রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেট বিভাগের তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পরিচয়



নতুন সরকারের ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।

বাকি মন্ত্রীদের মধ্যে সিলেট বিভাগ হতে আছেন দুইজন পূর্ণ মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী। তার মধ্যে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে মো. আব্দুস শহিদ- কৃষি মন্ত্রণালয় ও ডা. সামন্ত লাল সেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। এবং প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শফিকুর রহমান চৌধুরী- প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।

মন্ত্রীদের পরিচয়:

আব্দুস শহিদ: আব্দুস শহিদ ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের রহিমপুরের সিদ্বেশ্বরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল বারি এবং মাতা সাজেদা খানম। ৮ ভাই ৩ বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার ছোট ভাই ইফতেখার আহমেদ বদরুল রহিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তার বড় মেয়ে উম্মে ফারজানা শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। তিনি ৭ বার মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ, এবং ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদে হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি একাদশ জাতীয় সংসদে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে পালন করেছেন।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর তাকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।

সামন্ত লাল সেন: সামন্ত লাল সেন ১৯৪৯ সালের ২৪ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ববঙ্গের সিলেটের হবিগঞ্জের নাগুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতার নাম জিতেন্দ্র লাল সেন যিনি সরকারি চাকরি করতেন। তিনি সেন্ট ফিলিস হাইস্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক সম্পন্ন করে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৮০ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা থেকে ‘ডিপ্লোমা ইন স্পেশালাইজড সার্জারি’ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে জার্মানি ও ইংল্যান্ডে সার্জারিতে আরো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।তিনি এমবিবিএস পাস করার পর ১৯৭৫ সালে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন।পরে ঢাকায় বদলি হয়ে শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন।ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে ঢাকা মেডিকেলে ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম বার্ন বিভাগ চালু হয়।তিনি এই বিভাগ চালু করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরে ২০০৩ সালে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির জন্য স্বতন্ত্র একটি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়।তিনি এ ইউনিটের প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অবসরে যান।পরে সরকার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বায়ক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে।পরবর্তীতে এই ইউনিটটিকে একটি স্বতন্ত্র ইন্সটিটিউটে রুপান্তর করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট নামে ২০১৯ সালের ৪ জুলাই এখান থেকে চিকিৎসা সেবা প্রদান শুরু হয়। শুরু থেকেই সামন্ত এর প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পান। চিকিৎসাসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি তাকে ২০১৮ সালে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। তিনি বাংলাদেশ প্লাস্টিক সার্জন সোসাইটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর তাকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।

শফিকুর রহমান চৌধুরী: শফিকুর রহমান চৌধুরী ১৮ আগস্ট ১৯৫৭ সালে সিলেট জেলার বিশ্বনাথের দশঘর ইউনিয়নের চান্দভরাং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল মতলিব চৌধূরী ও মাতার নাম লতিফুন নেসা চৌধূরী। তিনি ১৯৭২ সালে চান্দভরাং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৭৫ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৭৯ সালে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হন। ১৯৭৮ সালে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হন এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।তিনি ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটস কমিউনিটি ডেভোলাপমেন্ট ট্রাস্টের সেক্রেটারি ,বেথনাল গ্রিন সিটি চ্যালেঞ্জের ডিরেক্টর ও বিভিন্ন সাব কমিটির কো-চেয়ারম্যান, বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্টের সভাপতি, প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব, লন্ডনে বৈশাখী মেলা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও অন্যতম উদ্যোক্তা, বাংলা টাউন বাস্তবায়নের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং লন্ডন বাংলাদেশ সেন্টারের এডহক কমিটির সদস্য ।যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে শফিকুর রহমান চৌধুরী সরাসরি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।সর্বশেষ তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হযেছেন।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর তাকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।

 

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!