শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি – ১৭



 জাতীয় ফল কাঁঠালের উপকারিতা ও ব্যবহার অনেক। এ ফল চাষাবাদের জন্য দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ ও কাকুরে মাটি ভালো। তবে অম্লীয় মাটিতে কাঁঠালের বৃদ্ধি ভালো হয়। কাঁঠাল গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। এ জন্য বৃষ্টির পানি জমে না কিংবা বন্যায় পানি ওঠে না এমন জমি কাঁঠালের চাষাবাদের জন্য নির্বাচন করতে হয়। অঙ্গজ পদ্ধতিতে কাঁঠালের কলমের চারা উৎপাদন/তৈরী সম্ভব হলেও সাধারণত: বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই উন্নত জাতের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞরা বলেন, বিনে পয়সায় পেলেও খারাপ জাতের কাঁঠালের চারা লাগানো ঠিক হবে না।
কাঁঠালের চারা/কলম রোপণের উপযুক্ত সময় হলো মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য শ্রাবণ। তবে মেঘ-বৃষ্টি থাকলে আশ্বিন মাস পর্যন্ত রোপণ করা যেতে পারে। কাঁঠাল চাষাবাদে অন্যান্য বিষয়ের সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আগাছা দমন। কাঁঠাল গাছের গোড়ায়/বাগানে যাতে আগাছা না গজায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। অন্যথায় গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হবে এবং ফলবান গাছে উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে।

 দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতবর্ষ হলুদের আদি উৎপত্তিস্থল হলেও বহু যুগ ধরে বাংলাদেশে এর চাষাবাদ হচ্ছে। অন্যান্য মসলার মতো এর চাষাবাদের জন্যও দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি উপযুক্ত। হলুদ সারিবদ্ধভাবে রোপণ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ২৫ সে.মি এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৫০ সে.মি। বর্ষাকালে হলুদ রোপণ করতে হয় এবং শরতে গাছ শুকিয়ে যাওয়ার পর মাটি থেকে হলুদ তুলতে হয়। উল্লেখ্য, হলুদ মসলা হিসেবে দেশে খুবই জনপ্রিয় এবং এর বহুবিধ ব্যবহারও রয়েছে। এ ছাড়া, বিশেষজ্ঞরা বলেন, এর অনেক ঔষধীগুণও রয়েছে।

 চাষাবাদে উঁই পোকার উপদ্রব একটা বিশেষ সমস্যা হিসেবে প্রতিভাত হয়। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলেন, চারা লাগানোর পূর্বে প্রস্তুতকৃত প্রতি গর্তে বিরজেন্ট (৩ জি) ১০ গ্রাম বা লরসবান (১৫ জি) ৫ গ্রাম সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে গর্ত ভরাটের পর উপরের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এ রকম রাখার ২/৩ সপ্তাহ পর গর্তে চারা লাগালে উঁই পোকার উপদ্রব থেকে চারা রক্ষা পেতে পারে।

 ঔষধী গুণ সম্পন্ন বেল চাষাবাদের জন্য গুটি কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা যায়। এ ধরণের কলমের গাছে সহজেই ফল ধরে এবং মাতৃগুণ বজায় থাকে। এ ছাড়া আরেকটা সহজ পদ্ধতিতে বেলের চারা উৎপাদন করা যায়। সেটা হলো খরার সময় বেল গাছের গোড়ার মাটি কুপিয়ে দেয়া। এতে বেল গাছের শিকড় যত্র-তত্র কাটা পড়ে এবং সেই কাটা শিকড়ে চারা গজায়। এই গজানো চারা বর্ষায় শিকড়সহ সযতেœ তুলে নিয়ে সহজেই অন্য জায়গায় চাষাবাদ করা যায়। উল্লেখ্য, খরার সময় গাছের গোড়া কুপিয়ে নিয়ে পানি সেচ দিলে পানি সহজেই গাছের শিকড়ে পৌঁছে।

 ফল ফেটে যাওয়া চাষাবাদে একটি বিরাট সমস্যা। এতে কৃষক/কৃষাণী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত: ফল তোলার অর্থাৎ পরিপক্ক হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে ফেটে যায়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রায় সব ধরণের ফল ফাটলেও লিচু এবং ডালিম বেশী ফাটে। বিশেষজ্ঞরা এর অনেক গুলো কারণ চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হলো- আবহাওয়া জনিত, মাটির আর্দ্রতা জনিত, হরমোন জনিত, আঘাত জনিত, পুষ্টির অভাব জনিত, পোকা-মাকড়ের আক্রমণজনিত। এ ক্ষেত্রে ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে অর্থাৎ এর প্রতিকার করতে অবশ্যই কৃষি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এর নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করে প্রতিকার করা অবশ্যই কর্তব্য। উল্লেখ্য, বিশেষজ্ঞের অভাবে অভিজ্ঞ চাষীর পরামর্শক্রমে ফল কাটার প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

 পুষ্টিকর ফল ডালিম চাষাবাদে পরিচর্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিচর্যার অভাবে অনেক সময় আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। আগাছা দমণ, সময় মতো ছাঁটাই, পানি সেচ ছাড়াও পরিচর্যার ক্ষেত্রে ছোট ছোট কাঁচা ডালিমের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হয়। অনেক সময় ছোট ছোট কাঁচা ডালিমের গায়ে কালো দাগ পড়ে। সেগুলো সযতেœ ধারালো কাঁচি দিয়ে তুলে দিতে হয়। অন্যথায় এ কালো দাগ থেকে ডালিমে পচন ধরে। এ ছাড়া ফল ছিদ্রকারী পোকায় আক্রান্ত ফল ফেড়ে দূরে নিয়ে বিনষ্ট করতে হবে।

 শীতকালীন প্রধান সবজি শিমের চাষাবাদের জন্য সাধারণত: শ্রাবণ থেকে ভাদ্র মাসে বীজ, রোপণ করতে হয়। যদিও আজ-কাল সহজেই বাজারে শিমের বীজ পাওয়া যায়, তবু গ্রামাঞ্চলে এখনো অনেক কৃষাণ-কৃষাণী ভালো ও উন্নতমানের শিম থেকে নিজেরা সযতেœ সংরক্ষণ করেন এবং পরবর্তীতে তা নিজেরা চাষাবাদ করেন (এবং পাড়া-পড়শীকে চাষাবাদের জন্য বিতরণ করেন)। এ ক্ষেত্রে অর্থাৎ নিজেদের সংরক্ষিত বীজ রোপণের জন্য সংশ্লিষ্ট গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, আগের বছরের সংরক্ষিত বীজ প্রথমাবস্থায় রোদে ভালো করে শুকিয়ে এক রাত ঘরে রেখে ঠান্ডা করে লাগানো উচিৎ। এতে বীজের অঙ্করোদগম ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি বীজে থাকা নানা রকম রোগ-জীবাণু নষ্ট হবে। ২৮ আশ্বিন ১৪১৮/ ১৩ অক্টোবর ২০১১

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!