
বিএনপি
ফ্রান্স বিএনপির সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালে। তৎকালীন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান প্যারিসের ওভারভিইয়ে পৌর এলাকার একটি হলে সম্মেলন আয়োজন করেন। কিন্তু সম্মেলন চলাকালে চেয়ার ছোড়াছুড়ি আর চরম হট্টগোলের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সম্মেলন স্থগিত রাখতে বাধ্য হন মাহিদুর রহমান। এর কয়েকমাস পরে বিএনপি মহাসচিব সাক্ষরিত একটি ঢাউস সাইজ কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে। সেই কমিটিতে সাইফুর রহমান সভাপতি ও এমএ তাহের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। একই সাথে জালাল খান সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন। তবে শুরু থেকেই সেই কমিটি নিয়ে অনেকের মধ্যে অসন্তোষ ও অনাস্থা দেখা দেয়। কয়েকদিন পরই তৃণমূল বিএনপি ও নানা নামে আলাদা পথ চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালের এপ্রিলে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান কেন্দ্রের নির্দেশনা মুতাবেক ফ্রান্স বিএনপির কমিটির কার্যক্রম বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এমতাবস্থায় নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে আলাদা আলাদা হয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এর বেশ কিছুদিন পর বিলুপ্ত ঘোষিত কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমানের মায়ের মৃত্যুতে এক শোক বার্তায় কেন্দ্রীয় বিএনপি তাকে সভাপতি উল্লেখ করে। এরপর থেকে বিলুপ্ত কমিটির অনেকেই স্ব স্ব পদবী উল্লেখ করে পরিচয় দিতে থাকেন। সর্বশেষ গেল সপ্তায় বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এই কমিটি পুনরায় বিলুপ্ত ঘোষণা করে। একই সাথে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকনকে এ কমিটি পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এদিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলকে যেমন সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তেমনি ফ্রান্সসহ ইউরোপে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে তুলে ধরতে ব্যর্থ হন তারা।

জিল্লুর রহমানের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এমএ তাহের।
স্বৈরাচার বিরুধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকলেও কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এমনকি সাধারণ সম্পাদক এমএ তাহেরের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের সাথে আপোষ করে চলার অভিযোগ আছে বিএনপি ও সমমনা দলের নেতা কর্মীদের মাঝে। ফলে কর্মীরা তাকে বিএনপির আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক নামে ডাকতে শুরু করেন। তবে তার কেন্দ্রীয় লবির ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস দেখান না। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে তাকে হাস্যোজ্বল দেখা যায়।
তবে আওয়ামী লীগের পতনের পরে তিনি তার অবস্থান পাল্টে নেন। এবার আর কোন কমিউনিটি অনুষ্ঠানে এমনকি আওয়ামী লীগের সাথে দূরতম সম্পর্ক থাকা কারো সাথে এক টেবিলে বসতে নারাজ এই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী। এবার তিনি নিজেকে সাচ্চা বিপ্লবী বলে চাউর করছেন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনে তার এসব ছবি এখনো দেখা যায়। এমনকি ২০১৭ সালে শেখ হাসিনা ফ্রান্সে আসলে মানবাধিকার বা গণতন্ত্র হত্যাকারী হিসাবে বিএনপি ফরাসী পুলিশের কাছে সমাবেশ ও মানববন্ধনের অনুমতি চাইবার কথা থাকলেও আওয়ামী পদলেহি এ সাধারণ সম্পাদক বাঘ নিধন বন্দের জন্য মানববন্ধনের অনুমতি নেন যা সংশ্লিষ্ট একটি বিশ্বস্ত সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ফ্রান্স আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি বেনজির আহমেদ সেলিম ও সাবেক সভাপতি নাজিম উদ্দিনের সাথে এমএ তাহের।
আবার স্বৈরাচার পতনের সাথে সাথে দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে এম্বাসিতে বিভিন্ন তদবির, এম্বাসিতে সক্রিয় পদচারণার অভিযোগে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিরাগভাজন হয়েছেন আলোচিত এই নেতা। বিএনপি নেতৃত্ব অতীতের আওয়ামী লীগের মতো ভবিষ্যতে এম্বাসিকে দলীয় কার্যালয় বানিয়ে ফেলার ব্যাপারে কড়া সতর্কতা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত ফ্রান্স বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক স্বৈরশাসনের সাথে এক ধরনের আপোষ করে পথ চললেও একই সময়ে তৎকালীন কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি ও বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সহকারী হাজি হাবিব বিভিন্ন সময় ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফ্রান্সের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে একাধিক বৈঠক করেন যেখানে এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। অবশেষে বিশেষ কারণে তারেক রহমান দেখা করতে না পারায় তার প্রতিনিধি হিসাবে তার উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম ও উপস্থিত ছিলেন বলে এই প্রতিবেদক জানতে পারেন। এছাড়া এক দশকে তিনি অন্তত ডজন খানিক ফরাসি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যা, ফ্যাসিবাদ কায়েম ও অব্যাহত মানবাধিকার লংঘন নিয়ে বিভিন্ন সময় ফ্রান্সের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। তার এসব উদ্যোগ প্রমাণ করে তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ চাইলে ফ্রান্স প্রশাসনে বাংলাদেশের গণতন্ত্রহীনতার পক্ষে জোরালো ভূমিকা নিতে পারতেন।
উল্লেখ্য চলতি মাসের ১৭ তারিখ ফ্রান্স, জার্মানি ,ইতালিসহ ইউরোপের কয়েকটি কমিটি ভেঙে দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপির হাই কমান্ড। নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে জানা গেছে, এখন যারা আহবায়ক কমিটিতে স্থান পাবেন তারা ভবিষ্যতে মূল কমিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব নাও পেতে পারেন। ফ্রান্স বিএনপির আহবায়ক হিসাবে এমএ তাহের, হাজি হাবিব, কবির হোসেন পাটোয়ারী, মাহবুবুল আলম রাঙার নাম আলোচিত হচ্ছে। তবে সদস্য সচিব হিসাবে রেজাউল করিম ও জুনায়েদ আহমেদের নাম আলোচিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে সহসাই কমিটি ঘোষিত হচ্ছে না। এজন্য কেন্দ্র ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করতে পারে।



