
ছবি সংগৃহীত
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তালিকা প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, এটি প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা। প্রয়োজনে পরবর্তীতে সংশোধন আনা হতে পারে।
তালিকায় নেই বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা
ঘোষিত তালিকায় দেখা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল এবং হুমায়ুন কবীরের নাম নেই।
এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আমিনুর রশীদ ইয়াসিন এবং ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপনও বাদ পড়েছেন।
একাদশ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার নামও এবার তালিকায় নেই।
ঢাকা-১০ আসনে আগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম ও রবিউল ইসলাম রবির নামও অনুপস্থিত।
মাগুরা আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়নও বাদ পড়েছেন।
এক পরিবারে একজন প্রার্থীর নীতি
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল—এক পরিবার থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
ফলে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমদ, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদও বাদ পড়েছেন।
তবে যেসব আসনে বিএনপির সিনিয়র নেতারা প্রয়াত হয়েছেন, সেখানে তাঁদের পরিবার থেকে সন্তান বা স্ত্রীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
যে আসনগুলো থেকে লড়বেন বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীরা
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে—
- খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১)
- মির্জা আব্বাস (ঢাকা-৮)
- গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩)
- আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২)
- আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০)
- সালাহ উদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১)
- ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (সিরাজগঞ্জ-২)
- হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (ভোলা-৩)
- এজেডএম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-৬) প্রার্থী হয়েছেন।
ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে রয়েছেন—
আলতাফ হোসেন চৌধুরী (পটুয়াখালী-১), বরকত উল্লাহ বুলু (নোয়াখালী-৩), মোহাম্মদ শাহজাহান (নোয়াখালী-৪), আবদুল আউয়াল মিন্টু (ফেনী-৩), নিতাই রায় চৌধুরী (মাগুরা-২), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ (কুমিল্লা-৩), আহমেদ আজম খান (টাঙ্গাইল-৮) প্রমুখ।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে—
মনিরুর হক চৌধুরী (কুমিল্লা-৬), আমান উল্লাহ আমান (ঢাকা-২), মাহবুব উদ্দিন খোকন (নোয়াখালী-১), জয়নুল আবদিন ফারুক (নোয়াখালী-৪), জহির উদ্দিন স্বপন (বরিশাল-১), মজিবুর রহমান সারোয়ার (বরিশাল-৫), লুৎফুজ্জামান বাবর (নেত্রকোনা-৪), তাজভীর উল ইসলাম (কুড়িগ্রাম-৩), হাবিবুর রহমান হাবিব (পাবনা-৪), মুশফিকুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪), আফরোজা খান রিতা (মানিকগঞ্জ-৩), মঈনুল ইসলাম খান (মানিকগঞ্জ-২), খন্দকার আবদুল মুক্তাদির (সিলেট-১), তাহমিনা রশদীর লুনা (সিলেট-২), আবুল খায়ের ভূঁইয়া (লক্ষ্মীপুর-২), এনামুল হক চৌধুরী (সিলেট-৬), আবদুস সালাম পিন্টু (টাঙ্গাইল-২), জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল (ফেনী-২), ফজলুর রহমান (কিশোরগঞ্জ-৪), নাসের রহমান (মৌলভীবাজার-৩) রয়েছেন।
যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে মনোনয়ন পাওয়া তিনজন
নরসিংদী-১ আসনে খায়রুল কবির খোকন, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যান এবং ময়মনসিংহ-১ আসনে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মনোনয়ন পেয়েছেন।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী
আসাদুল হাবিব দুলু (লালমনিরহাট-৩), হারুনুর রশিদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), মিজানুর রহমান মিনু (রাজশাহী-২), রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু (নাটোর-২), নজরুল ইসলাম মঞ্জু (খুলনা-২), আলী আজগর লবী (খুলনা-৫), ব্যারিস্টার কায়সার কামাল (নেত্রকোনা-১), ড. ওসমান ফারুক (কিশোরগঞ্জ-৩), মিজানুর রহমান সিনহা (মুন্সিগঞ্জ-২), ইশরাক হোসেন (ঢাকা-৬), এহসানুল হক মিলন (চাঁদপুর-১) এবং হুম্মাম কাদের চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৭) প্রার্থী হয়েছেন।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রার্থিতা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন—দিনাজপুর-৩, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১।
অন্যদিকে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এটি তার প্রথম সংসদ নির্বাচন।
নারী প্রার্থী ১০ জন
ঘোষিত ২৩৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০ জন নারী প্রার্থী আছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন খালেদা জিয়া ছাড়াও—ফারজানা শারমিন (নাটোর-১), মোছাঃ সাবিরা সুলতানা (যশোর-২), ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টু (ঝালকাঠি-২), সানসিলা জেবরিন (শেরপুর-১), আফরোজা খান রিতা (মানিকগঞ্জ-৩), সানজিদা ইসলাম তুলি (ঢাকা-১৪), শ্যামা ওয়াবেদ ইসলাম (ফরিদপুর-২), নায়াব ইউসুফ আহমেদ (ফরিদপুর-৩) এবং তাহসিনা রুশদীর লুনা (সিলেট-২)।
৬৩টি আসন এখনো ফাঁকা
বিএনপি ৬৩টি আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এসব আসন জোটের শরীক ও মিত্র দলগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখা হতে পারে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও কয়েকটি ইসলামপন্থী দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা চলছে।
এছাড়া কিছু আসনে স্থানীয় পর্যায়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে প্রার্থী ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন নেতারা।
বিএনপির মিত্র দলের নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপি ইতিমধ্যে কিছু আসনে ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে, যা চূড়ান্ত আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।
এভাবেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিএনপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা।




