পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস দল ভারতীয় জনতা পার্টির হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে মোকাবিলা করতে বাঙালীর জাতিয় গৌরব ও পরিচয়ের রাজনীতিকে হাতিয়ার করেছে। আঞ্চলিক-জাতীয় আবেগ সৃষ্টি করে হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভাবাবেগ প্রতিহত করতে চেষ্টা করছে। সামনে নিয়ে আসছে বিদ্যাসাগর-রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-শরতকে। নেতাজী নতুনভাবে পূজিত হচ্ছেন। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ব্যাপার-স্যাপার। এই কৌশলে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস একদিকে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষা করতে চাইছে, পাশাপাশি সর্বভারতী পর্যায়ে বাঙালীদের প্রতিনিধিত্বশীল নেতা হতে চাইছে। পশ্চিমবঙ্গের আশপাশের রাজ্যগুলিতেও বহুসংখ্যক বাংলাভাষীদের জনগোষ্ঠীর বসতি আছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের এই অবস্থান দলটির নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে ও উদ্দেশ্যে। সমজাতীগত আবেগ-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগের কারণে যে তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা বন্দোপাধ্যায় বাঙালী স্বার্থের আওয়াজ তুলছেন তা মনে হয় না। পূর্বে তিনি বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের অংশীদার ছিলেন এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন সরকারে মন্ত্রীও ছিলেন। এখন কলকাতার নিউজ পড়লেই শোনা যায় বাঙালীর পরিচয়ের কথা, বাংলা ভাষার প্রাধান্যের দাবি, বঙ্গ সংস্কৃতি রক্ষার আওয়াজ।
বাংলাদেশে হলো বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর সর্ববৃহৎ অংশের বাসভূমি। কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ভাষা-ইতিহাস-ঐতিহ্যের দিক থেকে বাংলাদেশের বাংলাভাষী মানুষের সাথে ভারতীয় রাষ্ট্রের পশ্চিমবঙ্গ অংশে বসবাসরত বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর রয়েছে ঐতিহাসিক নৈকট্য ও সম্বন্ধ। তা সত্ত্বেও মমতা ব্যানার্জী, ভারতের তৃণমূল কংগ্রেস ও সে দলীয় বুদ্ধিজীবিগণ ভারতের ভেতরের বাঙালীর কথা ও পরিচয় নিয়ে যেভাবে সোচ্চার থাকেন তেমনিভাবে বাংলাদেশের বাংলাভাষী মানুষের জাতীয় স্বার্থের বিষয় কেবল যে নিরব থাকেন। শুধু তাই নয়, কখনো-সখনো প্রকাশ্য বিরোধীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তা থেকেই অনুমেয় তৃণমূল কংগ্রেস বা তার সুপ্রীমো মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে ভাষা-নৃ-তাত্ত্বিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অভিন্ন ইতিহাসই শেষ কথা নয়। রাজনীতিটাই এখানে মূখ্য বিষয়। বাঙালী, বাঙালী পরিচয়, বাংলা ভাষা, বাঙালীর স্বার্থ নিয়ে চেঁচামেচি রাজনৈতিক প্রয়োজনে হচ্ছে।
বাংলাদেশ বহুবছর ধরে তিস্তার পানিতে তার নায্য হিস্যা দাবি করে আসছে। বাংলাদেশের ভেতরের নদ-নদী পানি প্রবাহের অভাবে মরে যাচ্ছে। সবুজ প্রান্ত শুকিয়ে মরুতে পরিণত হচ্ছে। চাষ-বাসসহ জীববৈচিত্রের ব্যপক ক্ষতির মুখে পড়ছে এই ভূখণ্ডের মানুষ। মমতা বন্দোপাধ্যায় নদীর পানির হিস্যা দিতে বিরোধীর ভূমিকা নিয়েছেন। সেটাও আভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে হয়তো। তিনি বা অন্য কেউই রাজনীতির উর্ধ্বে যেতে অপারগ। সেটাই সত্য কথা ও বাস্তবতা অখানকার। বাকিটা রাজনৈতিক বুলচাল মাত্র।
লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট।