ঠিক কবে থেকে কবি-সাংবাদিক-সম্পাদক মোহাম্মদ নওয়াব আলীর সাথে আমার আলাপ পরিচয় এখন মনে করতে পারছি না। খুব সম্ভব ২০০৪ সাল থেকে আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান আনোয়ারা হোমিও হলের প্রকাশনা ‘আনোয়ারা’ (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)-কে কেন্দ্র করে তাঁর বাসিয়া (মাসিক প্রকাশনা) অফিসে যাতায়াত ও ক্রমে ঘনিষ্ঠতা। তাঁর সম্পাদিত ‘বাসিয়া’ তে আমার কয়েকটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে এবং আমার সম্পাদিত ‘আনোয়ারা’র খবর গিয়েছে। এছাড়া তাঁর প্রকাশনীর কয়েকটা প্রকাশনাও তিনি আমাদের দিয়েছেন, যেগুলো যত্নে আমরা রাজীব স্মৃতি গ্রন্থাগারে তুলে রেখেছি, আমাদের অনেক পাঠক সেগুলো ঘাটাঘাটি করছেন। আশা করা হচ্ছে, বহুদিন বইগুলো গ্রন্থাগারে থেকে আমাদের প্রতি তাঁর আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।
অনেক কাজের কাজী মোহাম্মদ নওয়াব আলী আমাদের মতো ডিএইচএমএস (ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারি, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড, ঢাকা) ডিগ্রীধারী, কিন্ত তিনি হোমিওপ্যাথি প্র্যাকটিস করেন না। তিনি চলে গেছেন প্রকাশনা ব্যবসায়। পাশাপাশি চলছে লেখালেখি, সাংবাদিকতা ও সম্পাদনা। অবশ্য মাঝে মাঝে তাঁর কন্ঠে আক্ষেপ শুনি- হোমিওপ্যাথিতে থাকলে বোধ হয় ভালো করতাম। তবে আমার মনে হয়, প্রকাশনায়ও তিনি খারাপ করেননি। তার বাসিয়া প্রকাশনী থেকে দেশ-বিদেশের নবীন-তরুণ লেখকদের পাশাপাশি দেশের অনেক প্রতিষ্ঠিত ও প্রবীণ লেখকের বইও প্রকাশিত হয়েছে। অনেকগুলো বই ভালো বাজারও পেয়েছে। আশার কথা, গুণগত মান সম্পন্ন বাসিয়া প্রকাশনীর বই নিয়ে তিনি সিলেটের সবক’টি বইমেলায় অংশগ্রহণ ছাড়াও বিগত ২/৩ বছর যাবৎ ঢাকায় বাংলা একাডেমির বই মেলায়ও অংশগ্রহণ করছেন।
আমার ছেলে অনলাইন দৈনিক স্বপ্নীল সিলেট-এর সম্পাদক ও তরুণ লেখক আনিসুল আলম নাহিদকে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করেন। অনেকটা নিজের ছেলের মতো দেখেন। নিজ থেকে অনেক সময় তার খোঁজ-খবর নেন। লেখালেখি ও সম্পাদনায় উৎসাহিত করেন। বাসিয়া প্রকাশনী থেকে তার ২/১ টা বই প্রকাশনার কথাও সম্প্রতি বলাবলি করছেন। আমাদের প্রতি তার এমনই আন্তরিকতা (এবং খুব সম্ভব সব লেখক-সাংবাদিকদের প্রতিও) মুগ্ধ করে। তার সম্পাদিত মাসিক বাসিয়াতে আমার ছেলের পরিচালিত আনোয়ারা ফাউন্ডেশন ও রাজীব স্মৃতি গ্রন্থাগারের সংবাদ ও লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া আমার ছেলের সম্পাদিত কৃষি বিষয়ক ছোটকাগজ চাষাবাদ-এর লেখা আহবান ও আলোচনা-সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। এ সুযোগে তার প্রতি আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সেই সাথে আশা করছি, আমাদের প্রতি তাঁর এই সহদয় আন্তরিকতা সারা জীবন অটুট থাকবে।
১৯৭১ সালে ৩১ ডিসেম্বর সিলেটের দক্ষিণ সুরমার গুপ্তর গাঁও-এ জন্মগ্রহণকারী মোহাম্মদ নওয়াব আলী কর্মব্যস্ত ও প্রাণবান মানুষ। সুযোগ পেলেই আমি ও আমার ছেলে তার সান্নিধ্য উপভোগ করি। তিনিও কর্মব্যস্ততার মধ্যে একদিন আনোয়ারা ফাউন্ডেশন পরিচালিত আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান রাজীব স্মৃতি গ্রন্থাগার সবান্ধব ঘুরে গিয়েছেন। ধারণা করি, তার স্ত্রী মিসেস শাহানারা আক্তারও তার মতো করিৎকর্মা, নিশ্চয় মোহাম্মদ নওয়াব আলীর কর্মব্যস্ত প্রতিষ্ঠিত জীবনের নেপথ্যে তার অনেক ভূমিকা রয়েছে। তাদের ৩ ছেলে-মেয়ে- নাবিদ, তাসনিম ও নাফিস। নাবিদের সাথে বাসিয়া অফিসে আমার আলাপ হয়েছে। পড়ালেখার ফাঁকে সে পিতার কাজে সহযোগিতা করছে। চমৎকার ছেলে, আমার বিশ্বাস সময়ে সে পিতার যোগ্য উত্তরসূরী হবে।
বৈচিত্র পিয়াসী মোহাম্মদ নওয়াব আলীর লেখালেখির ক্ষেত্রে একটা বড় কাজ “দক্ষিণ সুরমার ইতিহাস ও ঐতিহ্য”। আমার বিশ্বাস, এই বইটি তাকে লেখালেখির ক্ষেত্রে স্মরণীয় করে রাখবে। তার অন্যান্য বইগুলোও আলোচিত। এছাড়া তার সম্পাদিত বই ও ছোটকাগজও পাঠককে টেনেছে। আমার সম্পাদিত শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা আনোয়ারায়ও ও তার কয়েকটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে সিগারেট তথা তামাক নিয়ে তাঁর ছড়া নিকোটিন নিকোটিন ‘আনোয়ারা’য় প্রকাশিত হলে অনেক পাঠক তা মুখে মুখে অনেকদিন আওড়িয়েছেন। ছড়া-কবিতার পাশাপাশি তিনি গানও লিখেছেন। অনেকদিন ধরে তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার। অনেক সংগঠনের সাথেও তিনি সম্পৃক্ত। আফলাতুন্নেছা-পীর বক্স পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও তিনি।
আমরা আনোয়ারা পরিবারের পক্ষ থেকে সর্বান্ত:করণে সাংবাদিক-লেখক-সম্পাদক-সংগঠক মোহাম্মদ নওয়াব আলীর সুস্থ-শতায়ু ও কর্মবহুল জীবন কামনা করি।
লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।