লেবাননে বিভিন্ন কারণে আকামা বিহীন হয়ে পড়ছে প্রবাসীরা। আর আকামা না থাকায় বিভিন্ন মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এসকল প্রবাসী কর্মীরা। পূর্বে আকামা বিহীন প্রবাসীদের দেশে ফেরাতে লেবানন সরকারের উদ্যোগ ছিল চোখে পড়ার মত, প্রতি বছর থাকত জরিমানা না দিয়ে দেশে ফেরার সুযোগ। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে আর সেই সুযোগ দেয়া হচ্ছেনা লেবানন সরকারের পক্ষ থেকে। কারণ এটিকে এখন তারা অর্থ উপার্জনের একটি অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছে। আকামা বিহীন কর্মীদের দাবি – হয় তাদের বিনা জরিমানায় দেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হোক আর না হয় বৈধ হবার সুযোগ করে দেয়া হোক।
প্রবাসীদের এ সকল দাবিসহ লেবাননে থাকা দেড় লক্ষেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গত মঙ্গলবার লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব আব্দুল মোতালেব সরকারের সাথে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ লেবানন কেন্দ্রীয় কমিটির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটি রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারের সাথে প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি লিখিত ভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আকামা সমস্যার সমাধানের আবেদন জানান।
আলোচনার মধ্যে অন্যতম ছিল, লেবাননে যারা আকামা বিহীন অবৈধ তাদেরকে বৈধ কাগজপত্র করার সুযোগ দেওয়া, যারা দেশে ফেরত যেতে ইচ্ছুক তাদেরকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় এনে দেশে প্রেরন করা, অসুস্থদের চিকিৎসা প্রদান ও দ্রুত দেশে প্রেরণ। এ প্রসঙ্গে লেবানন আয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুফিয়া আক্তার বেবী জানান, লেবাননে প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে জানতে পারি প্রবাসী বাংলাদেশিরা হাজারো সমস্যায় জর্জরিত, আর এর মূল কারণ আকামা না থাকা। তাই লেবানন আয়ামী লীগ প্রবাসীদের কথা মাথায় রেখে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারের সাথে সাক্ষাৎ করি। তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রদূত আমাদের জানিয়েছেন, রোগীদের জন্য সহযোগিতা পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে। অবৈধ কর্মীদের বৈধ করার বিষয়টি একটি জটিল বিষয়। লেবাননের সিস্টেম অনুযায়ী এজন্য পুরো মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তবে রাষ্ট্রদূত আশ্বাস দিয়েছেন যে, তিনি লেবাননের নবগঠিত মন্ত্রী পরিষদের সাথে এসব বিষয় নিয়ে শীঘ্রই আলোচনা শুরু করবেন। এখানে উল্লেখ্য যে, জাতীয় নির্বাচনের প্রায় নয় মাস পর গত ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ লেবাননের নতুন মন্ত্রী পরিষদ গঠিত হয়। মান্যবর রাষ্ট্রদূত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যা সমাধানে সর্ব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার জানান, তাদের মূ্ল দাবি ছিল যারা আকামা বিহীন অবৈধ তাদেরকে বৈধ কাগজপত্র করার সুযোগ দেওয়া এবং যারা দেশে ফেরত যেতে ইচ্ছুক তাদেরকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় এনে দেশে প্রেরণ করা। এই দাবি নিয়ে দূতাবাস দীর্ঘদিন যাবৎ লেবানন সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু লেবাননের জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচিত সক্রিয় সরকার না থাকায় কোন মন্ত্রনালয় থেকে কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি । এখন যেহেতু নতুন মন্ত্রী পরিষদ গঠিত হয়েছে আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই এই সমস্যা গুলো নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা শুরু করব। তবে এক্ষেত্রে আমাদের প্রবাসীরা নিজেরাও অনেক সমস্যার সৃষ্টি করছেন।
যেমন- আইনগত স্বীকৃতি না থাকা সত্বেও তাঁরা দালালদের সাহায্যে ফ্রি ভিসায় এদেশে আসছেন। যেসকল লেবানিজ কোম্পানি এসব অবৈধ কাজের সাথে জড়িত দূতাবাস সেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও তাঁরা দূতাবাসের অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশ বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনকে ম্যানেজ করে ফ্রি ভিসায় লোক নিয়ে আসছে এবং আসার পরপরই অবৈধ হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে কোম্পানি আকামা করে দেয়ার পরেও সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে অবৈধ হচ্ছে। যাঁরা বিনা জরিমানায় দেশে যেতে চাচ্ছে এদেশের জেনারেল সিকিউরিটি থেকে তাদের ক্লিয়ারেন্স আনার পর আর তাদেরকে বেশির ভাগ লোককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইমিগ্রেশন কতৃপক্ষের সাথে দূতাবাসের সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে।
তিনি বলেন, রোগীদের চিকিৎসা ও দ্রুত দেশে পাঠানোর বিষয়টিকে দূতাবাস সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীর আত্মীয় স্বজনরা তাঁকে দূতাবাসে রেখে না বলে চলে যায়। এমনকি রোগীর চিকিৎসা শেষ হওয়ার পরও তাঁকে নেয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যায় না। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে দূতাবাসের সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। যাঁরা রোগী হিসেবে দেশে যাওয়ার আবেদন করেন দেখা যায় তাদের অর্ধেকের বেশি ভুয়া রোগী। ফলে এদেশের ইমিগ্রেশন কতৃপক্ষের নিকট দূতাবাসের বিশ্বাস যোগ্যতা ইতোমধ্যে নষ্ট হয়েছে। তাঁরা এখন নিজেরা যাচাই বাছাই করছে, যে ডাক্তার সার্টিফিকেট দিয়েছে তার সাথে যাচাই করছে। গত একমাসে রোগী হিসেবে আবেদন করা তিনজন ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর এখন আর দেশে যেতে চাচ্ছে না। ফলে গত সপ্তাহ থেকে জেনারেল সিকিউরিটি সকল রোগীর জন্য ইনভেস্টিগেশন বাধ্যতামূলক করেছে। রাষ্ট্রদূত সকল প্রবাসীদের এ জাতীয় অন্যায় করা থেকে দূরে থেকে দূতাবাসের কাজে সহযোগিতা করার আহবান জানান।
প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন, লেবানন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল মুন্সি, সাধারন সম্পাদক মশিউর রহমান টিটু, সিনিয়র সহ-সভাপতি সুফিয়া আক্তার বেবি, সহ-সভাপতি রুবেল আহম্মেদ, সহসভাপতি রুহুল আমিন, উপদেষ্টা জাকির হোসেন, প্রচার সম্পাদক মোঃ মহসিন মৃধা।