শিক্ষা, সচেতনতা ও মানবতার লক্ষ্যে কালীঘাট চা বাগান, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার-এ গড়ে উঠেছে “আলোর দিশারী সামাজিক সংগঠন”। পরিতোষ কুমার তাঁতী নামের একজন উদ্যোমী তরুণ তাঁর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ২০১৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট চা বাগানে পরিতোষ একাডেমি পরিদর্শনে দেখা যায় সেখানে প্রাণতোষ তাঁতী, পরিতোষ তাঁতী, রিপন তাঁতী সহ অন্যান্য শিক্ষার্থী উপস্থিত আছেন। তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পরিতোষ তাঁতী জানান, সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ফ্রি কোচিং- এর মাধ্যমে শিক্ষা সহায়তা করে যাচ্ছে। এখানে পড়াশুনার উপযুক্ত পরিচর্যা পেয়ে সংগঠনের দুইজন সদস্য দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছেন। একজন রিপন তাঁতী, অন্যজন বিদ্যুৎ তাঁতী। রিপন তাঁতী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের “ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল” বিভাগে বর্তমানে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। বিদ্যুৎ তাঁতী বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি বিষয় নিয়ে ১ম বর্ষে পড়ছেন। আরও দুজন শিক্ষার্থী সিলেটের Institute of Health Technology (IHT)-তে রেডিওগ্রাফি বিভাগে ১ম বর্ষে পড়ছেন।
এই সংগঠনের মাধ্যমে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বর্তমানে ৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী ৫টি ল্যাপটপ, ১টি প্রজেক্টর ও ১টি প্রিন্টার এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। নির্ম্মাই শিববাড়ি সংলগ্ন বস্তি এলাকার শিশুরা এই সংগঠনের “আলোর দিশারী শিক্ষা সহায়ক কেন্দ্র”র মাধ্যমে এক বছর প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা পেয়েছে।
সংগঠনের তরুণরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কালীঘাট চা বাগানের বিলাস ছড়ার উপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দিয়েছেন। যার সুফল ভোগ করছে এলাকার লোকজন। বাঁশের সাঁকো অস্থায়ী। এখানে একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ জরুরি।
এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে “কালীঘাট চা বাগান উচ্চবিদ্যালয়।” স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। নানাবিধ জটিলতার ভেতরেও হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে চলছে স্বপ্নের উচ্চবিদ্যালয়।
সংগঠনের আরও একটি উল্লেখযোগ্য কাজ “আলোর দিশারী পাঠাগার” স্থাপন। পাঠাগারে বর্তমানে ছয়শ-র বেশি বই আছে। শিক্ষার্থীরা পাঠাগার থেকে পছন্দের বই নিয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
সংগঠনের ব্যয় নির্বাহ সম্পর্কে সভাপতি পরিতোষ কুমার তাঁতী জানান, সদস্য চাঁদা সংগঠনের আয়ের একমাত্র উৎস। মাসে ৩৭০০/- (তিন হাজার সাতশত) টাকা আয় হয়। এরমধ্যে মাসে তিনহাজার টাকা ঘর ভাড়ায় চলে যায়। মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে অনেক টাকা ব্যয় হয়- যা সদস্যদের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে খরচ করতে হয়।
সংগঠনটি এখন স্থানীয়দের আশার আলোয় পরিণত হয়েছে। এডমন্ড বার্কের কথায়- “আলোতে আলো সুস্পষ্ট নয়, কিন্তু অন্ধকারে সে চির উজ্জ্বল।”