একজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী যদি হয় সৌম্য-মধুর ব্যাক্তিত্বের অধিকারী, প্রাণময়তা, শান্ত-মেজাজ ও পরিমিতিবোধ, শিক্ষার্থীর প্রতি অনুরাগী, শিক্ষার্থীদের আপনজন, অমায়িকতা ও প্রসন্নতা চিরনবীনত্বের স্নিগ্ধ ঐশ্বর্য, শিশু রঞ্জন মনের অধিকারী ইত্যাদি। তাহলে আমি বলবো বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়নের মৈশাষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো: আব্দুল ওয়াহিদ এরকম অসংখ্য গুণের অধিকারী।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মানুষ গড়ার কারিগর খ্যাত শিক্ষকতা নামক মহান পেশায় ব্রত এই মানুষটি প্রতিক্ষণ তাঁর বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার মানোন্নয়ন নিয়ে ভাবেন। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যক্রেমও উদ্বুদ্ধ করেন।
বিশেষ করে স্কুল বহির্ভূত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনয়ন, পঞ্চম শ্রেনির সমাপনী পরীক্ষার্থীদের জন্য তাঁর নিজ উদ্যোগে বিশেষ পাঠদানের ব্যবস্থা, ঝরে পড়া ও অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের শতভাগ বিদ্যালয় মুখী করা, তাঁর নিজ উদ্যোগে বিদ্যালয়ে বাগান তৈরী করা, এমনকি ছাত্র-ছাত্রীরা যেনো তাদের নিজ নিজ বাড়িতে বৃক্ষরোপন করে তাতে উৎসাহ প্রদান ও পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
একান্ত আলাপকালে তিনি জানান, শুধু ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে পাঠ দান করালেই দায়িত্ব শেষ নয়, ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও উৎসাহ প্রদান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষক হচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীদের পিতা-মাতার সমতুল্য। একজন শিক্ষার্থীকে সঠিক পথে ধাবিত করা একজন শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব।
পরোপকারি গুণী এই শিক্ষকের স্কুলের বাহিরের কার্যক্রম সম্বন্ধে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি – মৈশাষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র অত্যন্ত মেধাবী, তবে অসচ্ছল। কিছুদিন যাবত সে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। ছাত্রটির এহেতুক অবস্থা দেখে শিক্ষক আব্দুল ওয়াহিদ বিদ্যালয় ছুটির পর তাঁর বাড়িতে যান। বিদ্যালয়ে কিছুদিন যাবত অনুপস্থিতির কারণ জানতে চান। ছাত্রটির অভিভাবক যখন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির কারণ সম্পর্কে পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা জানান, তখন শিক্ষক আব্দুল ওয়াহিদ ছাত্রটির লেখাপড়ার সকল ব্যয়ভার নিজে বহন করার অঙ্গীকার করেন।
শুধু গরীব ও মেধাবীদের সহযোগীতা করেই তাঁর কাজ শেষ নয়। বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের নিমিত্তে এলাকার প্রবাসী সহ বিত্তশালী মহলের সাথে যোগাযোগ করে বিদ্যালয়ের অনেক উন্নয়ন সাধন করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ক) ২০১৪ সালে মৈশাষী গ্রামের কামাল উদ্দিন লালের ১টি চেয়ার বিদ্যালয়ে প্রদান খ) মৈশাষী গ্রামের ফ্রান্স প্রবাসী সাজ্জাদ আহমদের ২০১৫ সালে বিদ্যালয়ের ক্রীড়ান্নোয়নে এক সেট জার্সি প্রদান গ) ২০১৬ সালে হামিদপুর গ্রামের আওলাদ মিয়ার ১টি বৈদ্যতিক পাখা প্রদান ঘ) মৈশাষী গ্রামের মো: খিজির মিয়ার ২০১৬ সালে একটি বড় টেবিল প্রদান ও ঙ) শিক্ষক আব্দুল ওয়াহিদের প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বড় অনুদান মিলে ২০১৮ সালে। এলাকার কয়েকজন বিত্তশালী গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০টি স্কুল ব্যাগ প্রদান করেন। নিজ প্রচেষ্ঠায় এলাকার সচ্ছল মানুষের কাছ থেকে এই রকম ছোট-বড় অনুদান আদায় করে শিক্ষাখাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন।
সদ্য এই গুণী শিক্ষক উপজেলার শেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। আমি এই গুণী শিক্ষকের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।