মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলহাজ্ব মছলন্দ আলী ও তাঁকে ঘিরে সমাজকর্ম।। আব্দুর রশীদ লুলু



সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলাধীন উছমানপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী মাধবপুর গ্রামে আনুমানিক ১৯১০ সালে ধর্মপ্রাণ, নিরহংকারী, সমাজসেবী আলহাজ্ব মছলন্দ আলী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম মামন ছবদর আলী এবং মাতা মরহুমা হাজেরা বিবি। আলহাজ্ব মছলন্দ আলীরা ছিলেন পাঁচ ভাই; যথাক্রমে ০১. আছলম আলী ০২. আলহাজ্ব মছলন্দ আলী ০৩. আলহাজ্ব সিকন্দর আলী ০৪. জহুর আলী এবং ০৫. আব্দুল গফুর। দুই বোন; যথাক্রমে— ০১. আবিজা বিবি এবং ০২. পরী বিবি। তাঁদের নানা একই গ্রামের মরহুম আজিম উল্লা এবং মামা মোঃ আব্দুল্লাহ অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ও দানশীল ছিলেন। জানা যায়, ওই সময়ে তাঁদের নানা—মামা নাকি ৫২ হাল জমির মালিক ছিলেন।

কঠোর পরিশ্রমী ও পরিবর্তন প্রত্যাশী মছলন্দ আলী বলতে গেলে কৈশোরে গ্রামের কলকাতা প্রবাসী আছদ্দর আলীর সহযোগিতায় ভাগ্যান্বেষণে কলকাতা গমন করেন। ওই সময় টাটা কোম্পানীতে ৫২০ টাকা বেতনে কাজ করে গ্রামে প্রচুর জমি—জমা ক্রয় করেন। সৌখিন বাড়ি করেন। পাশাপাশি ভাইদেরও দেশ—বিদেশে সম্মানজনক ভাবে প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন।

মিতব্যয়ী আলহাজ্ব মছলন্দ আলী ক্রমান্বয়ে বালাগঞ্জের অন্যতম সম্পদশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় লাভ করেন। বিরাট কৃষি খামার করেন। কৃষি খামারে ট্রাক্টর নিয়ে আসেন। খুব সম্ভব এলাকায় তিনিই প্রথম কৃষি খামারে ট্রাক্টর ব্যবহার করেন। ১৯৪৫ সালে টাটা কোম্পানীর চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে তিনি স্থায়ীভাবে দেশে বসবাস শুরু করেন।

যতদূর জানা যায়, ধনাঢ্য—সমাজসেবক আলহাজ্ব মছলন্দ আলী স্থানীয় নবগ্রাম হাই স্কুলে যৌথভাবে (ভাইদের নিয়ে) ১৯৬৩ সালে ১৯ শতক এবং ১৯৬৪ সালে স্থানীয় মাদার বাজার উপপল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৬০ শতক জমি দান করেন। এছাড়া মাদার বাজার (বড়ভাঙ্গা নদীর ওপর) সেতুর এপ্রোচ সড়কের জন্য ১৯৮৯ সালে তিনি একক ভাবে প্রায় ৪৫ শতক জমিদান করেন। এছাড়া তিনি এলাকার উন্নয়নের বৃহৎ সংগঠন ‘নবগ্রাম কল্যাণ সংহতি সংস্থা’র সাধারণ পরিষদের সভাপতিও ছিলেন। মরহুম আলহাজ্ব মছলন্দ আলীর ছেলেরা অর্থে—বিত্তে সবাই প্রতিষ্ঠিত। তাঁর ছেলে—মেয়েরা হলেন— ০১. আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহিদ (মরহুম) ০২. আলহাজ্ব তফজ্জুল আলী (মরহুম) ০৩. মকবুল আলী (মরহুম) ০৪. আনোয়ারা বেগম (মরহুমা, যাঁর নামে ২০০৪ সাল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা ‘আনোয়ারা’) ০৫. আলহাজ্ব লুৎফুর রহমান ০৬. দিলারা বেগম ০৭. ফাতেহা বেগম ০৮. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
তাঁর ছেলের দিকের এবং মেয়ের দিকের নাতি—নাতনীরা প্রায় সবাই উন্নত দেশে (যেমন— ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও কানাডায়) অবস্থানরত। এছাড়াও তাঁর নাতি—নাতনীরা দেশে যারা আছে তারাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় সবাই প্রতিষ্ঠিত। সমাজ—সংসারে সফল এই ব্যক্তিত্ব স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল রোববার দিবাগত রাত ১০.১০ মিনিটের দিকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

আলহাজ্ব মছলন্দ আলী মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করলেও পরবর্তীতে বাড়ি কিনে পার্শ্ববর্তী ধনপুর গ্রামে চলে আসেন। ধনপুরের তাঁর বাড়ি ‘হাজিবাড়ি’ নামে এলাকা খ্যাত। উল্লেখ্য, তিনি যখন হজ্বব্রত পালন করেন, তখন এলাকায় হজ্জ পালনকারীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। তাঁকে নিয়ে বিস্তারিতভাবে লিখেছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, লেখক ও সমাজসেবক আলহাজ্ব মোঃ তাহির আলী মাস্টার। “আলহাজ্ব মছলন্দ আলী: স্বপ্ন প্রতিষ্ঠা ও সমাজকর্ম” শিরোনামের জনাব মোঃ তাহির আলী মাস্টারের লেখা ইতিমধ্যে ‘আনোয়ারা’য় ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৭, দৈনিক সিলেট বাণীতে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ এবং ‘স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব’ বইয়ে জানুয়ারি ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয়েছে। আলহাজ্ব মছলন্দ আলীর সুযোগ্য উত্তরসূরী মুকুল ইকবাল ও ডা. এনামুল হক এনাম দুইজনই ভালো লেখকও। তাঁকে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে স্মরণীয় করে রাখতে আনোয়ারা ফাউন্ডেশন থেকে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা আমরা ভাবছি। তাঁর সুযোগ্য উত্তরসুরীদের সহযোগিতায় তাঁকে নিয়ে একটি স্মারকগ্রন্থও আনোয়ারা ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশ করা যেতে পারে। আমরা মরহুম আলহাজ্জ মছলন্দ আলীর রূহের মাগফেরাত কামনা করি।

 লেখক: ইসলাম ধর্ম, হোমিওপ্যাথি ও কৃষি বিষয়ক লেখক ও গবেষক।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!