
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
দেশের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক বক্তব্য। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে যেসব নেতার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। প্রধান উপদেষ্টার এই মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন দল ও মহল এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কড়া ভাষায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কৌশলী অবস্থান নিয়েছে।
বিএনপি ও জামায়াত সরাসরি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে কোনো বক্তব্য না দিলেও, দল দুটির নেতারা স্পষ্ট করেছেন যে, তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পুনর্বাসন চান না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান—দুজনই বলেছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পুনরুত্থানের বিপক্ষে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করা উচিত এবং দলটিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরতে দেওয়া হবে না। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী মিশনের প্রতিবেদনেও এমন সুপারিশ করা হয়েছে। তাই সরকারও এই আন্তর্জাতিক চাপ বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে দলটির শীর্ষ নেতাদের বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ চলছে।
এদিকে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যৌথ বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চাইলেও, জাতীয় নাগরিক পার্টি গণপরিষদ নির্বাচন দাবি করছে। সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ চূড়ান্ত করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সরকারের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করার একটি কৌশলও হতে পারে।
যদিও সরকার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করার বার্তা দিয়েছে, তবুও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সামনের দিনগুলোতে এই ইস্যুতে আরও উত্তেজনা দেখা দিতে পারে।




