ভালো হয় না। কাজেই ডালিম চাষাবাদের জন্য প্রচুর আলো-বাতাস খেলে যায় এমন স্থান নির্বাচন করা উচিৎ। চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে জুন-জুলাই মাস।
ডালিম গাছ ঘন শাখা-প্রশাখাযুক্ত ঝোপালো গাছ। তাই একে নিয়মিত ছাটাই করা প্রয়োজন। সাধারণত: প্রধান কান্ডের সাথে ৪/৬টি সুস্থ-সবল-সুটাম শাখা রেখে বাকীগুলো ছাটাই করে দেয়া ভালো। বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদের জন্য ডালিমের চারা পূর্ব প্রস্তুত কৃত মাদায়/গর্তে ৫দ্ধ৫ মিটার দূরত্বে রোপণ করা উচিৎ। মাদা/গর্তের আকার হবে ৬০ দ্ধ ৬০ দ্ধ ৬০ সে.মিটার। শুষ্ক মওসুমে গাছে পানি দেয়া ছাড়াও ডালিম গাছের গোড়ায় যাতে আগাছা না জন্মে সেদিকে সযতœ দৃষ্টি রাখতে হবে। উল্লেখ্য, ডালিম গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলের গাছ। যে কোনো মাটিতে জন্মালেও ডালিম চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগি মাটি হলো বেলে দোআঁশ বা পলি মাটি। উপযুক্ত পরিচর্যায় ডালিম গাছ থেকে সারা বছরই ফল পাওয়া সম্ভব।
যে কোনো ধরণের আসবাব পত্র প্রস্তুত, যানবাহন তৈরী, বাদ্য যন্ত্র তৈরীসহ ঘর-গৃহস্থালীর সৌখিন সামগ্রী তৈরীতে ব্যবহৃত একটি উন্নতমানের কাঠের গাছ ‘পলোনিয়া।’ এর চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক। রোপণের ৮/১০ বছরের মধ্যে এ গাছ পূর্ণতা পায়। বলা হয়, পলোনিয়া গাছ দ্রুত বর্ধনশীল, টেকসই, দৃষ্টি নন্দন ও ওজনে হাল্কা অথচ তুলনামূলক ভাবে এর কাঠ দামী। সাধারণত: ১০ বছরে এর উচ্চতা দাঁড়ায় ৫০/৬০ ফুট। মজার ব্যাপার হলো, পলোনিয়া গাছ পূর্ণ বয়স্ক হওয়ার পর এ থেকে একটি চারা গজায়, তখন চারা গাছটি রেখে পূর্ণ বয়স্ক গাছটি অনায়াসে কেটে নেয়া যায়। এই প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে প্রায় একশত বছর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। অর্থাৎ একবার পলোনিয়া গাছ লাগালে সাধারণত: আর এ গাছ লাগানোর প্রয়োজন নেই। যে কোনো ধরণের মাটিতেই পলোনিয়া গাছ চাষাবাদ সম্ভব হলেও বেলে দো-আঁশ ও কাদা দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। উল্লেখ্য, বিশেষজ্ঞরা বরছেন, এ গাছ অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব। পর্যাপ্ত পরিমাণ পাতা সম্পন্ন এ গাছ চাষাবাদে বাতাস শীতল থাকার পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন লাভ সম্ভব।
সংশ্লিষ্টদের গবেষণা ও অভিজ্ঞতার আলোকে বলা হয়, ফজলি, গোপাল ভোগ, ল্যাংড়া, বারি আম- ১,২,৩ (আম্রপালি), বারি আম-৪, সুবর্ণ রেখা, মহানন্দ ও আশ্বিনা ভালো জাতের আম। এ গুলো বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ লাভজনক। এ ধরণের আম গাছের কলমের চারা নার্সারী থেকে সহজেই সংগ্রহ করা যায়। তবে ভবিষ্যতে ভালো ফলনের জন্য কলমের গাছের মুকুল ৩/৪ বছর পর্যন্ত ভেঙ্গে দিতে হবে। এছাড়া বাড়ন্ত গাছ যাতে দেড় থেকে দুই মিটার উঁচু হয় সেজন্য প্রয়োজন মতো গাছের ডাল ছাটাই করে দিতে হবে। জমি এবং আলো-বাতাসের সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য ছোট আকারের এ সব গাছ ঘন করে লাগানো যেতে পারে। ভালো ফলনের জন্য আম বাগানে মুকুল আসার সময় একবার এবং গুটি ছোট অবস্থায় একবার সেচ দেয়া যেতে পারে।
খুবই উপকারী ফল পেঁপে সব গৃহস্থের বাড়ীতে চাষাবাদ করা উচিৎ। ভাইরাস রোগ পেঁপের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত নার্সারী থেকে চারা সংগ্রহ করতে হবে। নিজে চারা উৎপাদন করতে হলেও দেখে শুনে ভাইরাস মুক্ত গাছের সুস্থ-সবল-আকর্ষনীয় ও সুস্বাদু ফল থেকে চারা উৎপাদন করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ সাথে সাথে তুলে ফেলতে হবে। সাধারণত: শীতের শেষে লাগানো চারা ভরা বর্ষার আগে সবল হয়ে ওঠে। বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদের জন্য দুই মিটার দূরত্বে চারা রোপণ করা যেতে পারে। পেঁপে গাছে ফল আসতে শুরু করলে বাঁশের/শক্ত কাঠের খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে, যাতে ফলের ভারে গাছ হেলে না পড়ে।
জনপ্রিয় ও উপকারী ফল পেয়ারা বীজ ও কলমের মাধ্যমে চাষাবাদ করা যায়। তবে অনেকে বলেন, পেয়ারার কলমের গাছ ভালো ফলন দেয়। আমাদের দেশের উন্নতমানের পেয়ারার কয়েকটি জাত হলো- বারি পেয়ারা-২ ও ৩, বাউ পেয়ারা- ১,২,৩,৪,৫ ও ৬ এবং স্বরূপকাটি। এ গুলো দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক এ কথা ইতিমধ্যে সফল চাষাবাদের মাধ্যমে অনেকেই প্রমাণ করেছেন। বাজারে কাটতিও ভালো। তবে এসব পেয়ারা চাষাবাদে অবশ্যই মরা-পচা ও অতিরিক্ত ডালপালা ছাটাই করতে হবে। প্রয়োজনে সেচ প্রদান করতে হবে। অতিরিক্ত ফলন হলে ফল পাতলা করে দিতে হবে এবং পোকার আক্রমণ প্রাথমিক অবস্থায় দমণ করতে হবে।
চাষাবাদ লাভজনক হওয়ায় পাম গাছ দেশে ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। বলা হয়, ফলদানকারী প্রতিটি পামওয়েল গাছ থেকে বছরে দশ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। উপযুক্ত পরিচর্যায় চারা লাগানোর ৩/৪ বছরেই পাম গাছ ফল দিতে শুরু করে। পাম গাছের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- সাধারণত: এ গাছ বন্যায় মরে না এবং ঝড়-তুফানে ভেঙ্গে পড়ে না। ফল থেকে ভোজ্য তেল ছাড়াও গাছ থেকে উন্নত মানের কাঠ হয় এবং ডালপালা পারটেক্স তৈরীতে কাজে লাগে। বলা বাহুল্য, পাম গাছের চাষাবাদের জন্য দেশের আবহাওয়া অত্যন্ত উপযোগী। বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ ছাড়াও পারিবারিক চাহিদা পূরণের জন্য বাড়ী-ঘরের আশে-পাশে, ক্ষেতের আইলে ও রাস্তার ধারে সহজেই ২/৪ টা পামগাছ লাগানো যায়।
গাছের ডাল পালা ছাটাই চাষাবাদে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে তাল, খেজুর ও নারকেলের পাতা/ডাল ছাটাইয়ের ক্ষেত্রে একটু সাবধানতা জরুরী। অনেকে ভালো ফলনের আশায় নির্বিচারে এসব গাছের পাতা/ডাল বছরে ২/১ বার ভালো করে ছাটাই করেন। এতে অনেক ক্ষেত্রে গাছের বাড়-বাড়তি ব্যাহত হয় এবং ফলন কমে যায়। তাল, খেজুর ও নারকেলের পাতা/ডাল ছাটাইয়ের বৈজ্ঞানিক নিয়ম হলো- শুধু শুকনো/মরা ও ঝুলে পড়া পাতা/ডাল কেটে পরিস্কার করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই সতেজ/তাজা পাতা কাটা যাবে না। এ ছাড়া লক্ষ্য রাখতে হবে পাতার গোড়ার জাল তুলতে গিয়ে যেন গাছের সাদা অংশ বের হয়ে না পড়ে। ২১ আশ্বিন ১৪১৮/ ০৬ অক্টোবর ২০১১
লেখক: আব্দুর রশীদ লুল, সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।