বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

রাজা তৃতীয় চার্লসের ঐতিহাসিক অভিষেক



রাজা তৃতীয় চার্লস (চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ) আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করেছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাণীর মৃত্যুর পর তাঁর বড় ছেলে চার্লস যুক্তরাজ্যসহ ১৬টি দেশের রাজা হন। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের ৭০ বছর পর মুকুট পরলেন রাজা তৃতীয় চার্লস। আর তাতে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্র। ৭০ বছর পর নতুন রাজা পেয়েছে সে দেশের মানুষ। শনিবার (৬ মে) জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাঁর ঐতিহাসিক এই অভিষেক হয়েছে।

একই দিনে রাণী (কুইন কনসোর্ট) হিসেবে অভিষেক হয়েছে রাজা তৃতীয় চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলারও (ক্যামিলা রোজম্যারি সান্ড)। যুক্তরাজ্যের সময় দুপুর ঠিক ১২টা ২ মিনিটে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাজা চার্লসের মাথায় নিখাদ সোনার সেইন্ট এডওয়ার্ড মুকুট পরিয়ে দেন ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি। এই মুকুটকে যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্রের পবিত্র ও প্রাচীন স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে দেখা হয়ে থাকে।

এদিকে রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠান উপলক্ষে পুরো বৃটেনে সাজ সাজ রব পড়ে যায় আগে থেকেই। রাস্তায় রাস্তায় মানুষ উল্লাস করতে থাকেন। বাকিংহাম রাজপ্রাসাদ থেকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে যাওয়ার পথে রাজা ও রানীকে অভিবাদন জানান তারা। জাতীয় পতাকা দুলিয়ে, উল্লাস করে সেলিব্রেট করেন।

ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ রাজার মাথায় সেইন্ট এডওয়ার্ড মুকুট পরিয়ে দেওয়ার পর উপস্থিত লোকজনের মধ্য থেকে সমস্বরে আওয়াজ ওঠে, ‘ঈশ্বর, রাজাকে রক্ষা করুন।’ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার এই আবহের মধ্যেই বেজে ওঠে ট্রাম্পেট (বাদ্যযন্ত্র)। অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে ১৩টি স্থান থেকে রাজাকে দেওয়া হয় গান স্যালুট।

মুকুট পরিয়ে দেওয়ার পর শুরু হয় সিংহাসনে আরোহণের পর্ব। ক্যান্টারবুরি ও ইয়র্কের আর্চবিশপ এবং তাঁদের সহকারীরা রাজাকে সিংহাসনের দিকে নিয়ে যান। এরপর সিংহাসনে বসেন রাজা তৃতীয় চার্লস। মাথায় মুকুট পরিয়ে দেওয়া ও সিংহাসনে আরোহণের আনুষ্ঠানিকতা ছিল রাজ্যাভিষেকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও মূল অংশ। যুক্তরাজ্যের যেকোনো রাজা বা রানী জীবনে একবারই এই মুকুট পরার সুযোগ পান। প্রথামাফিক রাজা চার্লস ঘণ্টাখানেক মুকুট পরে ছিলেন।

সর্বশেষ ১৯৫৩ সালে নিজের রাজ্যাভিষেকে সেইন্ট এডওয়ার্ড মুকুটটি পরেছিলেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এই মুকুট ১৬৬১ সালে তৈরি করা হয়েছিল রাজা দ্বিতীয় চার্লসের জন্য। অ্যাংলো-স্যাক্সন রাজা ও সেইন্ট এডওয়ার্ড দ্য কনফেসরের নামানুসারে মুকুটটির নাম দেওয়া হয়েছে।

এর আগে যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্রের ৪০তম সিংহাসন আরোহী হিসেবে শপথ নেন রাজা তৃতীয় চার্লস। ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, রাজ্যাভিষেক শপথের আইনি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

রাজাকে আর্চবিশপ বলেন, নতুন রাজা যেন তাঁর শাসনকালে আইনের শাসন ও চার্চ অব ইংল্যান্ডের মর্যাদা সমুন্নত রাখেন।

এ সময় রাজা তৃতীয় চার্লস পবিত্র গসপেলে হাত রেখে আইনের শাসন ও চার্চ অব ইংল্যান্ডের মর্যাদা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া একজন ‘একনিষ্ঠ প্রোটেস্ট্যান্ট’ হিসেবে দ্বিতীয় শপথও নেন রাজা চার্লস।

শপথ অনুষ্ঠানে বাইবেল থেকে পাঠ করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। অভিবাসী মা-বাবার সন্তান হিসেবে তিনিই প্রথম যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। রাজ্যাভিষেকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গৌরবময় অভিব্যক্তি।’

ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে জমকালো পোশাক আর রাজকীয় স্মৃতিচিহ্নের সঙ্গে খ্রিষ্টীয় প্রার্থনার মিশেলে আয়োজনের বেশির ভাগই ছিল উদ্‌যাপনমূলক। তবে প্রথমবারের মতো এবার অভিষেকের দিনে সর্বস্তরের মানুষের জন্য রাজার প্রতি আনুগত্য জানিয়ে শপথ নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা হলেও অনেকেই রাজার প্রতি আনুগত্যের শপথ নেন।

এর আগে রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে পৌঁছান রাজা তৃতীয় চার্লস (৭৪) এবং তাঁর স্ত্রী ক্যামিলা (৭৫)। বাকিংহাম প্যালেস থেকে একটি ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বৃষ্টিস্নাত শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে তাঁরা ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে পৌঁছান।

রানী হিসেবে গতকাল অভিষেক হয়েছে চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলারও। তাঁকেও মুকুট পরিয়ে দেন ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ। ক্যামিলাকে পরানো হয় রানী মেরির মুকুট। এরপর অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা। অবশ্য ক্যামিলার মুকুট পরানোর অনুষ্ঠান ছিল সাদামাটা। তাঁকে শপথও নিতে হয়নি।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!