মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি – ৩০



* সুপরিচিত সবজি বেগুন শীতকালীন চাষাবাদের জন্য মধ্য শ্রাবণ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এবং বর্ষাকালীন চাষাবাদের জন্য ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজ বপণ করতে হয়। বালি, কমপোস্ট ও মাটি সমপরিমাণে মিশিয়ে বীজতলা তৈরি করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। বীজ গজানোর ৮/১০ দিন পর ছোট ছোট চারা তুলে সযত্নে পর্যাপ্ত ফাঁক রেখে দ্বিতীয় বীজতলায় রোপণ করতে হয়। চারার বয়স মাস খানেক হলে মূল জমিতে নিয়ম মাফিক রোপণ করতে হবে। চারার শিকড় যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়ে সেদিকে সযত্নে দৃষ্টি রেখে কাঠির সাহায্যে বীজতলা থেকে চারা তোলা ভালো বলে সংশি¬ষ্ট মহল মনে করেন। উল্লেখ্য, চারা অবশ্যই সবল-সতেজ হতে হবে। দূর্বল ও রুগ্ন চারা মূল জমিতে লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে, অন্যথায় আশানুরূপ ফলন পাওয়ার আশা করা যাবে না। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য মূল জমিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৭৫ সে.মি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৬০ সে.মি। দোআঁশ ও বেলে দোঁআশ মাটিতে বেগুনের চাষাবাদ সবচেয়ে ভালো হয়। এ ছাড়া ভালো ফসলের জন্য জমি গভীরভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝরে করে নিতে হয়।

* তরমুজ একটি মৌসুমি ফল হলেও এর ভেষজ গুণও অনেক। অনেক গবেষকদের ধারণা, তরমুজের আদি উৎস দক্ষিণ আফ্রিকা। চাষাবাদের ব্যাপকতার মাধ্যমে এখন তা দেশের নিজস্ব মৌসুমে ফলে পরিণত হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলে এর চাষাবাদ ভালো হয়ে থাকে। এ ছাড়া ভালো উৎপাদনের জন্য প্রচুর সূর্যালোক ও শুকনো আবহাওয়া প্রয়োজন। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, পাবনা, যশোর ও নাটোরে চাষাবাদ বেশি হলেও কম-বেশি সারা দেশে এর চাষাবাদ সম্ভব। উল্লেখ্য, তরমুজ চাষাবাদের জন্য এক সময় বিখ্যাত ছিল চট্টগ্রামের পতেঙ্গা। তরমুজের অনেকগুলো প্রজাতি রয়েছে। তরমুজের বাণিজ্যিক চাষাবাদ লাভজনক হওয়ায় এখন অনেকেই এর চাষে ঝুঁকছেন।

* প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়া সাধারণত বৈশাখী, বর্ষাতি ও মাঘী এ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। চাষাবাদের জন্য বৈশাখী কুমড়ার বীজ মাঘ মাসে, বর্ষাতি কুমড়ার বীজ বৈশাখ মাসে এবং মাঘী কুমড়ার বীজ শ্রাবণ মাসে বপণ করতে হয়। সাধারণত মিষ্টি কুমড়া মাদায় লাগাতে হয়। মাদার জন্য সাধারণত ৩-৪ মিটার দূরত্বে ৮০-১০০ ঘন সে.মি. আকারের গর্ত করতে হয়। প্রতি মাদায় ২/৩টি বীজ বপণ করা যেতে পারে। বৈশাখী কুমড়া মাটিতেই হয়। বর্ষাতী ও মাঘী মিষ্টি কুমড়ার জন্য মাচার ব্যবস্থা করতে হয়। গাছের লতাপাতা বেশি হলে কিছু ছেঁটে দেয়া ভালো।

* গোলাপ ফুলের চাষাবাদে ডালপালা ছাঁটাইকরণ (Prunning) একটি অন্যতম বিষয়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গোলাপের নতুন ডালপালায় বেশি ফুল হয়। বেশি ফুল পেতে তাই পুরাতন ও রোগাক্রান্ত ডালপালা ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে গোলাপ গাছের গঠন কাঠামো সুন্দর ও সুদৃঢ় হয়। একই সাথে অধিক ও বড় আকারের ফুল পাওয়া যায়। এছাড়া অনেক সময় ফুলের কুঁড়িও ছাঁটাই করে দিতে হয়। অনেক সময় গাছ ছাঁটাইয়ের পর মূল গাছের ডালে অনেক পত্রমুকুল ও ফুলকুঁড়ি জন্মায়। এর সবগুলো ফুটতে দিলে ফুল আকারে বড় হয় না। এমতাবস্থায় বড় ফুলের জন্য আসল কুঁড়ি রেখে পাশের কুঁড়িগুলো ধারালো চাকু দিয়ে কেটে ফেলা ভালো।

* পতিত পুকুর/জলাশয়ে সহজেই পাবদা ও গুলশা (টেংরা) মাছ চাষ করা যেতে পারে। যেখানে ৭-৮ মাস পানি থাকে এ রকম পতিত পুকুর/জলাশয়ে পানির গভীরতা ১-১.৫ মিটার হলে ভালো হয়। অন্যান্য মাছ চাষের ন্যায় পুকুর ও পুকুরের পাড় পরিস্কার করে নিয়মমাফিক চুন ও সার প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত চুন প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর সার প্রয়োগ করতে হয়। সার প্রয়োগের ৩-৪ দিন পর পুকুর/জলাশয়ে পোনা মজুদ করা হয়। ৩-৫ গ্রাম ওজনের পাবদা ও গুলশার পোনা শতক প্রতি ২৫০টি হারে মজুদ করা যেতে পারে। ভর দুপুরে/গরমের সময় পোনা না ছেড়ে সকালে বা বিকালে যখন পানি স্বাভাবিক ঠান্ডা থাকে তখন পোনা ছাড়লে পোনা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। উপযুক্ত পরিচর্যায় পাবদা মাছ ৭-৮ মাসে ৩০-৩৫ গ্রাম এবং গুলশা মাছ ৬ মাসে ৪০-৪৫ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, পাবদা ও গুলশা মাছ খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। সাধারণত সবার কাছেই এই মাছ দুটো প্রিয়। সংগত কারণে বাজারে এর চাহিদাও প্রচুর। এ গুলোর চাষ তাই লাভজনকও।

* জনপ্রিয়, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু পাতা সবজি পালংশাক চাষাবাদের জন্য দোআঁশ উর্বর মাটি বেশি উপযোগি হলেও এঁটেল ও বেলে দোআঁশ মাটিতেও চাষাবাদ করা যায়। এর জন্য চাষ ও মই দিয়ে মাটি মিহি করে তৈরি করতে হয়। শীতকালে এর চাষ করা হয়। এজন্য সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি মাসে বীজ বপণ করতে হয়। বপণের পূর্বে বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। বীজ বপণের পর অঙ্কুরোদগমে সাধারণত ৭-৮ দিন সময় লাগে। সাধারণ অবস্থায় চাষাবাদে প্রতি শতকে ১১৭ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। উপর্যুক্ত পরিচর্যায় বীজ বপণের একমাস পর থেকে গাছে ফুল না আসার পূর্ব পর্যন্ত পালংশাক সংগ্রহ করা যায়।
স ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ কলা চাষাবাদের জন্য উর্বর দোআঁশ মাটি ভালো। প্রচুর সূর্য্যালোক পড়ে এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধা সম্বলিত জমি কলা চাষাবাদের জন্য নির্বাচন করতে হয়। ভালো ফলনের জন্য দুই মিটার দূরে দূরে কলার চারা রোপণ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে গর্তের আকার হবে ৫০ সে.মি দ্ধ ৫০ সে.মি দ্ধ ৫০ সে.মি। এ ছাড়া চারা রোপণের এক মাস পূর্বে গর্ত তৈরি করে তাতে নিয়ম মাফিক সার প্রয়োগ করে রাখতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর কলা গাছে পানি সেচে ভালো ফলন পাওয়া যায়। কলা গাছে ছড়া আসার সাথে সাথে খুঁটি (বাঁশ/গাছের ডাল দিয়ে) বেঁধে দেয়া উচিৎ। অন্যথায় বাতাসে গাছ ভেঙ্গে পড়বে। যা চাষাবাদে ক্ষতিকর।

* চাল কুমড়ার চাষাবাদের জন্য দোআঁশ মাটি ভালো। তবে উপযুক্ত পরিচর্যায় কাদা মাটি ছাড়া অন্য যে কোনো মাটিতেই তা উৎপাদন করা যায়। এর চাষের সময় ফেব্রুয়ারি-মে মাস। দেশে এ কুমড়ার অনুমোদিত কোনো জাত নেই। বারি উদ্ভাবিত বারি চাল কুমড়া-১ জাতটি দেশে সব অঞ্চলে চাষাবাদ করা যেতে পারে। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে কুঁড়ে ঘরের আশেপাশে বীজ রোপণ করে এ কুমড়ার লতা চালে উঠিয়ে দিয়ে চাষাবাদ করা হয় (সম্ভবত এ কারণে এ কুমড়ার এমন নামকরণ)। তবে মাচায়ও এর ফলন ভালো হয়।

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী অনিয়মিত প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!