ঢাকার রাস্তায় আজ শনিবারও বাস নেই। রাজধানীর কোনো আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়া হচ্ছে না। বাসমালিক ও পরিবহনশ্রমিকেরা বলছেন, নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁরা বাস বের করছেন না। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কিছু গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। এরপর থেকে বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন খাতের মালিক ও শ্রমিকেরা।
বাসমালিক-শ্রমিকেরা বলছেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া যেমন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, ঢাকামুখী গাড়ি চালাতেও পথে বাধা পাচ্ছেন তাঁরা।
গাবতলীর ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার সাইফুল আলম মজুমদার বলেন, ‘কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা নেই। তবে বাস কম ছাড়া হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার তিনটি আন্তজেলা বাস টার্মিনাল সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী থেকে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ। টার্মিনালের ভেতরে ও সামনের সড়কে সারি করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন গন্তব্যের বাস। রাজধানী থেকে সকালে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গসহ সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে সড়কপথে বাস চলাচল বন্ধ। ঢাকার ভেতরও সাধারণ গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।
আজ রাজধানীর ভেতরে কয়েকটি বিআরটিসির বাস চলতে দেখা যায়। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি ঢাকার ভেতরে চলাচল করছে।
গাবতলী বাস টার্মিনালের হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে গাবতলী থেকে ২৫০টির মতো ট্রিপ থাকে। কিন্তু গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৫০টির মতো ট্রিপ হয়েছে। ঢাকামুখী কিছু বাস সাভারের কাছে সকালের দিকে বাধা পেয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করে দক্ষিণবঙ্গের একটি বাস কোম্পানির কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের একটি সাধারণ চেয়ারকোচের দাম ৭৫ লাখ টাকা। এগুলোর সামনের গ্লাসের দাম ৫০ হাজার টাকা। পেছনের গ্লাস ১০ হাজার টাকা। অন্য গ্লাসের দাম দুই লাখ টাকার মতো। হেডলাইটের দাম পাঁচ হাজার টাকা। শুধু গ্লাস ভাঙলে লাখ টাকার ওপরে ক্ষতি হয়। সব মিলিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বাস চালাতে সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা।
বাস বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে গতকাল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, কেউ কোনো ধর্মঘট ডাকেনি। নিরাপত্তার অভাব বোধ করে বাস মালিক-শ্রমিকেরা গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন।
মহাখালী বাস টার্মিনালের দোতলায় সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্লাহ বলেন, শ্রমিকেরা নিরাপদ বোধ করলেই গাড়ি চলবে।
রাস্তায় আন্দোলনকারীরা নেই, তবু গণপরিবহন চলছে না কেন—জানতে চাইলে শ্রমিকনেতা শাজাহান খান বলেন, ‘এটা কোনো ধর্মঘট নয়। নিরাপত্তার অভাবে গাড়ি বন্ধ রাখা হয়েছে। আপনার নিজের গাড়ি হলেও তো আপনি এ পরিস্থিতিতে বের করতেন না। ড্রাইভারদেরও অনেক জায়গায় মারধর করছে। সে কারণেই মনে হয় মালিক ও শ্রমিকেরা গাড়ি বন্ধ রেখেছে।’
খন্দকার এনায়েতুল্লাহ দাবি করেন, ‘এটা আমাদের মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ধর্মঘট নয়। মালিক-শ্রমিকদের কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে গাড়ি বন্ধ রাখতে বলা হয়নি। নাইট কোচ, ট্রাক তো চলছে।’