বৃটেনের রাজার রাজ্যাভিষেকের বছর টাওয়ার হ্যামলেটস বারা কাউন্সিলের মর্যাদাকর সিভিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মানবিক ও সেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত কবি সাংবাদিক ও সংগঠক আনোয়ারুল ইসলাম অভি। মঙ্গলবার (২ মে) বিকেলে পূর্ব লণ্ডনের দ্যা আর্টস প্যাভিলিয়নে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের উদ্যোগে বারার স্পিকার কাউন্সিলার শাফি আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে এই অ্যাওয়ার্ড প্রধান করেন।
শুরুতে ভূমিকা বক্তব্য রাখেন স্পিকার কাউন্সিলার শাফি আহমেদ, ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার মায়ুম তালুকদার, ইন্টারমিন চিফ এক্সিকিউটিভ স্টিপেন হ্যালসি। সিভিক অ্যাওয়ার্ডের রীতি অনুযায়ী অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত ব্যক্তি, পরিবারের কয়েকজন, অ্যাওয়ার্ডের নমিনেটর, নির্বাচিত কাউন্সিলার এবং ডেমোক্রেটিক সার্ভিস এর কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
টাওয়ার হ্যামলেটস বারা কাউন্সিলের সিভিক অ্যাওয়ার্ড একটি সম্মানজনক অ্যাওয়ার্ড। প্রতি বছর একটি নিরপেক্ষ বোর্ডের মাধ্যমে সামাজিক,সাংস্কৃতিক, সাংবাদিকতা এবং চ্যারিটি কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এবার মোট ১২জনকে সিভিক সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়।
লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বারার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম অভি দীর্ঘ দুই যুগ থেকে কমিউনিটিতে বিভিন্ন মানবিক ও চ্যারিটি কাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতা ও সাংগঠনিক ভাবে কাজ করে আসছেন। মানবিক,সেবা ও চ্যারিটি কাজে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে সিভিক অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ এ সম্মানীত করা হয়।
আনোয়ারুল ইসলাম অভি ৫২বাংলা (52banglatv) ও ওয়েভ পোর্টাল ৫২বাংলাটিভি ডটকম (52banglatv.com) এর সম্পাদক ও পরিচালক। একজন কবি ও সৃজনশীল লেখক হিসাবেও পাঠকের কাছে তিনি পরিচিতি। তার প্রকাশিত বই তিনটি। তিনি শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক ওয়েভজিন পলল ডটকো ডটইউকে এর সম্পাদক।
লণ্ডনের প্রায় এক দশক হেলথ এন্ড সোশ্যাল কেয়ার এর একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে টিম লীডার হিসাবে কাজ করেন। যেখানে ইক্যুালিটি এন্ড ডাইভাসিটি, রেইজিন কনসার্ণ এন্ড হুইসেল ব্লোইং ,ফাস্ট এইড এওয়ারনেস, প্রফেশনাল বাওয়ান্ডরিস এন্ড কনফিডেনশিয়ালিটি , আনডারস্টেডিং দ্যা অরগানাইজেশন ইত্যাদি বিষয়ে স্টাফ প্রশিক্ষক হিসাবে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।বাংলাদেশে তিনি জাতীয় দৈনিক বাংলাবাজার, দৈনিক আজকের সিলেট এর প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেছেন। ছাত্রাবস্থা থেকে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র এর বইপড়া আন্দোলনের একজন একনিষ্ট কর্মী সহ নানা মানবিক কাজে আলোকিত চিহ্ন রেখেছেন।
তিনি দীর্ঘদিন থেকে যুক্তরাজ্যের এনএইচএস ব্লাড ডোনেশন এবং সেইভ দ্যা চিলড্রেন, লন্ডন এয়ার এম্বুলেন্স –চ্যারিটি ডোনার হিসাবে মানবিক কাজে সম্পৃক্ত। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষদের মানবিক কাজে অনুপ্রাতি ও সম্পৃক্ত করার সেচ্ছাসেবী কাজ ধারাবাহিকভাবে করছেন।
ব্রিটিশ –বাংলাদেশী প্রজন্মদের সমন্বয়ে বাংলাদেশে ‘সবুজে হাসি সবুজে বাঁচি’[Let’s Smile in Green Lets Live in Green ] প্রকল্পের মাধ্যমে অস্বচ্ছল পরিবার ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফলজ ও ঔষধি বৃক্ষরোপন ও ক্লাইমেট চেঞ্জ বিষয়ে সচেতনতা ক্যাম্পেইন কার্যক্রম পরিচলনা করছেন। এই প্রজেক্টে ব্রিটিশ-বাংলাদেশী প্রজন্মের ৫০জনেরও বেশী সম্পৃক্ত রয়েছেন।
আনোয়ারুল ইসলাম অভি প্রায় এক যুগ থেকে বৃটেনে মুসলমানদের দুই ধর্মীয় উৎসবে ঈদের ছুটির দাবী নিয়ে লেখালেখি করছেন। ২০২২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে WE WANT EID HOLLYDAY IN UK ক্যাম্পেইন এর সমন্বয়ক এর দায়িত্বে থেকে কমিউনিটিতে এওয়ারনেস এর কাজ করছেন।যা ইতিমধ্যে কমিউনিটিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই ক্যাম্পেইন থেকে যুক্তরাজ্যে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবেও ছুটির দাবী করা হচ্ছে।
তিনি ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত- শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংগঠন পলল এর ফাউন্ডার। পলল প্রতিশ্রুতিশীল, মেধাবী চিত্রশিল্পী, লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠকদের নিয়ে-যুক্তরাজ্যে তাদের মৌলিক ও সৃজনশীল কাজগুলো চর্চায় নানাভাবে সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণামূলক কাজ করে।বিশেষ করে মাল্টিকালচারাল লন্ডনের ডাইভার্স কমিউনিটিতে বৃহতভাবে মূল্যায়ণের লক্ষ্যে লন্ডনে প্রতিভাবান চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্ম, লেখকদের বই প্রদর্শন এবং বাংলাদেশের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যিক শিল্পকর্ম প্রদর্শন ও অনুপ্রেরণামূলক কাজ করে।
আনোয়ারুল ইসলাম অভি সমছুল- করিমা ফাউন্ডেশন প্রধান নির্বাহি। অন্ধকারে আলো শ্লোগাণ নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে সমছুল-করিমা ফাউন্ডেশন বিভিন্ন মানবিক , শিক্ষা- শিক্ষক সম্পর্কিত এবং সমাজসেবামূলক ধারাবাহিক নিজস্ব প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করছে। ফাউন্ডেশনের প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিশ্রুতিশীল লেখকদের বই প্রকাশ, ‘সবুজে হাসি সবুজে বাঁচি’- প্রকল্পের মাধ্যমে অস্বচ্ছল পরিবার ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফলদ ও ঔষধি বৃক্ষ রোপন, সৃজনশীল প্রকল্প- ’সৃষ্টি ঘর’ এর আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, প্রবীন অসহায়দের জন্য –’প্রশান্তির হাসি,’ ‘মানবিক স্বজন’ এর আওতায় নিভৃতে বঞ্চিত ও দুস্থ মানুষের ঘরে খাবার সামগ্রী বিতরণ এবং পবিত্র রমজান মাসে সুবিধা বঞ্চিত ও নিন্মবিত্ত পরিবারের জন্য ‘হাসি মুখে ইফতার’ এবং কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ‘আমার স্বপ্ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে তৃণমূলে কাজ করছে। মূলত সবগুলো কাজে সাধ্যমতো ফাউন্ডেশন এর একটা সমাজবান্ধব আদর্শিক চিন্তা- চেতনা ও অনুপ্রেরণার স্ফোরণের প্রত্যয় থাকে।
আনোয়ারুল ইসলাম অভি শিক্ষকদের কল্যাণে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত- ‘টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন (T ALI SIR FOUNDATION) এর অন্যতম ফাউন্ডার। মূলত ফাউন্ডেশনটি বাংলাদেশে অবসর প্রাপ্ত শিক্ষকদের সহায়তা ও সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত।প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, অসুস্থদের সহায়তায় কাজ করছে ফাউন্ডেশনটি। প্রতি বছর ‘টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক’ হিসাবে ৫জন অবসরপ্রাপ্ত গুণী শিক্ষককে সম্মাননা এবং ২০জনকে বিশেষ সম্মাননা পদক দিয়ে সম্মানীত করা হয়।ট্রিস ফর সিটিস (Trees for Cities) ব্রিটেনে গত ৩০ বছর ধরে পরিবেশ দূষনের বিরুদ্ধে গাছ লাগিয়ে পরিবেশ বান্ধব অনুকরণীয় কাজ করছে। আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটি বিশ্বের ২১টি দেশের ১৬৮টি শহরে পরিচালিত হচ্ছে।বৃক্ষরোপণ, জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং শহুরে ও কমিউনিটি বনায়ন সম্প্রসারণ ও পরিচর্যা সহ সামগ্রিক সবুজায়নের কাজের জন্য টাওয়ার হ্যামলেটসকে টানা দ্বিতীয় বছরের জন্য ‘বিশ্বের বৃক্ষের শহর’ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আনোয়ারুল ইসলাম অভি ২০২৩ সাল থেকে ট্রিস ফর সিটিস এর স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ শুরু করেছেন।
যুক্তরাজ্যে বাংলাভাষিদের প্রাচীন সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংগঠন সংহতি সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে- ‘সংহতি কবিতা উৎসব‘ ও যুক্তরাজ্যবাসী কবি লেখকদের প্রকাশিত বই নিয়ে সংহতির ‘লণ্ডন বইমেলা‘ – সাংগঠনিক উদ্যোগে আনোয়ারুল ইসলাম অভির অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন সংগঠনের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আনোয়ারুল ইসলাম অভি সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কমলা-আনারসখ্যাত ঐতিহ্যবাহি অঞ্চল জলঢুপ এর ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি চর্চার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে নিজ উদোগে প্রতিষ্ঠা করেন নয়ন সাহিত্য পরিষদ। এবং ফাউন্ডার সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালনের সাথে সংগঠনের উদ্যোগে তার সম্পাদনায় প্রকাশ করেন জলঢুপ অঞ্চলের একটি গবেষণামূলক তথ্যগ্রন্থ – জলঢুপ ইতিহাস ঐতিহ্য।
জলঢুপ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে এর ফাউন্ডার সেক্রেটারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংগঠনটি নিজ অঞ্চরের শিক্ষা ও আর্থ সামাজিক কল্যাণ এবং যুক্তরাজ্যে নবীন – প্রবীনদের মধ্যে সামাজিক ও মানবিক বন্ধন তৈরীতে একটি ব্রিজ হিসাবে কাজ করছে।
আনোয়ারুল ইসলাম অভির দেশের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার জলঢুপ (বড়বাড়ি)। সহধর্মিণী ও তিন মেয়ে নিয়ে লণ্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বারায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তার বাবা প্রয়াত অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সমছুল ইসলাম ও মা করিমা খানম। চার বোন ও দুই মিলে নিডি মানুষের কল্যাণে আদর্শ শিক্ষক ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব বাবা সমছুল ইসলাম ও মা করিমা ইসলামের নামে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত –‘সমছুল -করিমা ফাউন্ডেশন’ বিশেষ করে শিক্ষা ও শিক্ষক বান্ধব কাজের মাধ্যমে সমাজে আলো ছড়াচ্ছে। অন্ধকারে আলো শ্লোগানে কাজ করা ফাউন্ডেশনের তিনি প্রধান নির্বাহি।