মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

ব্রেক্সিট : পার্লামেন্টে বার বার পরাজয়, উভয় সংকটে টেরিজা মে



বহুল আলোচিত ব্রেক্সিট কার্যকর করা নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। ব্রেক্সিট বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত নো ডিল চুক্তি নিয়ে অনেকের আপত্তি রয়েছে। আবার কোনো ধরণের চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট কার্যকরেও রয়েছে চরম বিপত্তি। অপরদিকে, সর্বদলীয় এমপিদের একটি জোট চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট ঠেকাতে ইতোমধ্যে তৎপর হয়ে ওঠেছেন। এই কনজারভেটিভ দলীয় এমপি তথা অনেক ব্রেক্সিটপন্থী শীর্ষ নেতারাও অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। সম্প্রতি ব্রেক্সিট সংক্রান্ত উত্থাপিত একটি বিলে এমপিদের কাছে পরাজয় হয়েছে সরকারের। বিলটির বিরোধীতা করেছেন বিরোধীদল লেবারসহ কনজারভেটিভ পার্টির অনেক এমপিরা। তাঁরা বিকল্প প্রস্তাবের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। আগামী ১৫ জানুয়ারী প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট ডিল নিয়ে এমপিদের ভোটাভুটির আগে গত ৮ জানুয়ারি, মঙ্গলবার আরেক দফা এমপিদের কাছে পরাজিত হলেন তিনি। প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট ডিল নিয়ে এভাবে পার্লামেন্টে বার বার পরাজয়ের মুখে পড়ছেন প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে।

এর আগে গত ডিসেম্বরে ভোটাভুটির কথা থাকলেও তার আগে এমপিদের অন্য এক ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। এরপর ভয়ে প্রস্তাবিত ডিলের উপর ভোটাভুটির তারিখ পরিবর্তন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে নতুন তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ১৫ জানুয়ারি।
ব্রেক্সিট প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থেরেসা মে যে চুক্তি করেছেন, তা নিয়ে বিরোধী লেবার পার্টির পাশাপাশি মতভেদ রয়েছে তাঁর নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির অভ্যন্তরেও। ৬০০ পৃষ্ঠার ওই চুক্তি বাস্তবায়নে পার্লামেন্টের অনুমোদন পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় কোনও চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। তবে, পার্লামেন্টের ব্রেক্সিট বিরোধী অংশ খুব সহজে তা হতে দিতে চান না। চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পথে বাধা সৃষ্টি করতে তারা গত বছরের বাজেট বিল সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। বাজেটে সরকারকে কর সংক্রান্ত যে প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া আছে, তাতে সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিয়েছে ব্রেক্সিটবিরোধীরা। সংশোধনীতে প্রশাসনিক ক্ষমতার পরিবর্তে পার্লামেন্টের অনুমোদনের অপরিহার্যতা আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এবছরের ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার কথা। বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে জোটটির সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন থেরেসা। সে ব্রেক্সিট চুক্তি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদন করানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করা নিয়ে বার বারই হোঁচট খেয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ব্রেক্সিট চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্বিমতকে কেন্দ্র করে পদত্যাগ করেছেন দুই দুইজন ব্রেক্সিটবিষয়ক মন্ত্রী। অন্য মন্ত্রণালয়েরও কয়েকজন সরে দাঁড়িয়েছেন। পদত্যাগ করেছেন ব্রেক্সিটের নেতৃত্বদানকারী ব্রিটিশ ফরেন সেক্রেটারি বরিস জনসনও। তুমুল বিরোধিতার মধ্যে থেরেসার ব্রেক্সিট চুক্তিটি পার্লামেন্টে অনুমোদন পাওয়া না পাওয়াজনিত অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। তবে অনুমোদন না পেলে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করা হতে পারে। একে নো ডিল ব্রেক্সিট নামে ডাকা হচ্ছে। তবে এ প্রশ্নেও রয়েছে বিরোধিতা। নো ডিল ব্রেক্সিট পরবর্তী পরিস্থিতিতে থেরেসা মে যেন বিপাকে পড়েন তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ব্রেক্সিট বিরোধীরা। শুধু বিরোধীরাই নয়, নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতারাও এরইমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তারা নো ডিল ব্রেক্সিট প্রশ্নে টেরিজা মে এর পাশে নেই।

কোনও চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসার বিরোধিতাকারী এমপিরা গত ৮ জানুয়ারি, মঙ্গলবার অর্থ বিল সংশোধনের পক্ষে ভোট দেন। ৩০৩-২৯৬ ভোটে লেবার নেতা কুপার উত্থাপিত প্রস্তাবটি পাস হয়। হাউস অব কমন্সে দেওয়া বক্তব্যে কুপার বলেন, হাউসের এমপিরা চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের বিপদ থাকার আশঙ্কার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। আমার আশঙ্কা, আমরা ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছি এবং সে পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে থাকবে না। তিনি বলেন, আমি মনে করি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে না দেখে আমাদের কিছু করা উচিত।

এ সংশোধনী অনুযায়ী, চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের পর কর আইনে পরিবর্তন আনতে হলে ব্রিটিশ সরকারকে পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে হবে। কর আইন পরিবর্তনে সরকার প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে না। এ সংশোধনীর কারণে কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকারকে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হবে না। তবে ব্রেক্সিটের কর সংক্রান্ত আইনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনতেও (ইইউ এর জায়গায় ইউকে লিখতেও) সরকারকে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে থাকতে হবে। এর নেপথ্য ভূমিকা পালনকারী আইনপ্রণেতাদের আশা, সংশোধিত বিলটি পাস হওয়ায় ব্রেক্সিট ঠেকাতে আইনসভার মাধ্যমে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

গত ১১ ডিসেম্বরই ব্রেক্সিট চুক্তির চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ভোটাভুটির কথা থাকলেও টোরি এমপি ও লেবার পার্টির এমপিদের কাছ থেকে পরাজয়ের আভাস পাওয়ার পর সে ভোটাভুটি বাতিল করেন থেরেসা। আগামী মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) টেরিজা মে এর ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে। এখনও প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে এর ব্রেক্সিট চুক্তির বিরোধিতা করে যাচ্ছেন এমপিরা।

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের ২০ জন এমপিও সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী জাস্টিন গ্রিনিংও রয়েছেন। এ পরিস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে ব্রেক্সিটের পক্ষের নেতারা বলছেন, যেকোনোভাবেই হোক ব্রেক্সিট বাস্তবায়িত হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাজ্য। গত বছর নভেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রচ্চাবিত চুক্তি অনুমোদন করেছেন সংগঠনটির নেতারা। ২৬ পৃষ্ঠার ঘোষণাপত্রসহ ৬০০ পৃষ্ঠার ওই চুক্তিটি বাচ্চবায়িত হতে গেলে অবশ্যই তাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনুমোদন পেতে হবে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার তারিখ নির্ধারণ করেছে।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!