টকটকে লাল, রসালো ফল বলতেই মনে আসে ডালিমের কথা। ডালিমের বৈজ্ঞানিক নাম Punica granatum এবং ইংরেজিতে বলা হয় Promegranate। ডালিম কে হিন্দি, ফার্সি ও পশতু ভাষায় আনার বলা হয়। আজারবাইজানি ভাষায় নার এবং কুর্দি ভাষায় হিনার বলা হয়। নেপালি ও সংস্কৃত ভাষায় একে বলা হয় দারিম। দেশ ভেদে গোষ্ঠী ভেদে ডালিমের নাম ভিন্ন হতে পারে তবে স্বাদে ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল সকলের কাছেই প্রিয়।
ইরান ও ইরাক থেকে ডালিমের বিস্তৃত ঘটে। প্রাচীনকালে ককেশাস অঞ্চলে এর চাষ হয় এবং সেখান থেকে ভারত উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, স্পেন, আজারবাইজান, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চীন, মিশর, বার্মা প্রভৃতি সহ বিশ্বের অনেক দেশেই এই ফল পাওয়া যায়। এ কারণেই বলা যায় ডালিম বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত এবং পরিচিত একটি ফল।
এ ফলটি ভিটামিন এ, সি ও ই সমৃদ্ধ। আর এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিটিউমার এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য আছে। এ ছাড়া ডালিমে ১০০টিরও বেশি ফাইটোকেমিক্যাল থাকায় এটি হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
অনেকের মতে ডালিম খেলে শরীরের রক্ত বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ডালিমে থাকে প্রাকৃতিক ইনসুলিন যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডালিম উপকারী।
এগুলো ছাড়াও ডালিমে রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। জানুন যেসব রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে ডালিম—
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে: পুরুষদের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে। আর নিয়মিত ডালিম খেলে এই ক্যান্সার প্রতিরোধে এটি সহায়তা করে। এ ছাড়া এটি নারীদের স্তন ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে: স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতেও অনেক কার্যকরী হচ্ছে ডালিম। গবেষণায় দেখা গেছে, ২৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দৈনিক ডালিমের রস খাওয়ানোর ফলে তাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
উচ্চরক্তচাপ কমায়: হার্টঅ্যাটাক এবং স্ট্রোক হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে উচ্চরক্তচাপ। আর ডালিম উচ্চরক্তচাপকে কমাতে সহায়তা করে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, হাইপারটেনশনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দুই সপ্তাহ ধরে ডালিমের রস খাওয়ানো হলে তাদের উচ্চরক্তচাপ কমতে দেখা যায়।
জয়েন্টের ব্যথা কমায়: অনেকেরই জয়েন্টের ব্যথা হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। আর এ সমস্যার সমাধান মিলতে পারে ডালিমের রসে। এটিতে প্রদাহবিরোধী প্রভাব থাকার কারণে এটি বাতের চিকিৎসা করতে ও জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে: শরীরের মাংস পেশিতে দ্রুত অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে ধমনীকে পুরু ও শক্ত হতে বাধা প্রদান করে ডালিমের রস। আর এ কারণে এটি হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি শরীরের কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়ে ডালিম। এ ছাড়া এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও অনেক কার্যকরী।
ত্বক উজ্জ্বল করে ও সুস্থ রাখে: অনেক ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে ডালিমের তেল। আর ডালিমে ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক অ্যাসিড থাকায় এটি ত্বক উজ্জ্বল করে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সহায়তা করে।
সূত্র: ইন্টারনেট