পুষ্টিমানে সমৃদ্ধ ও চাষাবাদে লাভজনক একটি কন্দাল জাতীয় ফসল হলো গোল আলু। দেশের প্রধান এ সবজি ফসলের অনেকগুলো জাত রয়েছে। দেশে সাধারণত: চাষাবাদ হয় এমন কয়েকটি জাতের আলু হলো: বারি আলু-১ (হীরা), বারি আলু-৪ (আইলসা), বারি আলু-৭ (ডায়ামন্ট), বারি আলু-৮ (কার্ডিনাল), বারি আলু-১১ (চমক), বারি আলু-১২ (ধীরা), বারি আলু-১৩ (গ্রানোলা), বারি আলু-১৫ (বিনেলা), বারি আলু-১৬ (আরিন্দা), বারি আলু-১৭ (রাজা), বারি আলু ১৮ (বারাকা), বারি আলু-১৯ (বিন্টজে), বারি আলু-২০ (জারলা), বারি আলু- ২৭, বারি আলু-২৮, বারি আলু-২৯, বারি টিপিএস-১, বারি টিপিএস-২ ইত্যাদি। উল্লেখ্য, পৃথিবীর প্রায় চল্লিশটিরও বেশি দেশে আলু প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই নিঃসংকোচে বলা যায়, দেশে-বিদেশে এর চাহিদা প্রচুর। সে প্রেক্ষিতে যত্নে ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আলু চাষাবাদে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর।
শাক-সবজি চাষাবাদে উর্বর দোঁআশ মাটি সবচেয়ে ভালো। দোঁআশ মাটি ছাড়া অন্যান্য মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার ও বালু ইত্যাদি মিশিয়ে মাটিকে শাক-সবজি চাষাবাদের উপযোগী করা যায়। মাটি ছাড়াও শাক-সবজি (এবং অন্যান্য ফল-ফসল) চাষাবাদে সময় মতো বীজ বপণ বা চারা রোপণ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অনেকেই অজ্ঞানতা বশতঃ চাষাবাদে ইচ্ছা মতো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে থাকেন। কিন্তু এটা চাষাবাদের জন্য মোটেই লাভজনক নয়, অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিরও কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, চাষাবাদে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে প্রায়ই মাটির উর্বরতা কমতে দেখা যায়, যা পরবর্তীতে ফসল উৎপাদনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে।
দেশে বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজির চাষাবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে আছে বেগুন, টমেটো, শিম, বরবটি, মুলা, লাউ, মিষ্টি, কুমড়া, চাল কুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক, ডাঁটা, পেঁপে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, ঢেঁড়শ প্রভৃতি। উল্লেখ্য, দেশে উৎপাদিত শাক-সবজির শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ শুধুমাত্র রবি মৌসুমে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, উৎপাদনের সময়ের ওপর ভিত্তি করে দেশে চাষাবাদকৃত শাক-সবজিকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে; যথা- ১. শীতকালীন ২. গ্রীষ্মকালীন এবং ৩. বারমাসী।
প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ ফুলকপির চাষাবাদের জন্য তিন ধরণের জাত রয়েছে; যথা- ১. আগাম ২. মধ্যম এবং ৩. নাবী। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত একটি ভালো জাত হলো: বারি ফুলকপি-১ (রূপা)। ৯৫-১০৪ দিন জীবনকালের এ জাতের ফুলকপি থেকে বীজ উৎপাদন করা যায়। এ ছাড়া জাতটি সারা দেশে সহজেই চাষাবাদ করা সম্ভব অর্থাৎ দেশের জলবায়ু এ জাতটির চাষাবাদের উপযোগী। উল্লেখ্য, উপযুক্ত পরিচর্যায় এ জাতের প্রতিটি ফুলকপির ওজন ৮৫০-১০০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
চাষাবাদে জমিতে কি পরিমাণ রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন, তা সঠিকভাবে জানার জন্য মাটি পরীক্ষার ব্যবস্থা দেশেও রয়েছে। দেশের মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট- এর আঞ্চলিক গবেষণাগারে সহজেই মাটি পরীক্ষা করা যায়। উল্লেখ্য, মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক গবেষণাগার সমূহ ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, দিনাজপুর, বগুড়া, জামালপুর, ময়মনসিংহ ও নোয়াখালীতে অবস্থিত।
গোল আলু ক্ষেত থেকে তোলার/সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময় হলো, যখন গাছের পাতা হলুদ হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকে। এ ছাড়া আলু তোলার/সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হলো সকাল বেলা (দিনের প্রথম ভাগ)। আলু তোলার/সংগ্রহের পর ২-৩ ঘন্টা ছায়াযুক্ত শুকনো স্থানে বিছিয়ে রাখা ভালো। এতে বাতাসে সহজেই আলুর খোসা শুকিয়ে যায় এবং পরিবহণে আলু ভালো থাকে, যা চাষাবাদ সংশ্লিষ্টদের জন্য লাভজনক বিবেচিত হয়।
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি ফুলকপির চাষাবাদের জন্য ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি অবশ্যই ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়। ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা মূল জমিতে পরিকল্পিতভাবে রোপণ করতে হয়। মূল জমিতে চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় বিকেল বেলা। পরিচর্যার সুবিধার জন্য ফুলকপি সারিতে লাগাতে হয়। এ ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সে.মি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪৫ সে.মি হবে।
এলাচ একটি দামী মসলা। বলা হয়, এর চাষাবাদ ব্যয়বহুল। সাধারণত বিদেশ থেকে এ মসলা আমদানী করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের আবহাওয়ায় ব্যয়বহুল হলেও এলাচ চাষাবাদ সম্ভব। ইতোমধ্যে কোনো কোনো সৌখিন ব্যক্তি এর চাষাবাদ শুরু করেছেন, এমন খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসছে। চাষাবাদে এরা বিদেশ থেকে গাছের মূল সংগ্রহ করেছেন। কেননা বীজ থেকে নয়, গাছের মূলের মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার ঘটে। সাধারণত: একটি মূল থেকে ৫০-৬০টি বোগ ছেড়ে বিশাল আকৃতির ঝাড়ে রূপান্তরিত হয়। এলাচ গাছ দেখতে অনেকটা হলুদ গাছের মতো। গাছ সাধারণত ৭-৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। বিষেজ্ঞরা বলেন ব্যয়বহুল হলেও বাণিজ্যিকভাবে এলাচের চাষাবাদের মাধ্যমে বহু বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব।
লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।